জগন্নাথদেব মন্ডলের কবিতা

জাঁতিতে অপূর্ব কুচো কুচো সুপারি কাটত ছেলেটি; আর কাটে না। তবে চোতমাসে নিমগাছে, বেলগাছে মধু জমলে কলোনীর পুষ্করিণীতে চান করে উপবাস করত শিবরাত্রির।

আগের রাত্রে মেঝের টানটান কম্বলে শুত।শিবলিঙ্গে বহুক্ষণ ধরে গহন গাভীর দুধ ঢালত।

জানালা দিয়ে ওকে সুপারির কথা জানতে চাইলে বলত, ওসব আর কুচিয়ে কাটি না, ঠাকুর বলেছেন মুখশুদ্ধি হিসেবে খেলে কামভাব বাড়ে।

বিকেলে চার খানা করে হাতে তৈরি রুটি খেত, একটু দুধ। মিনি বেড়াল, দুটো খরগোশ পোষ্য।

মাটির গামলায় কৈ মাছ জিইয়ে রাখত ও। চোখ করমচা লাল করে বলত-আমার ঠাকুরকে অল্প মশলা, তেজপাতা দিয়ে রেঁধে দোব।

এখন ঘরে আটকে রাখা হয় ওকে।লোকে বলে-পাগলের বাড়ি।

মায়ের চুলের মতো আকাশ ছেয়ে অন্ধকার নামলে উন্মাদ ছেলেটি চুপ করে থাকে। চেয়ে থাকে লুকোনো ওড়না, মধুর কাঁচুলির দিকে। চেয়ে থাকা কাঁচে বাঁধানো একটি ছবির দিকে, তোমাদের চৈতন্য হোক লেখা সমাধিস্থ রামকৃষ্ণদেব।

লেজকাটা একটা হনুমান স্থির পাঁচিল থেকে ছাতে উঠতেই, ও দুপুরবেলার চিলের ছাত থেকে হাত বাড়িয়ে কলা খেতে ডাকে। আর বলে-আয়, ভয় কি রে, মায়ের হাত থেকে খেয়ে যা বাছা। হাত ঘুরিয়ে বলে-এই দ্যাখ, আমার হাতে শাঁখা, পলা, নোয়া…

এমনি মেঘঘন সময়ে ওকে প্রশ্ন করো যদি-নাম কী?নিবাস কোথায়?

তাহলে গামছার ঘোমটা সলজ্জ টেনে মৃদু বলবে-থাকি নহবত বাড়ি,নাম সারদামণি…

Website | + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *