দেবব্রত মজুমদার
(লেখক পরিচিতিঃ প্রাক্তন অধ্যক্ষ, রাজা রামমোহন রায় মহাবিদ্যালয়; সভাপতি, শেখার সাথী )
প্রবন্ধটির প্রথম প্রকাশঃ সহজিয়া ঈদ সংখ্যা, এপ্রিল, ২০২৪
ভূমিকা:
শিশুদের শিক্ষা নিয়ে এখনকার বাবা-মায়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব আন্তরিক। খুব ছোট থেকেই তাদের শিক্ষার ব্যাপারে তাঁরা নজর দেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে নিজের সন্তানকে এগিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের অধিকাংশই ভাবেন কত তাড়াতাড়ি শিশুদের কত বেশি শিখিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু শিশু তো সেভাবে শিখতে পারে না। জোর করলে বা লোভনীয় কিছুর লোভ দেখিয়ে সে হয়ত মুখস্থ করে ফেলে অনেক কিছু কিন্তু শেখে না। বরং শিক্ষা সম্পর্কে অনীহা জন্মায়। শিশুকে শেখায় সাহায্য করতে গেলে তারা কবে থেকে কীভাবে শেখা শুরু করে তা নিয়ে আগে ভাবতে হবে।
শিশুরা কবে থেকে শিখতে শুরু করে:
অনেকের মতে শিশুরা শিখতে শুরু করে জন্মের আগে থেকেই। একদিন বয়সের শিশুদের উপর এ বিষয়ে নানা গবেষণা হয়েছে। তেমন কিছু গবেষণার উল্লেখ করে শিশু -শারীরবিদ্যা বিশারদ ব্রায়ান বাটারওয়ার্থ লিখেছেন যে তিন পর্যন্ত সংখ্যার ধারণা নাকি আমাদের জিনে লেখা হয়ে গেছে।
যাহোক, শিশু কীভাবে শেখে তা বুঝতে আমরা সাদা চোখে যা যা দেখি সেগুলোই এখানে একটু গুছিয়ে ভাবব। যাতে বুঝতে পারি কীভাবে তাকে সাহায্য করাটা যথাযথ।
একটু নজর করলেই বোঝা যায় যে শিশুরা একেবারে প্রথম শৈশব থেকেই শেখে। যেদিকে ঝুমঝুমি বাজে সেদিকে ফেরাও একটা শিক্ষা। অবশ্য এটাও জিনে ঢুকে গেছে হয়তো। সম্ভবত এই ধরনের আরও অনেক কিছুই জিনে আছে বা রিফ্লেক্স একশন। অর্থাৎ সেই শিক্ষাগুলো জন্মের আগেই হয়ে যাওয়া শিক্ষা। ফলে এগুলো কীভাবে শেখে, তা নিয়ে কোনো পদ্ধতির কথা অপ্রাসঙ্গিক।
শিশুর শিক্ষার স্বাভাবিক শুরু:
তাই শিশু আর কিছুটা বড় হওয়ার পরের কথায় আসা যাক। বড়রা নানারকম কথা বলে। সেসব শুনে শিশুও যে কিছু বলার চেষ্টা করে তা সহজেই বোঝা যায়। প্রথম চেষ্টায় সফল হয় না। এটাও সহজেই নজরে পড়ে। আস্তে আস্তে সে নানা জিনিসের নাম বলতে শেখে। কোন জিনিস কী কাজে লাগে তাও খানিকটা বুঝতে পারে। এরপর মা, বাবা ও বাড়ির অন্যান্যদের কাকে কী বলে ডাকবে সেগুলোও সে শেখে শুনে শুনে।
ঝুমঝুমির হাতল ধরে নাড়ালে সেটা শব্দ করে, খেলনা গাড়ি ঠেলে দিলে সেটা চলে এসব শিখে ফেলে নানারকম চেষ্টার মাধ্যমে। কীভাবে কোনটা ব্যবহার করতে হবে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখিয়ে দিতে হয় না। শিশু নিজেই ‘ট্রায়াল এন্ড এরর’ এর মাধ্যমে শিখে নেয়। আমরা অনেক সময় বেশি সাহায্য করার চেষ্টা করি। সেটা তারা সাধারণত অপছন্দ করে। “আমি করি” বলে ছুটে আসে। আমরা ভয় পাই জিনিসটা ভেঙে ফেলবে, কাগজটা নষ্ট করবে, ঠিকঠাক পারবে না…। নানাবিধ বৈষয়িক দুশ্চিন্তা আমাদের। আমরা বকাবকি করি, যাতে শিশু ভয় পেয়ে ভবিষ্যতে আর এরকম ‘দুষ্টুমি’ না করে। বোঝাই, এটা কর, ওটা করবে না! এসব এত বেশি করে বলি যে বাচ্চাদের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশ বাধা পায়। এভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করায় শিশুদের কেউ কেউ নিজে চেষ্টা করা বন্ধ করে দেয়। যা বলা হচ্ছে তাই করতে করতে ‘বাধ্য শিশু’ হয়ে যায়। আমরা ‘বাধ্য শিশু’-র প্রশংসা করি। কিন্তু
এভাবে বাধ্য শিশু তৈরি করে আমরা ভালো করি না।
তবে সবাই বাধ্য হতে চায় না। যারা বাধ্য হতে অরাজি হয় তারা নানা রকম পরীক্ষা চালাতে থাকে। চারপাশে কী ঘটছে সেদিকে সাধ্যমতো নজরও দেয় সে। এই শিশুদের যুক্তিবোধ ও সৃজনশীলতার বিকাশ ‘বাধ্য শিশু’দের তুলনায় বেশি হয়।
শিশু যেন তার জীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে:
শিশুরা খেলনা গাড়ি হাতে পেলেই তা চালাতে শুরু করা শুধু নয়, তার সঙ্গে মুখ দিয়ে গাড়ি চলার শব্দও করে। স্বাদ, গন্ধ চেনা শুরু করে। শিশুর কাছে যা দরকারি মনে হয় সেই বিষয়গুলো সে অনায়াসে মনে রাখে।
শিশু অনেক কিছু আবার নিজের যুক্তিবোধ দিয়ে সৃষ্টিও করে।
উদাহরণ হিসাবে আগে উল্লেখ করা খেলনা গাড়ির কথায় ফিরে আসি। খেলনা গাড়ি দিলে সে গাড়ির চেহারা দেখেই বোঝে সেটা চালাতে হবে। গাড়ি চলার যে শব্দ সে শুনেছে মুখ দিয়ে সেই শব্দ করার চেষ্টা করে। এগুলো তার যুক্তিবোধের প্রয়োগ ও সৃজনশীলতার উদাহরণ।
‘মা’, ‘বাবা’ ইত্যাদি নামগুলো সে স্মৃতিতে ধরে রাখে অনায়াসে। কেননা, নামগুলো মনে রাখা তার কাছে প্রয়োজনীয়। অর্থাৎ তার জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই নামগুলো, জড়িয়ে আছে ভালোলাগার অনুভূতি। অনেক ক্ষেত্রেই সে নতুন কিছু করতেও শেখে। একটা গাছ দেখিয়ে সেটার নাম ‘গাছ’ বলে দিলে অন্য একটা গাছ দেখে সেটাকেও গাছ বলতে পারা তো অধীত জ্ঞানের প্রয়োগই।

চিত্র -১ঃ ছন্দ মিলিয়ে শব্দ
বিদ্যালয়ের শিক্ষায় কীভাবে এই স্বাভাবিকতা বজায় রাখা যাবে:
শিশু যখন বিদ্যালয়ে আসবে তখন দেখতে হবে তার শিক্ষার এই স্বাভাবিক পদ্ধতিতে যেন ছেদ না পড়ে। উপরে যে তিনটে বিষয়ের কথা বললাম সেগুলো কীভাবে স্কুলের শিক্ষায় আসবে?
প্রথমত, আমরা চাই শিশু কিছু কিছু বিষয় স্মৃতিতে ধরে রাখুক। যেমন, বর্ণ ও সংখ্যার চিহ্ন। কিন্তু তার এগুলো শেখার ইচ্ছে হবে কী করে? দেখতে হবে শেখাটা তার কাছে যেন ‘দরকারি’ মনে হয়। অন্যথায় এগুলো শেখা তার এতদিনের ‘স্বাভাবিক’ শিক্ষার পদ্ধতি অনুসারী হবে না। জোর করলে সে অনিচ্ছা নিয়ে মুখস্থ করতে শুরু করবে। শেখার আগ্রহ কমতে শুরু করবে।
এজন্য যেসব জিনিসের নাম তার জানা সেগুলো বা সেগুলোর ছবি দেখিয়ে নাম বলার সুযোগ দিতে হবে তাকে। এই ধরনের জিনিস বা ছবি এমনভাবে সাজানো যায় যাতে সেই নামগুলো বললেই সেগুলোর মধ্যে একটা ছন্দ ধরা পড়ে (চিত্র-১)।

এই ধরনের ছবির বই শিশুকে দিলে সে আগ্রহের সঙ্গে সেই বর্ণবিহীন বই পড়বে—নিজে নিজেই, অনায়াসে। এর ফলে প্রথমেই তার আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে, আরও পড়ার আগ্রহ জাগবে। এই বই পড়তে গিয়ে স্পষ্ট করে অনেক কথা উচ্চারণ করতে শিখবে। ওই সব ছবি দেখে সে ভাববে ওগুলো আমি আঁকতে পারব। তাকে আঁকার সুযোগ দিতে হবে। দেখা যাবে (এবং সে নিজেও উপলব্ধি করবে ) যে, সে আঁকতে পারছে না। আঁকার বদলে অন্যভাবে নামটা বোঝানোর একটা ইচ্ছা সম্ভবত তার মনে জাগবে।
এই পদ্ধতিতে বর্ণশিক্ষা:
এবার খুব ধীরে ধীরে বর্ণ শেখানোর চেষ্টা শুরু করতে হবে। চেনা কিছুর ছবি দেখলেই এতদিনে শিশুর মনে সেটার নাম বলার একটা আগ্রহ জাগা শুরু হয়ে গেছে। এটাকেই কাজে লাগাতে হবে বর্ণ শিক্ষা শুরু করতে।
এজন্য বর্ণক্রম মেনে চলা বা শুধুমাত্র শব্দের প্রথম বর্ণ শেখার প্রচলিত পদ্ধতি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রাখা চলবে না।
প্রথমত, এমন কিছু বাছতে হবে যেগুলো ছবি দিয়ে দেখানো যায় এবং দুটো বাঙলা বর্ণ পাশাপাশি বসালেই সেটার নাম হয়। এছাড়া ছবিটা কীসের তা যেন শিশুর জানা হয়। তেমন ছবির পাশে বর্ণ দুটো লিখে রাখতে হবে।
যেমন (চিত্র – ২) ‘বক’-এর ছবি। পাশে ‘বক’ লেখা। তার পাশে আর একটা ছবি। একটা শিশু একটা বাটি থেকে বর্ণ নিয়ে ‘ব’ এর পাশে ‘ক’ বসাচ্ছে। এবার একটা বাটিতে শিশুকে কয়েকটা ‘ব’, ‘ক’ ইত্যাদি দিলে সে-ও বকের ছবির পাশে ‘ব’ ও ‘ক’ বসাতে চাইবে। সে বুঝতে পারবে ওই চিহ্ন দুটো মিলে ‘বক’ হয়।
কেউ কেউ হয়ত একটু ইতস্তত করবে। তাকে একবার বলে দিতে হবে এটা বক লেখা আছে। সে বুঝে নেবে দুটো ধাপ। বক-এর পরিবর্ত বক-এর ছবি। আবার সেই ছবির পরিবর্ত এই চিহ্ন(দুটো)। বক আঁকার চেয়ে এই বর্ণদুটো পাশাপাশি বসানো তো অনেক সহজ। এই বোধ থেকেই সম্ভবত এমন আরও কিছু শব্দের পাশে বর্ণ বসাতে চাইবে। এভাবে তার বর্ণ চেনার ইচ্ছা জাগবে। এজন্য চেনা বস্তু নির্দেশ করে এমন দুটো করে বর্ণ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বর্ণক্রম মানা সম্ভব হবে না, তার দরকারও নেই। এভাবে শেখানোর চেষ্টা হলে শিশুর পক্ষে বর্ণ মনে রাখা অনায়াস হবে।
সব বর্ণ শেখা হয়ে যাওয়ার পর ৬-৭ বছর বয়সে বর্ণক্রম শেখাই যথেষ্ট। এটা অনেকটা প্রচলিত পদ্ধতির উলটো। প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রায়ই বর্ণক্রম মেনে শিশুর বর্ণ চেনা হয় আগে। তারপর বর্ণ চেনা কেমন হয়েছে বোঝার জন্য এলোমেলোভাবে সাজানো বর্ণ দেখিয়ে শিশুকে সেগুলো পড়তে বলা হয়। এখানে আমরা বলছি উলটোটা করতে। শিশুর জানা শব্দ ব্যবহার করে যে বর্ণগুলো আগে আসবে, সেগুলো আগে শিখবে। শেখা এমনই হবে যে শেখা কেমন হয়েছে তা নিয়ে তার অত পরীক্ষা নেওয়ার দরকারও থাকবে না। অধিকাংশ বর্ণ (চিহ্ন) ও উচ্চারণই ঠিকঠাক শিখে যাবে। কয়েকটা কঠিন বর্ণের চর্চা কম হবে। তাতে ক্ষতি নেই। “ঢ়” এর মতো বর্ণ তো এমনিতেও অধিকাংশ শিশু উচ্চারণ করতে শেখে না। আমরা আশাও করি না শিখবে। তাই বর্ণটার স্বাধীন অস্বিত্বের দাবি না করে শেখাই “ঢ-য় শূন্যয় ঢ়”। কজন “ঢ়” বর্ণ বা “গাঢ়”, “দৃঢ়” এসব শব্দের সঠিক উচ্চারণ শেখে? হয়ত শতকরা দু-এক জন শেখে। এই পদ্ধতিতেও দু-এক জন শিখবে।
যুক্তিবোধ ও সৃজনশীলতার বিকাশ:
এবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রসঙ্গে আসা যাক — শিশুর যুক্তিবোধ ও সৃজনশীলতা। দুটো বর্ণ পাশাপাশি বসিয়ে (ও উচ্চারণ করে) শব্দ গড়া যায়, কিছুদিনের মধ্যে শিশু এটা বুঝতে পারবে। কয়েকটা বর্ণ শেখা হয়ে যাওয়ার পর শিশু জানা দুটো বর্ণ পাশাপাশি সাজিয়ে, কখনো উচ্চারণ করে, নতুন শব্দ গঠন করার চেষ্টা করবে। সব বর্ণযুগ্ম শব্দ গঠন করবে না। তবু শিশুকে নিরুৎসাহ করা যাবে না। অর্থবিহীন নানা বর্ণযুগ্ম উচ্চারণ করতে দিতে হবে। তা করতে না দিলে তার সৃজনশীলতা বাধা পাবে। শিশুর উচ্চারণ করা কোনও বর্ণযুগ্ম দিয়ে কোন জিনিস বোঝানো হয় তা জানতে চাইতে পারে সে। সম্ভব হলে বলে দিতে হবে। আর যেসব বর্ণযুগ্ম অর্থবিহীন, সেগুলো দিয়ে যে কিছু বোঝায় না, সে কথাও একটু একটু করে বলে দিতে হবে তাকে।
গণিত শেখায় স্বাভাবিকতা, যুক্তিবোধ ও সৃজনশীলতার সমস্যা:
তিন পর্যন্ত সংখ্যা জিনে লেখা থাকুক বা না থাকুক, একটা, দুটো, তিনটে জিনিস সম্পর্কে শিশুরা সহজেই ধারণা করে ফেলে। তারপর একই ধরনের চারটে জিনিস দিয়ে চার, পাঁচটা জিনিস দিয়ে পাঁচ এভাবে শেখাতে হবে। সাত শেখাতে চিত্র –৩ এর মতো ছবি কাজে লাগতে পারে।


তবে, একে চন্দ্র, দুইয়ে পক্ষ … মুখস্থ করতে বলা চলবে না। ছড়া যদি শেখাতেই হয় তাহলে শিশুর পক্ষে সহজবোধ্য নতুন ছড়া বলতে হবে। ছড়ার সঙ্গে মিলিয়ে ছবি বা বাস্তব বস্তু/প্রাণি দেখিয়ে এক-দু লাইন করে শেখাতে হবে। চিত্র–৪ এ এমন ছড়ার একটা নমুনা দেখানো হল।
তবে, দশ-এর পর থেকে একশ’র আগে পর্যন্ত সংখ্যার নামগুলো শেখার সময় শিশুর যুক্তিবোধ ধাক্কা খাবেই। দশমিক সংখ্যায় দশটাই অঙ্ক। অথচ, এগারো থেকে নিরানব্বই পর্যন্ত নাম শিখতে হয়। নামগুলোর মধ্যে কোনো সামঞ্জস্যও নেই। এক দশ দুই বারো, দুই দশ দুই বাইশ। কিন্তু তিন দশ দুই বত্রিশ (বাত্রিশ নয়)। চার দশ দুই বিয়াল্লিশ (বাইশ-এর সঙ্গে মিলিয়ে বাচল্লিশ নয় বা বত্রিশ-এর সঙ্গে মিলিয়ে বচল্লিশ নয়)। আবার পাঁচ দশ দুই বাহান্ন (বিয়াল্লিশ-এর সঙ্গে মিলিয়ে বিয়ান্ন নয়)। এই সব দেখে শিশু নিজের যুক্তিবোধ প্রয়োগ করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে। সংখ্যার নামগুলো মুখস্থ করা ছাড়া উপায় নেই ভেবে নেয়।
এই অবস্থাতেও শিশুকে সাহায্য করার চেষ্টা করা যায়। প্রথমে দশ-এর পরের সংখ্যাগুলোর স্থানীয় মানভিত্তিক নাম শেখানো যেতে পারে। এক দশ এক, এক দশ দুই, এক দশ তিন … ইত্যাদি। তাতে শিশু নিজেই বলতে পারে যে পরের দশকের সংখ্যাগুলো দুই দশ এক, দুই দশ দুই, দুই দশ তিন…। তারপরের দশকের সংখ্যাগুলো তিন দশ এক, তিন দশ দুই ……।
এভাবে সংখ্যার স্থানীয় মানভিত্তিক নাম বলে যোগ শেখারও সুবিধা হয়। এককের স্থানের একাধিক অঙ্ক যোগ করে দুই অঙ্কের সংখ্যা হলে দশকের স্থানের অঙ্ক নিয়ে কী করতে হবে তা বোঝাও সহজ হয়। ধরা যাক (চিত্র-৫), ১ দশ ৪ আর ১ দশ ৯ যোগ করবে। ৪ আর ৯ যোগ করে শিশু বলবে ১ দশ ৩। এতে সে সহজেই বুঝবে যে ১ দশ যোগ করতে হবে দশকের স্থানের দুটো ১-এর সঙ্গে।এভাবে সংখ্যার স্থানীয় মানভিত্তিক নাম ব্যবহার করলে বিয়োগ করার সময়ও সুবিধা হয়। বিশেষত, যে সংখ্যা থেকে বিয়োগ করতে হবে তার এককের অঙ্ক ছোট হলে কী করতে হয় (চিত্র-৫) তা বোঝা সহজ হয়। স্থানীয় মানভিত্তিক নামে সংখ্যাগুলো চেনায় তার যুক্তিবোধ ও সৃজনশীলতা প্রয়োগ করে গুণ, ভাগের পদ্ধতিগুলো শেখাও অনেক সহজ হয়।

শিশুদের শিক্ষা সহজ করা, তাদের যুক্তিবোধ ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করে শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম তৈরি করা উচিত। এটা করায় একটা বড় সমস্যা অভিভাবক ও অভিভাবিকাদের ধৈর্যের অভাব এবং শিশুর সামর্থ্য সম্পর্কে আস্থার অভাব। প্রায়ই তাঁরা শিশুদের দ্রুত শেখানোর চেষ্টায় শিশুকে মুখস্থ করতে বাধ্য করান। না বুঝে মুখস্থ করলে যে শিশুর যুক্তিবোধের গঠন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেইসঙ্গে শেখার আনন্দও নষ্ট হয়ে যায়। এসব তাঁদের বুঝতে হবে। তাই তাঁদের কাছে অনুরোধ, তাড়াহুড়ো করবেন না। শিশুর মন বোঝার চেষ্টা করুন। শিশুর জগৎ সম্পর্কে সম্যক অনুধাবন করে এই পদ্ধতিতে শিশু বিদ্যালয় গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। বিদ্যালয় এবং বাড়ি দু-জায়গাতেই সঠিকভাবে সাহায্য করতে পারলে শিশুরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে থাকবে। নিজে চিন্তা করতে সমর্থ হবে। সার্থক হবে তাদের শিক্ষা।