ওপারের ডাক

অভিজিৎ রায়

বস্তুটা চোখে পড়ার মতো আকার নয় বটে, তবে বারীন দস্তিদারের নজর এড়ালো না। শরৎ-এর উজ্জ্বল সূর্যালোকে‌ নীল-সাদা গড়নের বস্তুটা শুষ্ক ঘাসের ভীড়ে সহজেই বারীন বাবুর মনোযোগ আকৃষ্ট করলো। বস্তুটির আকার একটি দেশলাই বাক্সের সাথে একমাত্র তুল্য। বাক্সটির এক প্রান্ত থেকে প্রসারিত একটি অনতিদীর্ঘ কালো তার, যার শেষ প্রান্তে একটি ক্ষুদ্র অর্ধ-চন্দ্রাকার স্পিকার। বস্তুটি যে একটি ব্যাটারি চালিত শ্রবণ যন্ত্র, সে বিষয়ে বারীন বাবু নিশ্চিত, কারণ তাঁর বৃদ্ধ প্রতিবেশী নরেশ মন্ডলকে অনুরূপ যন্ত্র ব্যবহার করতে তিনি দেখেছেন।

বারীন বাবুর বয়স সত্তরোর্ধ। মাথায় পক্ক কেশ, শরীর শীর্ণ। এই বয়সে শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতাগুলি তলানিতে এসে ঠেকে। বারীন বাবুর জীবনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিগত কয়েক বছর থেকেই শ্রবণ সমস্যাটা তীব্র হয়ে উঠেছে। তবে সেটিকে বাহ্যিক উপায়ে বেঁধে রাখার কথা কখনই ভাবেননি বারীন বাবু কারণ তাঁর মতে, এই ভাবেই ছোটো ছোটো অধিকারগুলি ত্যাগ করে মানুষ ক্রমেই এই জগৎ-এর মায়ার বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে শেখে। তখন মৃত্যু আর আতঙ্কের বা আক্ষেপের বিষয় হয়ে থাকে না। কিন্তু আজ বারীন বাবুর সেই উদার দর্শনে যেন লিপ্সার ছায়া এসে পড়েছে। 

শরৎ-এর দুপুরে চারিপাশ জনশূন্য। উপরন্তু সুবল ব্যানার্জীর এই পুকুর পাড়ে জনমানবের আনাগোনা বন্ধ হয়েছে বহুদিন আগেই। গ্রামে পুকুরের সংখ্যা সর্বসাকুল্যে তিনটি। তাদের মধ্যে এই পুকুরটির বিস্তৃত কলেবর ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। কিন্তু দিনে কালে পুকুরটি কুড়িয়েছে দুর্নাম, হয়ে উঠেছে পরিত্যাক্ত।  দুর্নামটিও আবার যেমন তেমন নয়। বছর পাঁচেক আগে বৃদ্ধ চরণ বিশ্বাসের মৃত্যু দিয়ে শুরু। তারপর একে একে আরও চারটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এই পুকুরে। প্রত্যেকেই বৃদ্ধ এবং এক অকল্পনীয় ভাবে জলে ডুবে মৃত্যু। ক্রমেই ভয় চেপে বসেছে গ্রামবাসীদের মনে। অব্যবহৃত পুকুরটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে শ্যাওলা ও কচুরিপানার রাজ্য।

এই কুখ্যাত পুকুর পাড়ের শুষ্ক ঘাসের মধ্যে শ্রবণ যন্ত্রটি আবিষ্কার করলেন বারীন বাবু। প্রাথমিক ইতস্তত ভাবটা কাটিয়ে উঠে, যন্ত্রটা হাতে তুলে নিলেন বারীন বাবু। অযাচিত বস্তুর উপর অধিকার ফলানোর মতো মানুষ বারীন বাবু নন। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণেই যন্ত্রটির প্রতি এক অনিয়ন্ত্রিত লোভ তিনি অনুভব করলেন। আশেপাশে কোনো দাবিদারের নেই। বারীন বাবু এক প্রকার নির্দিধায় যন্ত্রটি পাঞ্জাবির পকেটস্থ করলেন। 

বাড়ি ফিরে সোজা‌ নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকলেন বারীন বাবু। স্ত্রী ননীবালা গত হয়েছে তা প্রায় বছর পাঁচেক। তখন থেকেই এই ঘরটি তাঁর স্মৃতি ও বিলাপের আশ্রয়স্থল। ছেলে, বিনয় তাঁর স্ত্রী ও সাত বছরের ছেলে বিলটুকে নিয়ে ওপর তলার একটি ঘরকে নিজেদের আনন্দনিকেতন করে তুলেছে। বারীন বাবু অবশ্য এতে খুশিই হয়েছেন। সরকারী দপ্তরে কেরানীর পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর জীবনটা বহুলাংশে বাঁধনহীন হলেও, ছন্নছাড়া হয়নি। নিয়ম করে পেনশনের টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে যাওয়া, এবং সকাল সকাল বাজার করার বিলাসিতাটুকু বারীন বাবু এই বয়সেও বেশ উপভোগ করেন।

ক্রমেই দিনের আলো সাঁঝের বেলায় এসে লজ্জাবতী গাছের মতো নুইয়ে পড়লো। শ্রবণ যন্ত্রটির কথা একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলেন বারীন বাবু। মনে পড়লো রাতের খাওয়া শেষ করে ঘরে এসে। মনে পড়তেই হ্যাঙ্গারে ঝোলানো পাঞ্জাবির পকেট থেকে যন্ত্রটা বার করে আনলেন তিনি। কিছুটা উল্টেপাল্টে যন্ত্রটাকে দেখে, বারীন বাবু বুঝলেন একটি বাদামী ও অন্য একটি কালো বোতামের দ্বারা যথাক্রমে যন্ত্রটি চালু ও তার শব্দ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যন্ত্রটি যে বেশ পুরনো সে বিষয়ে বারীন বাবুর মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, ফলে তার কার্যক্ষমতা নিয়ে একপ্রকার অনিশ্চয়তা ভাব তাঁর মনে ফুটে উঠলো। 

কিছু একটা মনে মনে ভেবে নিয়ে, সর্পিল তার যুক্ত স্পিকারটি কানে গুঁজে দিলেন বারীন বাবু, এবং তৎক্ষণাৎ মনে হলো যেন পৃথিবীর সমস্ত আলোরন, শব্দ ইত্যাদি মূহুর্তের মধ্যে উবে গিয়ে নেমে এসেছে অপার নিঃশব্দতা। নিরাশ হলেন বারীন বাবু। মৃতবৎ যন্ত্রটাকে একটু নেড়েচেড়েও দেখলেন তিনি, কিন্তু কোনো ইতিবাচক ফল হলো না। এহেন অদূরদর্শিতায় তিনি নিজেকে তিরষ্কার করলেন। 

একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে, কান থেকে স্পিকারদুটি খুলে ফেলতে যাবেন ঠিক সেই সময় খুব ক্ষীণ অথচ অপার্থিব এক কন্ঠস্বর বলে উঠলো, “বারীন বাবু। আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?”

এমন অতর্কিত প্রশ্ন শুনে চমকে উঠলেন বারীন বাবু। তাঁর বৃদ্ধ হৃৎপিণ্ডটি অনিয়ন্ত্রিত স্পন্দনে আন্দালিত হয়ে উঠলো।

“কে?… কে আপনি?” ভয়ার্ত সুরে বারীন বাবু বললেন।

“উত্তর যখন দিচ্ছেন, তার মানে আপনি আমায় দিব্বি শুনতে পাচ্ছেন। ভয় পাবেন না। আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না।”

“ভয়…ভয় পাবো কেন?”

“আপনার হৃৎস্পন্দন যে বলছে আপনি বেশ ভয় পেয়েছেন।”

বারীন বাবুর এবার মূর্ছা যাওয়ার জোগাড়। মুখ থেকে অস্ফুটে এক আতঙ্কের শব্দ বেরিয়ে এলো মাত্র। কান থেকে স্পিকারটা খুলে, যন্ত্রটি ছুঁড়ে ফেলে দিলেন মেঝেতে। ভয় ও উত্তেজনায় তাঁর সমস্ত শরীর ঘর্মাক্ত হয়ে উঠলো। শরীরের শিরায় উপশিরায় বয়ে যেতে লাগল শীতল স্রোত। সেই রাতে তিনি যন্ত্রটির ধারে কাছেও ঘেঁসলেন না।

বিনিদ্র রাত্রি কাটিয়ে দিনের আলো ফুটলে বারীন বাবুর হারানো সাহস ফিরে এলো । বিষয়টা গতরাতেই ভেবে রেখেছিলেন, এবং সেই অনুযায়ী শ্রবণ যন্ত্রটি নিয়ে এসে হাজির হলেন নরেশ মন্ডলের বাড়ি। খানিকটা গোপনীয়তা বজায় রেখে বস্তুটি দেখিয়ে বারীন বাবু জিজ্ঞেস করলেন, “দেখুন তো, এই যন্ত্রটা কি আদেও সচল?”

স্পিকারটা একটি কানে গুঁজে, যন্ত্রটা বেশ কিছুক্ষণ অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে পরীক্ষা করে, নরেশ বাবু মাথা নেড়ে বললেন, “নাহ্, এটায় কোনো একটা গুরুতর যান্ত্রিক গোলোযোগ আছে। এ জিনিস তো আগে কখনো আপনাকে ব্যবহার করতে দেখিনি। কোথা থেকে জোগাড় করলেন, দাদা?”

“ইয়ে, মানে, বাড়িতেই ছিলো, তবে ব্যবহার করতাম না। তা আপনি সত্যিই কিছুই শুনতে পেলেন না? আচ্ছা বেশ, একটা কথা বলুন তো, এই শ্রবণ যন্ত্র কি শুধু শুনতে সাহায্য করে, নাকি অপরকে ব্যবহারকারীর শরীরের স্পন্দন শোনাতেও সাহায্য করে?” বারীন বাবু শুষ্ক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।

প্রশ্নটি শুনে নরেশ বাবু হতবাক দৃষ্টিতে বারীন বাবুর দিকে চেয়ে রইলেন। তাঁর মনে হলো, বারীন বাবু সকাল সকাল রসিকতা করার বেশ একটা ফন্দি এঁটেছেন। 

বারীন বাবু বাড়ি ফিরে এলেন। ইতিমধ্যেই তাঁর মনে রহস্য ঘনীভূত হতে শুরু করেছে। তিনি মনস্থির করলেন, যন্ত্রটি যেখান থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলন, সেখানেই আবার রেখে আসবেন। যন্ত্রটি থেকে দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করলেও, এক অমোঘ মানষিক টান তিনি অনুভব করতে লাগলেন। টেবিলের দেরাজ থেকে শ্রবণ যন্ত্রটা বার করে আনলেন বারীন বাবু। সম্মোহিতের মত স্পিকারটা কানে গুঁজতেই ভেসে এলো সেই অপার্থিব কন্ঠস্বর এবং তার সাথে সাথেই বারীন বাবুর হৃদস্পন্দন যেন বুকের পাঁজরের উপর আছড়ে পড়তে লাগলো।

“বারীন বাবু, আমি আপনারই অপেক্ষায় ছিলাম।”

“আপনি কে? আমি পরীক্ষা করে দেখেছি এই যন্ত্রটা অকেজো। কিন্তু…”

“কিন্তু আমার কথা আপনি শুনছেন কি ভাবে, তাই তো? ধীরে ধীরে সব বুঝতে পারবেন। আগে আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা বরং দিই। আমার নাম চরন বিশ্বাস। চিনতে পারছেন?”

নামটা শোনা‌ মাত্র বিদ্যুৎ পৃষ্টের মতো স্তব্ধ হয়ে গেলেন বারীন বাবু। সম্বিত ফিরলো স্পিকার থেকে ভেসে আসা কন্ঠ স্বরের পরবর্তী কথায়।

“ঐ পুকুরে আমি আত্মহত্যা করি। শ্রবণ যন্ত্রটা আমিই পুকুর পারে রেখে গিয়েছিলম। তবে আমি এখন যে জগৎটায় আছি এখানে অপার শান্তি, যা বেঁচে থাকা কালীন আমার কপালে জোটেনি।”

“কি সব বাজে বকছেন মশাই? চরন বিশ্বাসকে আমি খুব ভালো করে চিনতাম। কাপড়ের ব্যবসায়ী। তাঁর দুই ছেলে। দুটিই রত্ন। তাঁর তো কোনো কষ্ট ছিলো না।” বারীন বাবু তার গলায় যথেষ্ট সাহস ও আত্মবিশ্বাস জড়ো করে বললেন।

কথাগুলি শুনে সেই অবয়বহীন কন্ঠস্বর হাড় হিম করা হাঁসিতে ফেটে পড়লো। হাঁসি থামলে সে পুনরায় বললো, “আমিও আগে তাই ভাবতাম। আগে বলতে, এই শ্রবণ যন্ত্রটি কেনার আগে। আমার বড় ছেলেই কিনে দেয়। কিন্তু এই যন্ত্র আমার জীবনে অভিশাপ হয়ে নেমে আসে।”

“অভিশাপ!”

“ঠিক তাই। এই যন্ত্র যে মানুষের মনের ভিতর লোকানো ঘেন্না, বিদ্বেষ সব উচ্চস্বরে প্রকাশ করে দেয়। গোপন আর গোপন থাকে না। আপনি জানতে চান কেমন সেই অনুভূতি? তবে মন দিয়ে শুনুন।”

“না শুনুন…আমার এসব…” কথাগুলো বলতে বলতে বারীন বাবু অনুভব করলেন তার অলৌকিক শ্রোতাটি ইতিমধ্যেই উধাও হয়ে গেছে এবং তার পরিবর্তে সে ক্ষীণ কন্ঠে এক পুরুষ ও নারীর কথোপকথন শুনতে পেলেন। সেই কথোপকথন একটু একটু করে স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগলো। বারীন বাবু কন্ঠস্বর দুটি চিনতে পারলেন—তার ছেলে বিনয় ও বৌমা, পরমার। কিন্তু সেই কথোপকথন থেকে বারীন বাবু যা আত্মস্থ করলেন, তাতে তাঁর অন্তরাত্ময় এক তীব্র যন্ত্রনার কামড় অনুভব করলেন।

“এবার সম্পত্তির একটা হেস্তনেস্ত করো। তোমার বাবা এই বয়সেও দিব্বি এদিক সেদিক চরে বেড়াচ্ছে। গত বছর যখন শয্যাশায়ী হলো, ভাবলুম ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন, কিন্তু সেই যা কে তাই।”

“আহ্, পরমা, আস্তে। দেওয়ালেরও কান আছে। আমিও কি ভেবেছিলাম যে বাবা সে যাত্রায় ফিরে আসবেন? বয়স তো কম হলো না, নাই নাই করেও পঁচাত্তর।”

“তুমি শুধু হিসেবই রাখো। আমার হয়েছে যত জ্বালা। তোমার এই বাবার জন্য আমি কতদিন বাপের বাড়ি যাইনা সে খেয়াল আছে! সময় থাকতে সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে, তোমার পিতৃদেবকে তীর্থে পাঠানোর ব্যবস্থা করো, নইলে…”

কথাগুলো চাবুকের মতো বারীন বাবুর কানে আছড়ে পড়তে লাগলো। তিনি আর সহ্য করতে পারলেন না। কান থেকে স্পিকারটা খুলে ফেললেন। তাঁর চোখ অশ্রুসিক্ত।

“বারীন বাবু, নিরাশ হবেন না।” স্পিকার থেকে আবার সেই আওয়াজ ভেসে এলো। এইবার আরো জোড়ালো। সত্য ও মিথ্যের টানাপোড়েনে বারীন বাবু নুইয়ে পড়েছেন।

“জীবন এমনই কিছু অপ্রিয় সত্য দিয়ে তৈরি, যার মুখোমুখি হওয়ার শক্তি আমাদের নেই।”  

“দয়াকরে চুপ করুন। আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা। এসব মিথ্যে। এ আপনার পরিকল্পনা। অতৃপ্ত অশরীরী আত্মা এভাবেই মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, আমি জানি।” চিৎকার করে প্রতিবাদ করলেন বারীন বাবু, কিন্তু তাঁর বিশ্বাসের বুনন যেন ক্রমেই আলগা হয়ে এসেছে।

কিছুক্ষণ সব কিছু স্তব্ধ। একের পর এক ঘটনা প্রবাহে বারীন বাবু যেন হাঁপিয়ে উঠেছেন। মূহুর্ত পরেই শ্রবণ যন্ত্রটি সক্রিয় হয়ে উঠলো।

“বারীন বাবু, আপনি তো আমার জীবনটাকেও সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ মনে করতেন। কিন্তু এই শ্রবণ যন্ত্র আমার কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছিল পরিবারের অসহিষ্ণুতাটাকে। মৃত্যু বড় আকর্ষনীয়, বারীন বাবু। যখন আমি ধীরে ধীরে পুকুরের জলে তলিয়ে যাচ্ছিলাম, এবং শেষ প্রাণ বায়ুটুকু শরীরের বাঁধন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল, তখন আমার আর কোনো আক্ষেপ ছিলনা। মনে হয়েছিল অবাঞ্ছিত হয়ে জীবন আগলে বেঁচে থাকাটা নিরর্থক। শুধু আমি না, শুধাংশু, নিখিলেশ, প্রাণেশ সবাই বুঝে ছিল। তাইতো তারাও একে একে ঐ পুকুরের জলে নিজেদের মুক্তি…”

“না…না…আমি মুক্তি চাইনা। আমি ভালো আছি। এ সব মিথ্যে। আমি আমি…” বারীন বাবু উন্মাদের মতো বিছানা থেকে নেমে এসে শ্রবণ যন্ত্রটা হাতের শক্ত মুঠিতে আবদ্ধ করলেন। তিনি‌ ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন রাস্তায়। সবুজের বুকে আলোর নক্সী কাঁথার মধ্যদিয়ে বারীন বাবু ছুঁটে চললেন বাঁধন হারা যৌবনের উদ্যমে। তাঁর গতির বিরাম হলো সেই কুখ্যাত পুকুর পাড়ে এসে। চোখের সামনে টলটল জল যেন দুহাতে তাকে আলিঙ্গনের জন্য আহ্বান করে চলেছে। এক অলঙ্ঘনীয় প্রলোভন। ক্রমেই নিজের ইচ্ছের উপর নিয়ন্ত্রণ যেন আলগা হয়ে এলো বারীন বাবুর। হাতের মুঠি থেকে শ্রবণ যন্ত্রটা একটা ভোঁতা শব্দ করে শুষ্ক ঘাসের মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে গেল। বারীন বাবুর মৃদু পদক্ষেপ তার অনিচ্ছুক শরীরকে নিয়ে চলল সলিল সমাধির দিকে। শরীর যখন বুক জলে, বারীন বাবুর মনে পড়ল সেই অপার্থিব কন্ঠস্বরের একটি কথা—“মৃত্যু বড় আকর্ষণীয়, বারীন বাবু।”

+ posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *