মুসলমান ও মুসলিম বিশ্ব

মিরাজ আজাদ

মহম্মদের জন্মের পূর্বে প্রায় গোটা বিশ্ব ছিল অসেচতনা ও অজ্ঞানের অন্ধকারে ডুবে… খুন, রাহাজানি, লুঠপাট, কন্যা শিশু ভূমিষ্ঠ হলে জীবন্ত অবস্থায় মাটিতে পুঁতে দেওয়াসহ এরকম অজস্র কুকর্ম বিরাজ করত তৎকালীন সমাজে। মহম্মদের আবির্ভাবের পরে তারই যোগ্য নেতৃত্বে প্রায় গোটা বিশ্ব জুড়ে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার হল। আরবভূমিতে অন্ধকার দূর করে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলো জ্বললো।

সেই আলো ইউরোপ সাদরে ও সম্মানের সাথে ফলো করায় সেখানেও আলো জ্বললো। ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’-তে পন্ডিত নেহেরু লিখলেন, ‘Learning from Islam Europe become civilized country.’

বিশ্বে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ইসলাম ধর্মই প্রথমে প্রদান করে। পরে অন্য সব ধর্মগুলি এটিকে অনুসরণ করে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার আইন আরো আধুনিক রূপে পত্তন করে।

মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই, এটা ইসলামই বিশ্বে প্রথম হাতে কলমে প্রয়োগ করে। এর চরম উদাহরণ ভারতের ইতিহাসে উজ্জ্বল ভাবে আছে। হাটে-বাজারে বিক্রি হওয়া দাসকে শৃঙ্খল মুক্ত করে ভৃত্য থেকে বাদশা বানিয়েছে এই মুসলমানরাই। ভারতের ইতিহাসে দাস বংশ নামক একদল মানুষ বাদশা হয়ে দেশ শাসন করেছে, এই দৃষ্টান্ত স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ভারতের ইতিহাসে।

আমেরিকাতে তখন গরু ছাগলের সাথে মানুষও অবাধে কেনাবেচা হত। আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন ইসলাম ধর্মকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে তার রাষ্ট্র থেকে দাস প্রথার বিলোপ ঘটান। বিশ্বে ইসলামের হাতধরে এমন সু ও মানবিক নজির ভুরি ভুরি আছে। জ্ঞান বিজ্ঞানেও ইসলাম এনেছিল বিপ্লব। এমন স্বর্ণযুগ চলেছে কয়েক দশক ধরে। নবী ও তার পরবর্তী চার খলিফার আমলকেই জ্ঞান বিজ্ঞান, শান্তি ও সৌভাতৃত্বের স্বর্ণ যুগ ছিল। এর পর কয়েকটি রাষ্ট্র নায়কের শাসনকার্যকে বাদ দিয়ে ইসলাম ধর্ম ডুবে যেতে লাগল একটি আচার সর্বস্ব কঠোর কঠিন ধর্ম হিসাবে। মুসলমানরা ক্রমশ পিছতে লাগল জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার জাপান, চীন ও ইসরায়েল সহ অজস্র দেশ যখন জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চায় তর তর করে এগোতে লাগল, প্রায় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব তখন রোজা, নামাজ, মাদ্রসাশিক্ষার মাধ্যমে অত্যাধুনিক কম্পিটিশনের যুগে ক্রমশ পিছিয়ে যেতে লাগল, সেই পশ্চাদগামীতা আজও সমান ভাবে অব্যাহত। বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞান ও নতুন নতুন আবিষ্কারে মুসলমানদের অবদান প্রায় নগন্য!! এই পারফরমেন্স সত্যি হতাশ জনক ও চরম দুঃখের।

ধর্ম সমগ্র মানুষের মঙ্গল সাধন করবে, ভেদাভেদ ঘোঁচাবে, সব ধর্মের মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ ও গনতান্ত্রীক ভাবে সুখে শান্তিতে ভাতৃত্বসুলভ পরিবেশে বসবাস করবে এটাই সমগ্র রাষ্ট্রের লক্ষ হওয়া উচিত।

যেসব মুসলমান, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অধ্যুষিত রাষ্ট্রে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে চান, তাদের মাথায় ও মগজে রাখা উচিত যে, অজস্র মুসলমান এমন সব দেশে বসবাস করেন যেখানে মুসলমানরা আদৌ সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় অথচ উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সেখানে বসবাস করেন।

ভারত হল এমন চরম দৃষ্টান্তমূলক উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্র। পশ্চিম এশিয়ার বারোটি মুসলিম রাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যার থেকেও ভারতে বসবাস রত মুসলমানরা সংখ্যায় বেশি।

বিশ্বে এমন কিছু দেশ আছে যেখানে যথেষ্ঠ উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মুসলমানরা বসবাস করেন। ব্রিটেনে প্রায় ২৫ লাখ মুসলমানের বসবাস। আমেরিকাতে মুসলমানের সংখ্যা কোটি ছুঁই ছুঁই। এরকম গোটা বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন।

ইসলামিক বিশ্বের ভাবা উচিত, বিশ্বের যেখানে যত মুসলমান আছেন, সবাই মুসলিম বিশ্বে এসে বসবাস করুক, এমন ভাবনা ১০০% অবাস্তব ও অপ্রাসঙ্গিক।

এছাড়া বর্তমানে ভারত (BJP শাসনে) ও মায়ানমার ছাড়া উন্নত অমুসলিম রাষ্ট্রে কয়েকটি হাতে গোনা দুর্ঘটনা ছাড়া মুসলমানরা যথেষ্ঠ মর্যাদা ও সম্মানের সাথে বসবাস করছেন। উদাহরণ হিসাবে কানাডা, নিউজিল্যান্ড ব্রিটেন সহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের নাম উল্লেখযোগ্য, অথচ এই সব দেশের অধিকাংশ জনগণ খ্রিষ্ঠ অথবা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। এটাও ঘটনা মুসলিম বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে অমুসলিমরা যথেষ্ঠ সম্মান ও মর্যাদার সাথে বসবাস করছেন। উদাহরণ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া সহ আরব রাষ্ট্রগুলির নাম উল্লেখযোগ্য।

তবে উন্নত বিশ্বের মত মুসলিম বিশ্বকেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নয়, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরেপেক্ষতার আদর্শকে সুনিশ্চিত করা উচিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলির ধর্মনিরেপেক্ষতার আদর্শ গ্রহণ করে অমুসলিমদেরও সমান অধিকার দেওয়া উচিত।

ইসলামে ধর্মনিরেপেক্ষতা আদৌ নতুন কিছু নয়। ধর্মনিরেপেক্ষতার অজস্র দৃষ্টান্ত ইসলাম ধর্মে প্রবল ভাবে বিদ্যমান।

প্রারম্ভে ইসলাম ধর্মের বিকাশ পর্বে হিংস্র ও সহানুভূতিহীন মক্কাবাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ও অসহায় হয়ে মহম্মদ মক্কা ত্যাগ করে মদিনার অবিসিনিয়ায় আশ্রয় নেয়, তখন সেখানকার শাসক ছিলেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। এখানে এসে পয়গম্বর ইহুদীদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার অর্থ ও মর্ম শান্তি ও সহাবস্থান এবং মক্কাবাসীদের আক্রমনের বিরুদ্ধে পারস্পরিক সুরক্ষা।

ভারতে যখন মুসলিম শাসন কাল ছিল, তখন বাদশা ও সম্রাটরা কোনদিন ফৌজদারি শরিয়তি (অপরাধীদের পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা, চোরের হাত কেটে কিম্বা কঠিন অপরাধে শিরচ্ছেদ করা) প্রয়োগ করেননি।

ভারতের ইতিহাসে বাদশা ঔরঙ্গজেব যাকে প্রচন্ড গোঁড়া মুসলমান শাসক হিসেবে চিত্রিত করেছে, তিনিও এই বিধি কোন ধর্মের প্রজাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেননি।

সূরা আল কাফেরুনে স্পষ্ঠ বলা আছে, “যারা উপাসনা করে, ধর্মে ভিন্ন মত পোষণ ও পালন করে  তাদের সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত হয়ো না, পূর্বে ওদের পূর্বপুরুষরা যাদের উপাসনা করত ওরা তাদের উপাসনা করে। আমি তাদের প্রাপ্য পুরোপুরিই দেব, বিন্দুমাত্র কম দেবনা।

অর্থাৎ এখানে আপোষহীন ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন ভাষায় বলা হয়েছে, ভিন্ন ধর্মাচরণ কোনোভাবেই নিন্দনীয় ও শাস্তি যোগ্য নয়।

কোরআন বলেছে, “মানুষ এক জাতি। অতঃপর নবীগণকে সুসংবাদাতা ও শর্তকারীরূপে প্রেরণ করেন এবং মানুষের মধ্যে যে বিষয়ে  মতভেদ সৃষ্টি হয়েছিল স্পষ্ঠ নির্দেশনাদি তাদের নিকট আসার পর তারা শুধু বিদ্বেষগত বিরোধিতা করত।” (২:২১৩)

বিভেদের জন্য নবীদের কোন আগ্রহ ছিলনা, বরং বিভেদের জন্য দায়ী মানুষ নিজেই। কোরআন সুস্পষ্ঠ ভাবেই বলেছে, “হে মানুষ, সমগ্র মানব জাতিকে এক পুরুষ এক নারী আদম ও হাওয়া হতেই তোমাদের সৃষ্টি করেছি, এবং তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন গোত্রে ও জাতে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে যে মানুষ আল্লার কাছে মর্যাদাসম্পন্ন সেই বেশি কর্তব্যপরায়ন।” (৪৯:১৩)

কোরআন বলছে, “তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আইন ও পথ নির্ধারণ করেছি। ইচ্ছে করলে আল্লাহ এক জনগোষ্ঠীতে পরিণত করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য (তিনি তা করেননি)।

অতএব পারস্পরিক হিংসা হানাহানি নয়, সৎ কর্মে বন্ধুত্বসুলভ ভাবে প্রতিযোগিতা কর।” (৫:৪৮)

কোরানে উল্লেখিত সূরাগুলি গণতন্ত্র, ধর্মনিরেপেক্ষতা ও মাবাধিকার-এই তিনটি নীতির বলিষ্ঠ সমর্থনে উপস্থিত।

রাষ্ট্র ভাবনায় ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের পথে সমাধান নেই- এই সত্য টিকে থাকবে আমাদের যুথবদ্ধ অস্তিত্বে। ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদ উভয়ই বিভেদ ও মানুষে মানুষে সঙ্কট সৃষ্টি করে। উদাহরণ হিসাবে হিটলারের জার্মানি ও মোদীর ভারত খুবই প্রাসঙ্গিক। ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদ উভয়ই মানুষের মধ্যে গৌরব ও মিথ্যা শ্রেষ্টত্বের মানসিকতা তৈরি করে। এই ধারণাকে সহজে মোছা যায়না। শান্তি ও সহাবস্থান করে বাঁচার পথ একটাই- ধর্মনিরপেক্ষ মানবিকতার পথ, যার মূল ভিত্তি যুক্তি এবং বিবেকসম্মত ন্যায়। একমাত্র এই পথই পারে এই বিশ্বের সকল মানুষের জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার এবং প্রকৃত সুখের সন্ধান দিতে পারে।

যাইহোক যে ভাবনা থেকে আমার এই লেখা, সেখানেই ফিরে আসছি:

সবকিছুই কোরানে আছে এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুসলমানদের বের হতে হবে। মহম্মদের জন্মের ৪০ বছর পর তিনি প্রথম প্রত্যাদেশ পান। অর্থাৎ মহম্মদের জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। প্রত্যদেশগুলি পান ৬১০ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

তার মৃত্যুর পরবর্তীকালে বিজ্ঞানে সেই থেকে এযাবৎ আবিষ্কৃত বা উদ্ভাবিত প্রায় কোন কিছু থাকা সম্ভব নয়।

কেবল কোরআন পাঠ করে জগৎ, জীবন ও সভ্যতার সকল অগ্রগতির হাল হকিকত জানা প্রায় দুরূহ ও অসম্ভব।

কোরআনে বিজ্ঞ ও মহাপণ্ডিত হলে একজন আলেম কোন সার্জিক্যাল অপারেশনে করে কোন রুগীর হাড় কিম্বা হার্টের অসুখ ঠিক করতে পারবেন না। কোরান গুলে খাওয়া কোন আলেমও আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণে সম্পূর্ণ অদক্ষ ও অচল।

ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা আয়ত্ত করে এগুলি করতে হয়। এটা কোন মুসলিম নিশ্চই অন্তর থেকে চাইবেন না যে মুসলমানরা কেবল রুগী হবে ডাক্তার হবে অন্যরা। একই ভাবে এটাও বলা যায়, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে উচ্চ অট্টালিকার ডিজাইন তৈরি করবে অন্যরা আর শ্রমিক সাপ্লাই দেবে কেবল মুসলমানরা।

কোরআন সম্বন্ধে মহান ইসলামিক চিন্তাবিদ মাওলানা রুমি মন্তব্য করেছেন, “কোরআনের মজ্জাগুলি আমি নেব, হাড়গুলি ছুড়ে দেব কুকুরদের উদ্যেশ্যে।”

এখানে কুকুর শব্দটির প্রয়োগ করেছেন কোরআনকে অমর্যাদা করার উদ্যেশ্যে নয়, প্রসঙ্গটা এসেছে ঠিক তাদের দিকেই লক্ষ্য রেখে যারা আপাত বিষয়গুলির উপর কথার মারপ্যাঁচ চালিয়ে যেতে চান।

যুদ্ধাস্ত্র আবিষ্কার করবে আমেরিকা, চীন, ইসরাইল, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সহ বিভিন্ন দেশ আর মুসলমানরা কেবল আল্লার দেওয়া নেয়ামত (তেল) বেচে খরিদ্দার সাজবে।

উদাহরণগুলি মুসলমানদের জন্য চরম অপমানের নয় কি??

এছাড়া বিশ্বে কমবেশি ৪৮টি মুসলিম দেশ, একশ কোটির বেশি মুসলিম জনসংখ্যা। প্রায় সবকটি মুসলিম দেশে আজ অবধি স্থায়ী কোন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করে উঠতে পারেনি, বলা ভাল সে পথে হাঁটেনি। বাস্তবিক প্রায় প্রত্যেকটি মুসলিম রাষ্ট্র আত্মনেপদী, ভ্রষ্টাচারী, উচ্চকোটির কিছু মানুষজনেরাই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায়। এরা দেশের মানুষজনের সম্পদ চুরি করে, তাদের কথা আদপেই ভাবনায় না এনে আত্মস্বার্থ চরিতার্থতায় পরম মগ্ন। কোন মুসলিম দেশেই বিকাশ উন্মুখ কোনও শিক্ষা ব্যবস্থা নেই, নেই কোনও আন্তর্জাতিক মানের কোন বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে বিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব বেশ কিছু আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র নায়ক পেয়েছে যেমন তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, মিশরের নাসের এবং পাকিস্তানের জিন্না, এদের চিন্তা চেতনায় ধর্মনিরেপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও আধুনিকতার ছাপ ছিল।

অভিজ্ঞতায় দেখা যায় ইরাক যদি নিউক্লিয়ার বোমা আবিষ্কারে সক্ষম হয়ে তা পেন্টাগন ও ওহাইট হাউসে নিক্ষেপের ক্ষমতা রাখত, আমেরিকা ইরাক আক্রমন করতে দু’শ বার ভাবত। ছোট্ট একটি অমুসলিম দেশ উত্তর কোরিয়াকে আমেরিকা জমের মত ভয় পায়। চীন এই মুহূর্তে আমেরিকার জমদূত। মুসলিম বিশ্বে ইরান খুবই নীরবে ও সুকৌশলে নিজের শক্তির নিরিখে স্বনির্ভর হওয়ার প্রাণপন চেষ্টা করছে। কিছুদিন আগে ইরান আমেরিকাকে যে শিক্ষা দিয়েছে, তা যথেষ্ঠ প্রশংসার যোগ্য। তবে এই বিষয়ে চীনের পরোক্ষ মদত আছে।

আমি মুসলমানদের কাছে দুটি মানুষের পরিচিতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি; মাওলানা আব্দুস সাত্তার এবং মোল্লা ওমর দুজনেই মুসলমান ধর্মের অনুসারী। প্রথমজন শান্তির জন্য নোবেল পেয়েছেন আর দ্বিতীয়জন একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত অমানুষ, হিংসার দূত। মুসলমানরা বিজ্ঞানী কালামকে প্রাধান্য দেবে নাকি লাদেন কিম্বা হাফেজ সাঈদ, সে বিষয়ে ভাবুক ও সিদ্ধান্ত নিক।

মুসলমানরা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত;  শিয়া, সুন্নি, বোহরা আর কত কী… নানান মত ও মতপার্থক্যে ভরা নানান গোষ্ঠী ও উপগোষ্ঠীতে ভরা মুসলমানেরা। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বও প্রবল। ধর্মের মিল এদের অতীতেও মেলায়নি, বর্তমানেও মেলাচ্ছে না, ভবিষ্যতেও মেলাবে সে সম্ভাবনাও প্রায় নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধ, কুয়েত-ইরান যুদ্ধ, আজও সৌদি আরব-ইয়েমনকে ধ্বংস করতে উদ্যত। অনেক মুসলমানদের কাছে মসিহা তুরস্কের এরদোগান নিজ স্বার্থে সিরিয়াকে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। অবশ্য সিরিয়া ধ্বংসে আমেরিকার ভূমিকা যথেষ্ঠ।

ধর্মের মিল যদি রাষ্ট্র গুলিকে মেলাত তাহলে পৃথিবীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধই হত না। যুদ্ধরত দেশগুলির অধিকাংশই ছিল খ্রিষ্ঠ ধর্মালম্বী।

নেপাল ও ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু অথচ একে অপরের শত্রু। সীমানা বিতর্ক আজও অব্যাহত।

সুতরাং সিদ্ধান্তে একথা অবশ্যই বলা যায়, ধর্মের মিল নয়, ধান্দার ও স্বার্থের মিল একে অপরের সাথে মেলায়।

সমগ্র  মুসলিম বিশ্বের মানুষের চক্ষুশূল ইসরায়েল ও আমেরিকার দোস্ত সৌদি আরব যে দেশে মুসলমানরা হজে যায়।

এই ধান্দা সর্বস্ব জটিল কুটিল রাজনীতি যতদিন না মানুষ বুঝবে, রাষ্ট্র নায়করা মানুষের রক্ত চুষে যাবেই।

শেষত, যে কথাগুলি বলে শেষ করবো, মুসলমানরা পৃথিবীতে কোন ধর্ম বড়, এই তর্ক ভাবনায় মজে থাকবে নাকি বিজ্ঞান চেতনায় অগ্রগামী হয়ে নিজেদের আত্মনির্ভর করবে সেটাই বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।

অন্যেরা যখন চাঁদে, মঙ্গলগ্রহে এমনকি সূর্য পর্যবেক্ষণের জন্য মহাকাশযান পাঠাচ্ছে, তখন মুসলমানরা নবীর তরিকা মেনে কীভাবে শোবে, হাগবে, গোসল করবে, বিবির সঙ্গে সহবাস করবে, নামাজের সময় দুই হাত পুরুষঙ্গের উপরে বাঁধবে নাকি বুকের কাছে রাখবে, উচ্চ স্বরে অথবা নীরবে আমিন বলবে- এই সব তুচ্ছ বিষয়ে তর্ক বিতর্ক করে সময় নষ্ঠ  করে নিজেদের ভবিষ্যৎ বরবাদ করছে। ভক্তির প্রাবল্য যতই থাক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় এগোতে না পারলে মুসলমানরা অন্যের সাথে পা মিলিয়ে চলতে পারবে না। মুসলমানরা যদি পরনির্ভর-ভিক্ষাজীবীর জীবনকে খুবই স্বাভাবিক ভাবে আল্লার দান বলে মেনে যে ভাবে চলছে ঠিক এভাবেই চলে তাহলে তাদের জীবনে চলার পরিবর্তন করার কোন প্রয়োজন নেই, কিন্তু যদি আত্মনির্ভর, স্বনির্ভর হয়ে সম্মানজনক জীবন যাপন করতে চায়, তাহলে বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই।

এই সহজ সত্যটা মুসলমানরা যতদিননা বোধে ও বুদ্ধিতে এনে নিজেদের জীবন প্রয়োগে আনবে না, সংখ্যায় মাত্র এককোটি ইহুদিদের কাছে নেড়ি কুত্তার মত মার খেতে থাকবে ১৬০ কোটি মুসলমান আর আল্লার কাছে আসমানে দুহাত তুলে  ফরিয়াদ করে বলবে, হে আল্লা আমাদের বাঁচাও, জালিমদের ধ্বংস করে তাদের  হাত থেকে নিষ্কৃতি দাও। আর আল্লা এই মূর্খ ও অসচেতন মুসলমানদের প্রার্থনা অতীতেও শোনেনি, বর্তমানেও শুনছে না এবং ভবিষ্যতে যে শুনবে সে সম্ভবনাও নেই।

Website | + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *