ফুটপাথ

আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

‘দে না রে খানকির ছেলে! ১০টাকায় গরীব হয়ে যাবি?’ বুঝলাম প্রয়োজনটা খুবই, নয়তো এভাবে বলে না। ক্লান্ত শরীরে এপথেই অফিস থেকে ফ্ল্যাটে ফেরা। পায়ে কর্পোরেট হয়ে ওঠার ঘা। চোঙা জুতো আঙুলের গলা টিপে রেখেছে। ব্রিজ পেরোলেই মদের দোকান, দুটো টিউবর্গ নেব ঠিক, তিনটে একশো টাকা, আর ফেরতে পঞ্চাশে চিপস, বাদামভাজা, দুটো ডিম! বুড়ো আবার চিৎকার করল, ‘মরেও না জানোয়ারগুলো!’

ভেবেছিল ফিরব না। ব্রিজের মধ্যিখান অব্দি উঠে ফিরে এলাম আবার। ‘কী চাই? খিস্তি দিচ্ছ কেন? রোজ টাকা দিতে হবে?’ থতমত খেয়ে বলল ‘তাহলে মর! আমিও মরি! জঞ্জাল!’ হাত কাঁপছে অথচ এতটুকুও গলা কাঁপছে না! অভিশাপ দিতেও একটু হোঁচট খাচ্ছে না স্বর। না একশো টাকা দিইনি, গল্পে সেসব হয়, দশটাকার নোট দিয়ে হাঁটুগেড়ে বসি পাশে। বুড়ো সব ভুলে যায় জানি। কিন্তু আজ কীসের চিন্তায়? বলল পায়ের ঘা সারছে না, মরার ভয় পাচ্ছে!

বললাম মরতে ভয় পাও? যা আছ, বেঁচে থাকা? ভয় বলতে একটাই, মরলে দাহ করবে কে? না ঘর, না পরিবার! মনেও পরে না বাড়ি বলতে কিছু ছিল কিনা, থাকার মধ্যে এই নিষ্ঠুর শহর আর তার লাথখোড় বাসিন্দারা, যারা আমার মতো খিস্তি শুনতে পেলে পিছন ফিরে আসে।

কথা দিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাব। পাশের দোকান থেকে ওষুধ কিনে দিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম। তারপর সকালে ফোন আসে বাড়ি ফিরে যাওয়ার! রোগে মানুষ মারছে খুব! ব্যাগ গুছিয়ে ফিরে আসি।

রোজ একটু একটু করে খালি হয়ে যায় শহর। বুড়োর কোথাও যাওয়ার নেই। হাত পাতবার মতোও কেউ যাতায়াত করে না এই রাস্তায়! বুড়োর পায়ের ঘা স্বপ্নে যেন মহামারি হয়ে ওঠে এই শহরে। তারপর? মরলে দাহ করার কেউ ছিল না যার, আজ গোটা শহর যেন তার হবু মৃত্যুতে ন্যাড়া! নিজের সন্তানের বুকে মাথা রেখে পড়ে আছে বুড়ো। পোঁটলার পাশ দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে রাতের পেচ্ছাপ! ওবাড়িতে আলো জ্বালিয়ে ফিরে আসিনি তো লকডাউনে?

Website | + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *