সহজিয়া পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তথ্যচিত্র নির্মাতা সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদারের সাক্ষাৎকার নিলেন আশরাফুল আমীন সম্রাট

সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদার

সৌমিত্র ঘোষ দস্তিদার একজন সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির দৈনিকে নিয়মিত লেখেন। সাংবাদিক হিসাবে জীবন শুরু হলেও কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসাবে কাজ করছেন।  এই কাজে তিনি অকুতোভয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটার পর একটা তথ্যচিত্র বানিয়ে গেছেন। যেসব প্রান্তিক মানুষদের জীবন অনাদরে বয়ে যায় তাদের কথা তুলে ধরেন সরাসরি। সেটা গুজরাট গনহত্যায় আক্রান্ত মানুষের কথায় হোক, রাষ্ট্রীয় গুন্ডা দ্বারা নির্যাতিত মনিপুরের নারীর কথায় হোক বা পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক মুসলমানদের কথায় হোক। দেশ বিদেশের পুরস্কারও পেয়েছেন প্রচুর। কিন্তু মোটেই সেসব পুরস্কার নিয়ে তিনি লালায়িত নন। তাঁর সবথেকে বড় পুরস্কার প্রান্তিক মানুষদের ভালবাসা।

সহজিয়া পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এমনই এক অসামান্য মানুষের সাক্ষাৎকার নিলেন শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও সমাজকর্মী আশরাফুল আমীন সম্রাট। নিজের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে প্রান্তিক মানুষদের কথা, সাম্প্রতিক রাজনীতি, চর্চায় মৌলানা ভাসানি সহ একাধিক বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করলেন সম্রাটের সঙ্গে।

সম্রাটঃ সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। তারপর তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ। কার্যক্ষেত্র পরিবর্তনের পিছনের গল্পটা কী?

সৌমিত্রঃ দ্যাখ, মূলধারার গনমাধ্যমের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। যে কোনো কারনেই হোক সবটা প্রকাশ করতে পারে না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তথ্যচিত্রের মত মাধ্যম অনেকখানি স্বাধীনতা দেয়। তবে সাংবাদিকতা থেকে সরে এসেছি বলা ভুল। দৈনন্দিন সাংবাদিকতায় না থাকলেও নিজের লেখায় প্রান্তিক মানুষের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমি বহু বছর ধরেই লাতিন আমেরিকার তথ্যচিত্রের প্রচুর ভক্ত। আমার প্রথম অনুপ্রেরণা বলা যেতে পারে। আমাদের সোনেক্স বলে একটি টেলিভিসন সংস্থা ছিল। আমার কাকা ছিলেন তার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। আমার মনে হল যে এটি একটি নতুন মিডিয়া, নতুন জায়গা, আর অনেক বেশি মানুষের কাছে

পৌঁছনোও যাবে। এই ভেবে কিছুটা কাকার প্রশ্রয়ে, কিছুটা নিজের খেয়ালে কাজ শুরু করে দিলাম। এরপরে পরেই আমি বিহারে যায়। বিহারের গ্রামাঞ্চলে জাতিভেদের সমস্যা গুলি আমায় প্রবলভাবে নাড়া দেয়। এই সমস্যা গুলি মূলধারার গনমাধ্যমে উঠে আসে না। আমি অন্য এক ভারতবর্ষ দেখতে পাই বিহারে। জাতিশৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষ গুলোর কথা তুলে ধরার তাগিদ অনুভব করি।

সম্রাটঃ এককভাবে আপনার প্রথম তথ্যচিত্র সম্ভবতঃ গুজরাট গনহত্যা নিয়েনাথিং অফিসিয়াল ...

সৌমিত্রঃ না না, এটা তোর ভুল ধারনা। অনেকেই এটা ভেবে থাকেন। কিন্তু তেমনটা নয়। তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসাবে আমার প্রথম হাতেখড়ি আর্কিওলজিক্যাল মনুমেন্ট অব ইন্ডিয়া দিয়ে। এর তিনটি সিরিজ আমি করেছিলাম সোনেক্সের হয়ে।

সম্রাটঃ সেটা কোথায় করেছিলেন, বিহারে ?

সৌমিত্রঃ না না, এটা করেছিলাম মালদা, বাঁকুড়া এবং বর্ধমান, এই তিনটি জেলায়। তবে এককভাবে কাজ যদি বলতে হয় তাহলে সেটা বিহার। বিহারে কাজ করতে গিয়ে জাতিবৈষম্য ও ভূমির অধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নগুলি চিহ্নিত করার সুযোগ পায়। এই কাজটি আমার জীবনদর্শনই পাল্টে দেয়। জাতিভেদ কতখানি গভীরে প্রোথিত, আধা সামন্ততান্ত্রিক সমাজে ভূমির অধিকারের প্রশ্ন গুলি আজও কতখানি প্রাসঙ্গিক সেগুলো চাক্ষুষ উপলব্দি করি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ এককভাবে কাজটি শেষ করতে পারিনি আর্থিক অসঙ্গতির কারনে। পরে অবশ্য দক্ষিন কোরিয়ার এক প্রোডিউসিং সংস্থার সাথে হাত মিলিয়ে কাজটি শেষ করতে হয়। তবুও বিহার আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়, প্রচুর অভিজ্ঞতা হয়। আত্মবিশ্বাসও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এগুলো সবই ২০০০ সালের ঘটনা। এরপর ফ্রান্সের নামকরা তথ্যচিত্র নির্মাতা কাথরিন বার্জের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তিনি একটা বড় কাজ নিয়ে পশ্চিমবাংলায় এসেছিলেন।

সম্রাটঃ সম্ভবত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের উপর কোন তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ নিয়ে এসেছিলেন …

সৌমিত্রঃ একদম ঠিক।  তথ্যচিত্রটির নাম ছিল গাছ। প্রোডিউসার ছিলেন ইসমাইল মার্চেন্ট। এই দুইজনের সংস্পর্শে এসে আমি অনেক কিছু শিখি। তথ্যচিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে যে ধারা সেই সময় অব্দি চালু ছিল তার বাইরে গিয়ে একটি ভিন্ন ধারার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। সারাদিন কাজ শেষে ক্যাথরিন আমাদের সবাইকে নিয়ে বসতেন। সেখানে প্রোডাকশন বয়, ড্রাইভার, টেকনিক্যাল এসিসট্যান্ট সবাই থাকত। কোন হায়ারার্কি ছিল না, অথোরিটি ছিল না। কাজটি পরিচালক বা প্রোডিউসারের একার না, সবার। এই বোধটি সবার মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ক্যাথরিন। একটা কমিউনিটি ফিলিং তৈরি হয়েছিল। ক্যাথিরেনের এই আদর্শ আমি নিজ জীবনচর্চায় গ্রহণ করি। সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার শিক্ষা তাঁর কাছ থেকেই পাই। কিছুদিনের মধ্যেই মনিপুর, মিজোরাম, আসাম নিয়ে পরপর কাজ গুলি করি। সেই সুত্রেই উত্তরপূর্ব ভারতের প্রত্যন্ত এলাকা গুলি চষে বেড়ানোর সুযোগ হয়।। সমস্ত কাজ গুলোই নাথিং অফিসিয়ালের আগে। তবে এটা সত্যি যে গুজরাট গনহত্যার উপর করা নাথিং অফিসিয়ালই আমাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়। 

সম্রাটঃ নাথিং অফিসিয়াল  নামটা কেমন অদ্ভুত লাগে। এমন ব্যতিক্রমী নাম কেন ?

সৌমিত্রঃ আসলে নামটি দিয়েছিল আমার এক বন্ধু রাহুল। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই নামটি বেরিয়ে আসে। একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর উপর পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের পরেও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই সময় বলেছিলেন কিছুই নাকি হয় নি, সব ঠিক আছে। এটি ঘটনা ঘটার মাস দেড়েক পরে মার্চ মাসে।  সাতপাঁচ না ভেবে দলবল নিয়ে গুজরাট পাড়ি দিই। আমেদাবাদ প্লাটফর্মে নেমে দেখি অসহায় গৃহহীন আক্রান্ত মানুষে থিকথিক করছে ভিড়। দেখেই বুঝতে পারি চূড়ান্ত মিথ্যা কথা বলেছিলেন মোদি। সেই কারনেই নাথিং অফিসিয়াল।

সম্রাটঃ অতি স্পর্শকাতর একটি বিষয় যেখানে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে সে বিষয় নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মানের ভাবনাই বা এল কেন ? তার উপর আবার একদম কর্মজীবনের শুরুর দিকে ?

সৌমিত্রঃ কিছুটা ঝুঁকি তো ছিলই। তখন বয়স কম ছিল। আত্মবিশ্বাস ছিল। দলে আমরা তিনজন ছিলাম। আর ছিল ছোট ক্যামেরা। যে ট্রেনে গেছিলাম সুরাটের পর পুরো ফাঁকা। কোন মুসলমান ভয়ে আমেদাবাদের দিকে যেত না। কিছু বাচ্চা ট্রেনের মধ্যে জিনিসপত্র বিক্রি করছিল। ট্রেনের এক ভদ্রলোক হিন্দিতে বললেন এগুলো সব দাঙ্গাতে লুঠ হওয়া মাল। তিনিই সুরাটে নেমে যেতে বললেন, আমেদাবাদ গেলে বিপদে পড়তে পারি। গুজরাটে আমার কোন পরিচিত ছিল না। তবে একটা ফোন নম্বর ছিল। মহাশ্বেতা দি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন ইনি হচ্ছেন ঐ এলাকার বেতাজ বাদশা। এঁকে ফোন করলেই যেকোন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেই সাহসে সুরাট ষ্টেশন পেরিয়ে গেলাম। আমেদাবাদ ষ্টেশনে নেমে ফোন বুথে গিয়ে দেখি লম্বা লাইন। কোনরকমে ঠেলাঠেলি করে আমার এক তরুণ সঙ্গী ফোন করে এসে বলল যে ফোনের ওপারের ভদ্রলোক কাঁপছেন। কারন ফোনে যখন তিনি কথা বলছিলেন তখন তাঁর বাড়িতেই আগুন লাগানো হচ্ছিল। সাময়িকভাবে তখন মনে হয়েছিল বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু সঙ্গী তরুণরা বলল, “এসেছি যখন কাজটি করেই যাব”। ওদের সাহসে ভর করে আমিও থেকে গেলাম।

সম্রাটঃ সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে যখনই কোন পরিকল্পিত দাঙ্গা হয়েছে দাঙ্গার পরেই বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক বেড়েছে। আপনি তো নিজে চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন। আপনার কী মনে হয় ?

সৌমিত্রঃ গুজরাট গনহত্যা ছিল বিজেপির পরীক্ষাগার। সেই পরীক্ষায় তাদের ইষ্ট ফল মিলেছে। মেরুকরণ হয়েছে। ভোটব্যাঙ্ক বেড়েছে। দেশের বিরোধী দল, এমনকি বামপন্থীরাও সেই পরিকল্পনার স্বরূপ বুঝতে পারে নি। মিডিয়াও এটাকে হত্যাযজ্ঞ না বলে দাঙ্গা বলে চালিয়েছে।

সম্রাটঃ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা (ক্ষেত্রবিশেষে হত্যাযজ্ঞ) লাগলে মেরুকরণের কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। এটা প্রামানিত সত্য বলছেন ?

সৌমিত্রঃ একদমই তাই। দাঙ্গা তো উপসর্গ। মূলগত কারন তো বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক মন। এই মনটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে জেগে ওঠে। এ প্রসঙ্গে তোকে একটা গল্প বলি। একটি মেয়ে আরতি জৈন (নাম পরিবর্তিত) সামাজিক কাজ করত গুজরাটে। কাজের সুত্রেই মেয়েটির সঙ্গে আলাপ হয়। দেখতাম মুসলিম মহল্লায় মেয়েটি যাচ্ছে, খাবার দিচ্ছে, বাচ্চাদের আদর করছে। সাধারণ মুসলিম মায়েরা তাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছে, বুকে জড়িয়ে ধরছে। বুঝতে পেরেছিলাম মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে ওর দারুণ গ্রহনযোগ্যতা আছে। মেয়েটি আমাদের প্রচুর সাহায্য করেছে। গুজরাটি রেসিপি রান্না করে খাইয়েছে। কিন্তু একদিন দেখলাম মেয়েটি ঠোঁটে লিপষ্টিক নিতে নিতে আমাদের সবাইকে বলছে, “বুঝলেন দাদা, মুসলিম গুলোকে মার দেওয়ারও প্রয়োজন আছে”।

সম্রাটঃ মানে, মনের বিষটা যায়নি?

সৌমিত্রঃ সেটাই আর কী। তখনই আমি বুঝেছিলাম এ বড় দূরহ কাজ। এমন একটি মেয়ে যে মুসলমানদের এত ভালবাসা আদর পেয়েও তাদেরকে মার খাওয়ানোর জাষ্টিফিকেশন মনে লালন করছে, তখন সাম্প্রদায়িকতার মূলোৎপাটন অনেক কঠিন কাজ। দাঙ্গার সময় আর কিছু না, এই সুপ্ত বিষাক্ত মনটাকেই দাঙ্গাবাজদের কাজে লাগে।

সম্রাটঃ গুজরাটে যেটা হয়েছিল সেটাকে তাহলে দাঙ্গা বলবেন না ?

সৌমিত্রঃ  না, দাঙ্গা নয়। পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ। এ কথাটি আমি বার বার বলব। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এটা করা হয়েছে।

সম্রাটঃ একটি বিশেষ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর উপর পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞকে দাঙ্গা বলে চালানো  নিকৃষ্ট অপরাধকে লঘু করে দেওয়ার চেষ্টা নয় কি ? রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত হত্যাযজ্ঞকে আড়াল করে দেওয়া যায় এতে।

সৌমিত্রঃ অবশ্যই। আমরা তো মিডিয়া ইন্টেলিজেন্সিয়া দ্বারা প্রভাবিত। মুল ধারার মিডিয়া যেভাবে আমাদের খবর পরিবেশন করে সেই নিরিখেই গরিষ্ঠের মত নির্মাণ হয়। মিডিয়া এখানে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বর্জিত নয়, তাই একে অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ ভাবাটা ভুল।

সম্রাটঃ  আপনার তথ্যচিত্রে আক্রান্ত মানুষ গুলোর কথা কতখানি তুলে ধরতে পেরেছেন বলে বিশ্বাস রাখেন ?

সৌমিত্রঃ দ্যাখ, কতটা তুলে ধরতে পেরেছি সেটা বলতে পারব না। তবে আমি চেষ্টা করেছি। মূলধারার মিডিয়া যে জায়গা গুলো এড়িয়ে যায় আমি সেখানে হাত লাগিয়েছি। অন্তত সাহস করে একটা প্রশ্নচিহ্ন তো তুলতে পেরেছি।

সম্রাটঃ আপনি নিজেকে ‘ফিল্ম মেকার’ না বলে ‘ফিল্ম অ্যাক্টিভিষ্ট” বলতে পছন্দ করেন। নান্দনিকতার থেকেও জীবনকে অনেক বেশি মূল্য দেন। শিল্পীমন নান্দনিকতার বিষয়ে খুঁতখুঁতে হয়। আপনি নান্দনিকতার জায়গায় কিছুটা আপোষ করে চলেন। কেন ? কোথায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে ?

সৌমিত্রঃ নান্দনিকতাকে তো অনেকভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। সংজ্ঞার ভদ্রবৃত্তীয় প্যাটার্ন আমি নাই বা মানলাম। আমায় চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ একবার বলেছিলেন, সত্যের থেকে নান্দনিক আর কিছু হয় না। আমি সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমার কোন রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা নেই। বিদেশি গ্রান্টের অপেক্ষাতেও বসে থাকি না। আমার তথ্যচিত্র কান ফেষ্টিভেলে যাবে সেই খোয়াবও দেখি না। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে দেখলেই ক্যামেরা নিয়ে ছুটে যাব। তাদের কথা তুলে ধরব। গৌতমদার সুরেই সুর মিলিয়ে বলব এর থেকে নান্দনিক আর কিছু নেই আমার কাছে।

সম্রাটঃ আপনার জায়গায় আপনার কাজ যথেষ্ট নান্দনিক। যে শিল্পকর্ম জীবনের সত্য খুল্লামখুল্লাভাবে তুলে ধরে তার থেকে বেশি নান্দনিক আর কিছু হয় না।

সৌমিত্রঃ একদমই। আর কিছু না পেলেও যাদের কথা তুলে ধরছি তাদের ভালবাসা তো পাচ্ছি। এই যেমন আমফান যেদিন হল সেদিন রাত থেকে সারাদিন বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বহু মানুষ আমাকে ফোন করেছে। ফোনে না পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, আমায় ভালবাসে বলেই তো। এর থেকে বড় পাওনা আর কী আছে বল!

সম্রাটঃ আপনার তথ্যচিত্রে বারবার উঠে এসেছে প্রান্তিক মানুষদের অনুষঙ্গ। বিশেষতঃ পশ্চিমবাংলার মুসলমান। সে আপনার সীমান্ত আখ্যানই হোক, বা মুসলমানের কথা। দেশভাগ পরবর্তী সময়ে পশ্চিম বাংলার মুসলমান জনগোষ্ঠীর বঞ্চনা নিয়ে এমন কাজ কেউ আগে করেছেন বলে জানা নেই। আপনার তথ্যচিত্রে আলাদা করে পশ্চিমবাংলার মুসলমানদের কথা তুলে ধরার কথা ভাবলেন কেন ?

সৌমিত্রঃ সাচার কমিটির রিপোর্ট আমি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়েছিলাম। ঘটনাচক্রে দিল্লীতে সাচার সাহেবে সঙ্গে দেখাও হয়। তিনিই আমায় বলেন যে “তুমি এসব দিল্লীফিল্লি কী করে বেড়াচ্ছো, পশ্চিমবাংলার মুসলমানদের জন্য কিছু করো, সীমাহীন বঞ্চনা হয়েছে ওদের প্রতি”। তাঁর কথা শুনেই ধারদেনা করে কাজ শুরু করি। ২০১১ তে রিলিজ হয় মুসলমানের কথা।

সম্রাটঃ ভদ্রবৃত্ত নাকউঁচু সমাজ মুসলমানের কথা দেখলে তাদের বহু চালু ধারনার বিনির্মাণ হবে। সেই বিশ্বাস রাখেন ?

সৌমিত্রঃ এ প্রসঙ্গে আমার একটি ছোট্ট ঘটনার কথা মনে পড়ছে। এক জনৈক এলিট তথ্যচিত্রটি দেখার পর আমায় বলে, মুসলমানের কথা  দেখালে কিন্তু কই সেখানে কাওয়ালি গান নেই, বিরিয়ানি নেই”। কথা শুনে আমি এক প্রস্থ হেসেই ফেলি। এরা কিছু চালু ধারণায়  মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বেঁধে রেখেছে। এরা মনে করে মুসলমান মানেই এক গন্ডা বাচ্চা, ধর্মান্ধ, ফেজটুপি, গলায় তক্তি, ঘরে ঘরে তিন তালাক, মাদ্রাসামুখী, গোমাংস ইত্যাদি প্রভৃতি। শতাব্দী প্রাচীন ধারণা যেগুলো তৈরি হয়ে আছে সেখান থেকে এরা বেরোতে চাই না। এরা বাঙালি মুসলমানের আধুনিক মিশন আন্দোলনের সাফল্যের খতিয়ান জানে না। উত্তরোত্তর মুসলিম ছাত্রীদের পড়াশোনার হারে রেকোর্ড বৃদ্ধির খতিয়ান জানে না। বাঙালী মুসলমান নিজের চেষ্টায় উঠে দাঁড়াচ্ছে। শিক্ষিত সমাজ তৈরি হচ্ছে। শিক্ষিত তরুণরা উঠে আসছে। ভদ্রবৃত্তীয় আধিপত্যবাদী ধ্যানধারনাকে প্রশ্ন করছে। যাবতীয় বঞ্চনা উপেক্ষা করেও নারীরাও সুচাকুরে হচ্ছে। এই ভদ্রবৃত্তীয় সমাজের একাংশ এগুলো কিচ্ছু জানে না। জানার চেষ্টাও করে না। শুধু জানে, এরা ধর্মান্ধ, নারীরা পর্দার আড়ালে আবদ্ধ ইত্যাদি প্রভৃতি।

সম্রাটঃ এমনকি সাম্প্রতিক সমীক্ষা, পরিসংখ্যান নিয়ে এদের মাথাব্যথা নেই। সাচার রিপোর্টের পাশাপাশি স্ন্যাপ ও গাইডেন্স গিল্ডের রিপোর্ট পড়ে দেখেছেন কিনা জানতে চাইলে অনেকেই মুখের উপর বলে দেন ওসব পড়ার সময় নেই। চালু ধারনা থেকে কিছুতেই এদের নড়ানো যাবে না। এটা তো এক ধরনের মৌলবাদ। ভদ্রবৃত্তীয় মৌলবাদ বলা চলে। কী বলেন ?

সৌমিত্রঃ ঠিকই তো। এদের বাঙালি মুসলমান নিয়ে কোন আগ্রহই নেই। চালু ধারনা গুলো যাচাই করার মানসিকতাও নেই। পত্রপত্রিকা পড়ে, বা সেকেন্ড বা থার্ড হ্যান্ড এক্সপ্রিয়েন্স থেকে মনের গড়ন অনুযায়ী কিছু ধারনা পুষে বসে থাকে। এরা নিজেরাই নিজেদের আলোকপ্রাপ্ত প্রগতিশীল বলে, কিন্তু নিজ চেনা বৃত্তের বাইরে বেরোতে চায় না। এদের চালু ধারণা ও ন্যারেটিভকে আরবি নামের কেউ প্রশ্ন করলে এদের ইগোতে লাগে। আজব ব্যাপারস্যাপার। ভদ্রবৃত্তীয় এলিট সমাজে মুসলমানদের সম্পর্কে যে প্রশ্ন ও ধারণা গুলি ঘোরাফেরা করে সেগুলোর স্বরূপ খুঁজতে গিয়েছিলাম মুসলমানের কথা, সীমান্ত  আখ্যানের মাধ্যমে। কাজটি করতে গিয়ে বহু ভাবনা ওলটপালট হয়ে গেছে। সেই থেকে নাকউঁচু ভদ্রপোনামি থেকে দূরে থাকি।

সম্রাটঃ আপনার মুসলমানের কথা মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রতি বঞ্চনার দলিল হিসাবে আমরা দেখতে পারি। তথ্যচিত্রটি নন্দনে দেখানোর কথা ছিল। তৃণমূল সরকার বাধাদান করে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা না। কারন রাজনৈতিক ইতিহাসের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলেও তো বঞ্চনার দায়টা পূর্বতন কংগ্রেস বা বাম সরকারের উপর পড়ে। তৃণমূল সরকারের আপত্তির জায়গাটা কোথায় ?

সৌমিত্রঃ এটা আমি বলতে পারব না। এটা তাঁরাই বলতে পারবেন। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কানেও তো মন্ত্রনা দেওয়ার লোকের অভাব নেই। তাঁরা হয়ত বলেছেন যে আইপিএস অফিসার নজরুল ইসলাম চাঁচাছোলা ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেছেন। তবে তিনি তো আর শুধু তৃণমূলকে বলেননি, বিগত বাম ও কংগ্রেস সরকারেও সমালোচনা করেছেন।

সম্রাটঃ TimesNow তে তখন ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত খবর করেছিল। পুরো তথ্যচিত্রে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার নজরুল ইসলামের একটি লম্বা স্ক্রীনপ্রেজেন্স রয়েছে। তিনি তৃণমূল সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের ব্রাহ্মণ্যবাদী চরিত্র দৃষ্টান্ত ও পরিসংখ্যান দিয়ে তুলে ধরেছিলেন বলেই কি এত আপত্তি ?

সৌমিত্রঃ আমার তো এখন তাইই মনে হয়। নজরুল ইসলাম যেহেতু ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বলেছিলেন তাই বক্তব্যের পাবলিসিটি বন্ধ করতে হবে। সেই কুভাবনা থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কানে মন্ত্রনা দেওয়া হয়েছে যে তথ্যচিত্রটিতে এমন বিতর্কিত মন্তব্য রয়েছে যেটা প্রকাশিত হলে আইনশৃংক্ষলা বিঘ্নিত হবে। তাই প্রদর্শনী বন্ধের সিদ্ধান্ত। ঘটনা হচ্ছে কোন ক্ষমতাসীন দল ও তার স্তাবকেরা কোন দিনই সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। এটা কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল যেই হোক। এটা অবশ্য আমার ক্ষেত্রে শাপে বরই হয়েছে। এরপর থেকেই ইংল্যান্ড কানাডা যে যেখানে পশ্চিমবাংলার বাঙালী মুসলমানদের নিয়ে গবেষনা, লেখালেখি করছে তারা প্রায় প্রত্যেকেই রেফারেন্স হিসাবে এই তথ্যচিত্রটির কথা বলছেন। সেই সুবাদে দেশ বিদেশে বহু জায়গায় তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন হয়েছে।

সম্রাটঃ সাচার কমিটির রিপোর্ট তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বঞ্চনার জায়গা গুলি। অ্যাসোসিয়েসন স্ন্যাপ ও গাইডেন্স গিল্ডের রিপোর্টও একই কথা বলেছে। তবু কিছু তথাকথিত প্রগতিশীল মানুষ আছেন যারা এইসব পরিসংখ্যান, সমীক্ষার তোয়াক্কা না করে মুসলমান জনগোষ্ঠীকে শুধু ধর্মীয় প্যারামিটার দিয়ে মেপে নিতে চান। মুসলিমদের সম্পর্কে বস্তাপচা ষ্টিরিয়োটাইপ, ভ্রান্ত ও বিকৃত ধ্যানধারণা নিয়ে এরা গোঁ ধরে বসে থাকেন। এই ভদ্রবৃত্তীয় মৌলবাদের উৎস কি? উত্তরাধিকারসুত্রে প্রাপ্ত মুসলিমফোবিয়া ? নাকি অপরিচয় ?

সৌমিত্রঃ দুটোই। মুসলিমফোবিয়ার লিগ্যাসি আমরা বয়ে আনছি উনবিংশ শতক থেকে। সেই যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হল ইংরেজদের চাটুকার উচ্চবর্ণীয়রা পত্তনিদারি, মুৎসুদ্দিগিরি করে করা সম্পত্তি জমিদারিতে বিনিয়োগ করে নব্য উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেনির সৃষ্টি করল, সেই শুরু। সেই সময়ের সাহিত্য নাটক থেকে শুরু করে মুসলিমফোবিয়া ও ছোটলোকফোবিয়ার  লিগ্যাসি বয়ে আনছে একশ্রেণির নাকউঁচু ভদ্রকূল। এরা ভিতরে ভিতরে সাম্প্রদায়িক, ভিতরে ভিতরে সামন্ততান্ত্রিক, ভিতরে ভিতরে গোঁড়া, কূপমণ্ডুক। আবার  স্বঘোষিত প্রগতিশীল।

সম্রাটঃ সব সময় এরা বিচারকের আসনে বসে যায়। গ্রামীণ মুসলমান ও তফশিলীদের সম্পর্কে ধারনা না রেখেও একটা উঁচু জায়গা থেকে বিজ্ঞের মত নাকউঁচু সমালোচনা, এগুলো কি সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতাইকেই প্রতিফলিত করে না ?

সৌমিত্রঃ সেই মানসিকতা আজও ফল্গুধারার মত বহমান। ভাবনায় এতটাই আধিপত্যবাদী যে নিজের ভাবনাটাকেই সেরা মনে করে। প্রশ্নহীন মনে করে। পাশ্চাত্য থেকে আমদানি করা প্রগতিশীলতার একরৈখিক ধারনা যে প্রশ্নের উর্ধে নয়, সেটা কিছুতেই এরা মানতে চাইবে না। আধুনিকতার ধারনার পাশ্চাত্য ছাঁচ থেকে এরা কিছুতেই বেরোবে না। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতিক কাঠামো আমাদের পরম্পরায় ঢুকে গেছে। এই যেমন ধর ডোম, বাউরি, বাগদী সম্প্রদায়ের মানুষ যারা আছে তাদের আমরা ভালবেসে কাছে টেনেছি কোনদিন ? ওরা ভোট দেবে, লেঠেল হবে, মারামারি করবে, খুন হবে, কিন্তু ওরা মুখ্যমন্ত্রী হবে না। কার নেতামন্ত্রী হবে তুই ভাল করেই জানিস। আর কী বলব।

সম্রাটঃ অনেকেই বলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদেরও দোষ আছে। পিছিয়ে থাকার জন্য নিজেরাও অনেকখানি দায়ী। কতটা সহমত হবেন ?

সৌমিত্রঃ হুম বলে। দোষ তো থাকতেই পারে। দোষ থাকার অনেক গুলো কারন আছে যেটা আমি আমার সীমান্ত আখ্যানে বলেছি। সেই কারন গুলো খুঁজে বের করে আলোকপ্রাপ্ত সম্প্রদায় হিসাবে আমরা কতটুকু নিরসনের চেষ্টা করেছি ? এই যে দেশভাগের পরে ওপার বাংলায় যারা গেল তারা সব উচ্চবর্গের মুসলমান। পড়ে রইল কারা ? হাভাতে খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত মুসলমান। অনেকেই বলে “আহ, জানেন তো মুসলমানদের চেতনার স্তর এত খারাপ”। আরে! হবে কী করে? তারা কোন আর্থসামাজিক অবস্থানে রয়েছে সেটা একবার চোখ খুলে দেখুন। শুধু ধর্মের চোখ দিয়ে দেখে নিলেই তো হয় না।

সম্রাটঃ আমার তো মনে হয় পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানের সঙ্গে তুলনা হতে পারে দুই বাংলার নমঃশূদ্র জনগোষ্ঠীর কারন ওরা পশ্চিমবঙ্গের এই নমঃশুদ্রদেরই এক্সটেন্ডেড অংশ। সেটা না করে মুসলমানদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে আলোকপ্রাপ্ত উচ্চবর্ণের হিন্দু জনগোষ্ঠীর। এই তুলনাটা তো ঠিক না।

সৌমিত্রঃ একদমই তাই। আমি এখানের মুসলমান দেখে ঢাকার বাঙালী মুসলমানদের চিনতে পারি না। ঢাকায় মেয়েরা উচ্চপদে চাকরি করছে, দামী গাড়ি চালাচ্ছে। শুধু মুসলমান ধর্মীয় পরিচয় দেখলে তো হবে না। আর্থসামাজিক ও শ্রেণিগত অবস্থানটাও দেখতে হবে। অভিজাত মুসলিমদের সঙ্গে উচ্চবর্ণের উচ্চবর্গীয় হিন্দুদের সখ্যতা থাকে, নবাব আমলেও এটাই ছিল। নবাব বা রাজকর্মচারী আশরফ মুসলমানদের সঙ্গে কি গ্রামীন চাষী মুসলমানদের সখ্যতা ছিল ? ছিল না। বরং শ্রেণি চরিত্রের কারনেই অভিজাত মুসলমান ও অভিজাত হিন্দুদের সঙ্গে নিম্নবিত্ত মুসলমানরদের ও নমঃশুদ্রদের সামাজিক যোগাযোগ ছিল না। এটা তো মানতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান সবে এগোতে শুরু করেছে। বলতে গেলে ১৯৭০-৮০র পরে। এদের গালি না দিয়ে হাত ধরলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?

সম্রাটঃ তবে উচ্চবর্ণের হলেই যে সে ব্রাহ্মণ্যবাদী হবে এমনটা তো নয়। শিক্ষিত মুসলমান ও শিক্ষিত নমঃশূদ্রদের একাংশও তো ব্রাহ্মণ্যবাদী মানসিকরায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।

সৌমিত্রঃ একদমই তাই। এদের থেকে যারা উঠে আসছে তাদের একটা অংশের আবার ব্রাহ্মণ্যবাদী ছোঁয়া লাগছে। এরা পথ চেয়ে বসে থাকে কবে প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের আলোকপ্রাপ্তরা ধর্মনিরপেক্ষতার সার্টিফিকেটের দেবে, পিঠ চাপড়ে বলবে “তুমিই প্রগতিশীল মুসলমান”। তুই নিজে প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ কি না তার সার্টিফিকেট পেতে যদি তোকে সৌমিত্র দাস্তিদারের দরজায় টোকা মারতে হয় তাহলে সেটা লজ্জার। দাস মনোবৃত্তির প্রতিফলন। এখান থেকে বেরিয়ে এসে উচ্চবর্গীয় সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ, চালু ভাষ্য, বাজারি ধ্যানধারনা সমস্ত কিছুকে চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করতে হবে। এতে করে সংঘাত বাড়বে ঠিকই, কিন্তু আধিপত্যবাদের প্রতিভাষ্যও তৈরি হবে। এটার খুব প্রয়োজন।

সম্রাটঃ এখন যেমন উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের একাংশ বাংলার নবজাগরণের বিষয় গুলো নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। একটা চালু ধারনা রয়েছে যে নবজাগরণের সময় মুসলমানরা এতটাই গোঁড়া ছিল যে তাঁরা নবজাগরণের আলো পায় নি। পাশাপাশি এই প্রশ্নটিও তো তুলতে হবে যে নবজাগরণ কাদের হয়েছিল? কোন শ্রেণি তারা ? সেই উচ্চবর্গের উচ্চশ্রেণির মাত্র ১৩%। তাদের মধ্যে থেকে যারা কোলকাতা শহরে বাস করত তারাই ছিল এই ভদ্রবৃত্তীয় নবজাগরণের আওতায়। তাহলে খেটে খাওয়া গ্রামীণ চাষী মুসলমান কোলকাতার নবজাগরণের খোঁজ কি করে পাবে ? তারা যেমন পায় নি, তেমনি বাকি ৮৭% শুদ্ররাও পায় নি। ভৌগোলিক ও আর্থসামাজিক শ্রেণিগত কারনেই পায় নি। তাহলে ধর্মীয় অনুষঙ্গ টেনে শুধু মুসলমানদের উপর গোঁড়ামির দায় চাপিয়ে আত্মশ্লাঘা অনুভব কোন মানসিকতার প্রমান দেয় ?

সৌমিত্রঃ মুসলমানরা গোঁড়া, ধর্মান্ধ, অশিক্ষিত মেনে নিলাম। এসবের কারনে এদের নবজাগরণ হয়নি, এটাও মেনে নিলাম। উচ্চবর্ণের হিন্দু তো নবজাগরণের আলো পেয়েছে। তো সেই আলোকপ্রাপ্ত শ্রেণির মধ্যে এখনও কেন মধ্যযুগীয় কুসংস্কার কৃষ্টি চালু রয়েছে। জাতিভেদ প্রথা আজও বিলুপ্ত হয় নি। টিভি খুললেই দেখি “ব্রাহ্মন ম্যাট্রিমনি” “কায়স্থ ম্যাট্রিমনি” ইত্যাদি আলাদা আলাদা বর্ণ অনুযায়ী ম্যাট্রিমনি সাইটের অ্যাড। তাহলে কোথায় নবজাগরণ হল ? এখনও ব্রাহ্মণ্যসূচক পৈতের ব্যবহার, বিবাহিত নারীর সিঁদুর শাখা পলার বাঁধন, মাঙ্গলিক, ঠিকুজি কুষ্ঠি, অমাঙ্গলিক, অসবর্ণ বিবাহ, অস্পৃশ্যতা সহ হাজারো কুসংস্কার সমাজ জীবনে জাঁকিয়ে বসে আছে। রবিবারে পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপন দেখলেই নবজাগরণের কঙ্কালসার চিত্রটি বেরিয়ে পড়ে। এই কুসংস্কারগুলো সব ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির নামে চলছে।

সম্রাটঃ পশ্চিমবাংলার নিম্নবিত্ত মুসলমানদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়নি। তারা মোটের উপর বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক দল গুলোর ক্ষমতার বোড়ে হিসাবে কাজ করেছে। পশ্চিমবাংলার নিম্নবিত্ত মুসলমানদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন কি সম্ভব বিশেষত এমন একটি সময়ে যখন কেন্দ্রে ফ্যাসিবাদী শক্তির আস্ফালন উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে এবং ফলস্বরূপ পশ্চিমবাংলাতেও অনেকটা জাল বিছিয়ে দিয়েছে ?

সৌমিত্রঃ এ প্রসঙ্গে আমি ঘুরেফিরে মৌলানা ভাসানীর কথায় বলব। তিনি নিম্নবিত্তদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথটি বেঁছে নেন। শোষনহীন সমাজ গঠনের ভাবনা তিনি ভেবেছেন। ভাবতে পেরেছিলেন যে শোষনের জায়গা গুলো নিরসন দরকার। তুই দ্যাখ, শ্রেণি চরিত্রের বিষয়কে সামনে রাখলে এটাও বলতে হয়ে যে মালিক শ্রেণি মুসলমান হলেও সে কিন্তু মুসলমান শ্রমিককে শোষন করতে ছাড়বে না। কিন্তু শোষন ব্যপারটাই অনৈস্লামিক। ইহলৌকিক ইসলামের আদর্শ সাম্য, মৈত্রী ও ভাতৃত্ব তার কতুটুকুর রূপায়ন হয় ? হয় না। তাই বাস্তব রূপায়নের কাজটি করতে চেয়েছিলেন ভাসানী। এটাই তার রাজনৈতিক দর্শন। এবার মূল প্রশ্নে আসি। দ্যাখ, মুসলমানদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কথা বলব না। আমি যে ক্ষমতায়নের বলব সেটা গরীব মানুষের ক্ষমতায়ন। সেখানে ডোম, বাউরি, বাগদী, নিম্নবিত্ত মুসলমান সবাই থাকবে। জাতিভেদহীন অর্থনৈতিক সাম্য ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। আমি প্রবলভাবে আস্থা রাখি চিত্তরঞ্জন দাসের বেঙ্গল প্যাক্টের উপর। আজকের সময়ে  দাঁড়িয়ে কতখানি  সম্ভব জানি না। তবে মুসলমানদের মধ্যে অন্য ধারার একটি নবজাগরণ দরকার। কোন অর্থে ? আধুনিক শিক্ষার হাত ধরে সামাজিক ক্ষমতায়ন আসুক। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রও গুলোও একটু একটু করে জায়গা করে নেওয়া উচিৎ। সার্বিকভাবে সাংস্কৃতিক চেতনা আসুক। এই যেমন তোরা এক ঝাঁক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী মিলে সহজিয়া ঈদ সংখ্যা বের করছিস, এই কাজ গুলো আরও বেশি বেশি করে হওয়া উচিৎ। নিজেদের কথা নিজেরাই বল। অন্যের উপর ভরসা করতে গেলেই গোলমাল।

সম্রাটঃ মুসলমানদের নবজাগরণ বলতে গেলে অপার বাংলার ১৯২০র দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে শিক্ষিত মুসলমান তরুণ যেমন কাজি আব্দুল ওদুদ, মোতাহার হোসেন প্রমুখের যে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন সেরকম কিছুর আশা কি এপার বাংলার মুসলমানদের মধ্যে দেখার ইঙ্গিত পাচ্ছেন ?

সৌমিত্রঃ আমি সরাসরি তুলনাতে যাব না। সেই সময়ে তাদের মনে হয়েছিল চিন্তার মুক্তি দরকার। এগোনো দরকার। সেই তাগিদের কিছুটা খুব সম্প্রতি শিক্ষিত মুসলমান তরুণদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। মুক্তি যুদ্ধের পরেও একাধিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে অধুনা বাংলাদেশ।

সম্রাটঃ এখন আপনি মৌলানা ভাসানীকে নিয়ে কাজ করছেন। বামপন্থাকে মৌলানা ভাসানী একটা সময় লোকালাইজ করে আপন মাটির করে নিতে পেরেছিলেন। যেকারনে তাঁকে লাল মৌলানা বলা হয়। মৌলানা ভাসানীকে নিয়ে নতুন করে চর্চা কি বিকল্প রাজনৈতিক ভাবনার পথ খুলে দিতে পারে ? বাস্তবতা কত খানি ?

সৌমিত্রঃ দ্যাখ, একটা পরিস্কার কথা বলি। বামপন্থার নামে বাংলায় এক ধরনের সুপ্ত ব্রাহ্মণ্যবাদী চর্চা চলে এসেছে এতদিন। গত ৩৪ বছরে তফশিলীরা প্রথম সারির নেতা হিসাবে উঠেই এল না এটা ভাবতেই অবাক লাগে। আপাত অদৃশ্য জাতিবৈষম্য তো কাজ করেছেই। তাঁরা বাংলার জয়গান করেছেন কিন্তু নিজের ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িয়েছেন। বাংলার মানুষ তো এগুলো দেখেছে। এই কথা গুলোও অস্বীকার করে লাভ নেই। যে হায়ারার্কি তারা তৈরি করেছে তার  ফলস্বরূপ বড়সংখ্যক মানুষকে দেখেনি। ফলে জনসংযোগ হারিয়েছে। মৌলানা ভাসানী যে বামপন্থায় আস্থাশীল ছিলেন সেখানে ব্রাহ্মণ্যবাদের কোন জায়গা করে নিতে পারত না।

সম্রাটঃ লাল মৌলানার রাজনৈতিক দর্শনের কোন দিকটা বাংলায় বামপন্থাকে বামপন্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারে। একজন ঠোঁটকাটা বামপন্থী হিসাবে কিভাবে দেখছেন বিষয়টি ?

সৌমিত্রঃ বামপন্থা বলতে আমি বুঝি প্রো-পিপল এজেন্ডা। জনসাধারণের স্বাধিকার অর্জন, মৌলিক চিন্তা চেতনার পরাকাষ্ঠা তৈরি ও তাদের মৌলিক চাহিদার বিষয়গুলি রক্ষা করার দায়িত্ব বামপন্থার। জনসাধারণের শোষিত অংশের হাতে নেতৃত্ব দিয়ে সাম্যবাদী সমাজ গড়াই তার লক্ষ্য। লাল মৌলানার আদর্শ তো এটাই ছিল। সাম্য মৈত্রী ভালবাসার আদর্শ। তিনি দুটি কথা বলতেন – জালিম ও মজলুম। যারা শোষক তারা জালিম। এই জালিমদের বিরুদ্ধেই ছিল তাঁর সংগ্রাম। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী। এখন যেমন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে জায়গা আমাদের বর্তমান সরকার। মৌলনা ভাসানী তো ৫০ এর দশকে এই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গলা তুলেছিলেন। জল-জঙ্গল-জমিনের অধিকারও ছিলা তাঁর অন্যতম ভাবনার বিষয়। হালের পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে তুই মৌলানা  ভাসানীর ভাবনাকে আলাদা করতে পারবি না।

সম্রাটঃ মুসলিম শ্রমিক তো মুসলিম মালিক দ্বারা শোষিত হয়। মালিক কি শ্রেণিচরিত্র ব্যতিরেকে চলতে পারবে ? ভাসানির আদর্শ কী বলে ?

সৌমিত্রঃ আমার মনে হয় পারবে না। মৌলানা ভাসানীর ভাষায় এরাই জালিম। জালিমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছিল তার জীবনাদর্শ। এমনকি ধর্মব্যবসায়ী জলসাজীবি মৌলানাদের বিরুদ্ধেও তিনি তোপ দেগেছেন বহুবার। মৌলানা ভাসানী ভীষনভাবে ছিলেন মাটির কাছাকাছি। মানুষের হাত ছাড়েননি। তিনি স্লোগান ব্যবহার করতেন — “মালিক পাবে শ্রমিক পাবে না, তা হবে না, তা হবে না; বা, “তুমি খাবে, আমি খাব না, তা হবে না, তা হবে না”। এই কথা গুলো মজদুর মানুষ নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারত।

সম্রাটঃ এখন যাঁরা বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা কি এই মেঠো ভাষার দম বুঝতে পারছেন না ? কঠিন ভাষায় তত্ত্ব কপচে লাভ কী ?

সৌমিত্রঃ বামপন্থীদের সবথেকে বড় শক্তি হতে পারে জনসাধারণ। গরীব মানুষ। এটাও ঠিক যে ভাসানীর সময়ে গরীবের জীবনযাপন আর এখন গরীব মানুষের জীবনযাপনে অনেক তফাৎ। গরীব মানুষের মধ্যে বিপরীত মুখী স্বার্থ ঢুকে গেছে, সুবিধাবাদ ঢুকে গেছে, বিভ্রান্তি ঢুকে গেছে, জীবনযাপনে জটিলতা এসেছে। তবুও শেষ বিচারে সে গরীব মানুষ। মানে শোষিত শ্রেণি। মৌলনা ভাসানীর মত কেউ যদি রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধে উঠে গরীব মানুষকে একত্রিত করে নেতৃত্ব দেয় তবে নিশ্চয় আশার আলো আছে।

সম্রাটঃ নিম্নবিত্ত মুসলমান ও তফশিলীদের একত্রিক করার জন্য বহুজনবাদী ধারার একটা অবকাশ আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই ধারা দেশভাগের পর উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্রের মত রাজ্যগুলোতে বিদ্যমান থাকলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পশ্চিমবাংলাতে দেখতে পায়নি। মূলনিবাসী ঐক্যের বহুজনবাদী ধারা পশ্চিমবাংলায় মাটিতে জায়গা করে নিতে পারবে কি ?

সৌমিত্রঃ অবশ্যই ভবিষ্যত আছে। নিরাশ হলে চলবে না। এই যে তোরা বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ  করছিস, এর মাধ্যমে তোরা তো মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছিস। অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছিস। এই কাজটা যে পশ্চিমবঙ্গে মহীরুহ আকার নেবে না কে বলতে পারে। দ্যাখ, রাজনীতিটা করতে হবে। স্বার্থহীন সঠিক রাজনীতি ষ্ট্যাটাস ক্যু বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এটা আমি মানি। গান্ধীজি চোখ বুঝে সবথেকে গরীব মানুষটির কথা ভাবতেন, ভাবতেন কি করলে তার উপকার হবে। পথ খুঁজেও পেতেন। এইভাবে ছোট ছোট করে ভাবতে হবে। জানি কাজটা কঠিন, খুবই কঠিন, তবে অসম্ভব না। আলাদা আলাদা স্বার্থ নিয়ে নয়, যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সদিচ্ছা থাকলে নিশ্চয় উপায় বেরিয়ে আসবে। 

সম্রাটঃ এখন আপনার আসামে এনআরসি ও ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে তথ্যচিত্রের কাজটি রিলিজ করার মুখে। এই কাজটি সময়ের দাবি মেনেই ?

সৌমিত্রঃ একদমই। এই যে এনআরসি, ক্যা এইগুলো তো পুঁজিনিবিড় প্রকল্প। সস্তার শ্রমিক বানানোর প্রজেক্ট। এর বলি শ্রমজীবি মুসলমান ও তফশিলীরা। আসামের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়।  ফ্যাসিবাদী শক্তির হাতে পুঁজি রয়েছে, মূলধারার গনমাধ্যম রয়েছে, হিউজ রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। এই মহাশক্তির বিপরীতে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে কারা ? মুসলমান। এটা পরিস্কার করে মাথায় ঢুকিয়ে নিতে হবে। এই জায়গায় যিনি পাকিস্তান-বাংলাদেশ টেনে তুলনামূলক মৌলবাদের বুলি আওড়ান তিনি আসলে নিজের সাম্প্রদায়িক মানসিকতারই প্রকাশ ঘটান। একটা শক্তিহীন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এত বিশাল অন্যায় হচ্ছে সেই জায়গায় আমি কি করে চুপ থাকি!  তাই আমার তথ্যচিত্রের মাধ্যমে কড়া প্রশ্ন গুলি তুলে ধরার চেষ্টা। অবশ্যই এটা সময়ের দাবি, বিবেকেরও দাবি।

সম্রাটঃ তাহলে কি বলতে পারি আসামের ডিটেনশন ক্যাম্প সংক্রান্ত তথ্যচিত্রটি ফ্যাসিবাদ বিরোধীতায় আগের তথ্যচিত্র গুলোর থেকেও কড়া হবে ?

সৌমিত্রঃ ফ্যাসিবাদ কিন্তু দিন দিন জনজীবন গ্রাস করছে। যেমন গুজরাট ছিল একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর উপর পরিকল্পিত আক্রমনের রাজনৈতিক পরীক্ষাগার, আসামও এ অন্যথা নয়। এক্ষেত্রেও একটি ভাষিক ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর উপর আঘাত। আসামে যাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওতা হয়েছে তারা হয় নিম্নবর্ণের হিন্দু বা শ্রমজীবী মুসলমান। তাদের ভাষা বাংলা এবং  তারা টুপি পরে, দাড়ি রাখে বলেই বিদেশী বলে ঠেলে দিতে হবে এটা কোন যুক্তি হতে পারে না। আসামের পর পশ্চিমবাংলায় এনআরসির কথা অমিত শাহ যখন ঘোষনা করেন তখন কিছু বামপন্থীও বলতে থাকেন যে, “আসামের ক্ষেত্রে তবুও কিছু যুক্তি ছিল, কিন্তু বাংলায়…”। “যুক্তি ছিল” মানে ? কিসের যুক্তি ? ফ্যাসিবাদী এজেন্ডার কোন যুক্তি হয় না। এসব বলেটলে এরা ফ্যাসিবাদের হাতকেই শক্ত করছে। গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে ফ্যাসিবাদের যে দানবীয় চেহারা দেখা যাচ্ছে আসামের ডিটেনশন ক্যাম্প তারই একটি অংশ। কিন্তু ফ্যাসিবাদের কথায় শেষ কথা নয়। আমার তথ্যচিত্রটি এখনও শেষ হয়নি।  ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বহু প্রশ্ন রেখে যাবে আমার আগামী তথ্যচিত্রটি। এটুকু বলতে পারি।

সম্রাটঃ ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী ? পাঠাকদের জানান।সৌমিত্রঃ প্রান্তিক মানুষদের কথায় বলে যাব। লিখে যাব। শরীরে যতদিন ক্ষমতা রয়েছে ক্যামেরা নিয়ে ছুটে যাব তাদের কথা তুলে ধরতে। জীবন বাজি রেখে যেমন গুজরাট ছুটে গেছিলাম ভবিষ্যতেও তার অন্যথা হবে। প্রশ্ন গুলো করে যাব, করেই যাব, সে যতই শাসকের অপ্রিয় হোক।

Website | + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *