কার্ফুর চিঠি-১

অরিত্র সোম

কখনও খুব বড়ো হয়ে গেলে, হাঁটতে বেরবো। গাড়ি-ঘোড়া থাকবে না;  একটা বিচ্ছু কাক শুধু এক কার্নিশ থেকে আরেকটায় উড়ে এসে বসবে। ওর মুখে জমে আছে খড়। সেখানেই বাসা বাঁধবে। ওকে দেখে মায়ের কথা মনে পড়ছে। কাকটা বোধহয় বুঝতে পারল; প্রাণীদের অনুভূতি আমার থেকে অনেক বেশি। তারপর, হারিয়ে গেল…

আমার রাস্তায় একটা ছোট্ট মেয়ে পুতুল হাতে বসে থাকে। দেখতে শুনতেই বড়ো হয়েছে, বোঝে না কিচ্ছুটি। ওর হাতে একটা প্রজাপতি এসে বসেছে। এদিকে মেয়েটা কাঁদছে। আমার বোন নেই, প্রেমিকাও নেই। একটা অদ্ভুত শহরে বসে আমি কাটাকুটি খেলছি। এমন সময় মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ঘন কালো ওই চোখ ভিজে গেছে। দিব্যি বুঝতে পারছি সোঁদা মাটির স্বাদ। আমি কী বলব এবার? জীবন এখানে কাঠামোটুকুই বাকি রেখেছে। ম্যাটাডোর থেকে কখন নেমে গেছে মূর্তি। এতক্ষণে বাতিল আধুলি কুড়িয়ে ছেলেগুলো চলেও গেছে…

মেয়েটার মুখে ছায়া পড়েছে চুলের। সেসব সরিয়ে দিতে গেলেই, প্রজাপতি উড়ে যায়। ওরা এবার অন্য বাসা দেখবে। মেয়েটার হাতে আমার একমাত্র রুমাল। ওকে কী বলে ডাকব? মেঘ সরে আকাশে এখন একফালি চাঁদ, গোলাপি। মেয়েটা হেসে হেসে চলে গেল পুকুরের দিকে। জল ক্রমশ সবুজ হচ্ছে। ওকে আটকানো উচিত নয় এখন।

কাকটাকে খুঁজব বলে কার্নিশে দাঁড়িয়েছি। আমার মুখে তিন চারটে খড় রাখা। মাথায় কে যেন হাত বোলাচ্ছে। এই হাত আমি জন্ম থেকে চিনে আসছি। এসব কি সত্যি? আমি আর উঠব না এখন; ওই জীবনে ফিরতে চাইনা আর। এখানেই মেয়েটাকে খুঁজব আমি। এখানেই…

একটা ঘুঘু সমানে ডেকে চলেছে ঘুলঘুলিতে…

Website | + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *