অশোক মুখোপাধ্যায়
মাননীয় শ্রীধর পানিক্কর সোমনাথ সমীপেষু,
ইসরো দপ্তর, শ্রীহরিকোটা।
মহাশয়,
আপনার প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশন (সংক্ষেপে ISRO) গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ভারতীয় সময় বেলা ১১-৫০-এ সফল ভাবে সূর্যের উদ্দেশ্যে একটি মহাকাশযান আদিত্য-এল১ উৎক্ষেপন করেছে। আমরা আন্তরিক ভাবে আশা করি, এর যাত্রা শুভ, সফল এবং উদ্দেশ্যমণ্ডিত হবে। গত ২৩ আগস্ট ২০২৩ চন্দ্রযানের চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণের পরে পরেই, একেবারে দশ দিনের মধ্যেই, যেভাবে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে এই উৎক্ষেপন ঘটানো হল, আমাদের মতো সন্দেহ বাতিকগ্রস্তদের মনে কিছু কুচক্কুরে প্রশ্ন জেগে উঠেছে। সেগুলো এই পত্রে একে একে উত্থাপন করছি। আপনার দরবারে বাংলায় লেখা এই চিঠি পৌঁছবে, আপনি বা আপনার দপ্তরের অফিসাররা অনুবাদ করে এটা পড়বেন, পড়ে ভাবনাচিন্তা করে বা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিয়ে প্রতিটি প্রশ্নের ধরে ধরে উত্তর দেবেন – এরকম কোনো প্রত্যাশাই আমার নেই। নিতান্তই একটা পত্রিকা মাধ্যমে পরিচিত দুচারজন পাঠকের মধ্যে একটা বার্তা পৌছানো এবং তাকে ভিত্তি করে খানিক আলাপ আলোচনা আমোদ রসিকতা করার অত্যন্ত সীমিত লক্ষ্য নিয়ে এই চিঠি রচনা। তার মধ্য দিয়েই যদি কিছু বৈজ্ঞানিক সত্য সাধারণ পাঠকের দরবারে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলেই এর সার্থকতা।
যে প্রশ্নগুলো আপাতত আমাদের বিব্রত করছে সেগুলি এই রকম:
☻) প্রথমেই একটা সন্দেহ দানা বাঁধছে যে, এই দুনম্বর অভিযান কি আগে থেকেই কোনো পূর্ব পরিকল্পনার অঙ্গ ছিল? চাঁদের পরেই সূর্য? দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিগত কয়েক মাস ধরে দেশের প্রতিটি জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভয়ঙ্কর দৃষ্টিকটু উদাসীনতা এবং পাশাপাশি নানা রকম ফালতু মুদ্দায় তাঁর অতিরকম সক্রিয়তা ও ব্যস্ততা এই সন্দেহকে প্রকট করে তুলেছে। তিনি আজকাল এমন একটা ভাব দেখাচ্ছেন যে ইসরো প্রতিষ্ঠা থেকে বিক্রমের চাঁদে ঘুরে বেড়ানো পর্যন্ত সব কিছুই তাঁর ঘন ঘন রুমাল নাড়ার ফলে হয়ে চলেছে। আপনাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কাজকর্মের সঙ্গে সরকারি প্রধানের এই রাজনৈতিক স্টান্টবাজির কোনো রকম সম্পর্ক নেই বলে ভাবতে পারতাম, যদি ঠিক এর পরের প্রশ্নটা পেছন পেছন না উঠত।
☻) এই অভিযানের প্রাক্কালে আপনারা জানিয়েছেন, আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী নক্ষত্র সূর্য সম্পর্কে নানা রকম এ পর্যন্ত অজানা নতুন তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যেই নাকি আপনাদের এই নবতর পরিকল্পনা। মুশকিল হল, এই মাস কয়েক আগে, ২৫ মে ২০২৩, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উজ্জয়িনীর মহর্ষি পাণিনি সংস্কৃত ও বৈদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে যোগদান করে সেখানে আপনি প্রধান অতিথির ভাষণে জানিয়েছিলেন, প্রাচীন ভারতে ঋগবেদ থেকে শুরু করে সূর্যসিদ্ধান্তেই নাকি আধুনিক বিজ্ঞানের সমস্ত খবর সঞ্চিত ছিল। পশ্চিমের লোকেরা আরবদের মাধ্যমে সেগুলো ভারত থেকে চুরি করে নিয়ে গিয়ে ওদের বিজ্ঞানটা বানিয়েছে। নিজেদের নামে চালিয়েছে। এখন সারা দুনিয়া সেগুলো ওদের আবিষ্কার বলেই জানে। তাহলে চাঁদে সফল অভিযানের পরে কী এমন ঘটল যে, আপনার নিজের বলা সেই কথাগুলি ভুলে গিয়ে আপনারই প্রতিষ্ঠান আবার একটা সূর্য অভিযান সংগঠিত করতে গেল? নতুন তথ্য জানতে? কিংবা, আপনি কি সেখানে ভুল বকেছিলেন বলে নিজেও জানেন?
আপনাদের এই গুণীজন সমৃদ্ধ স্পেস সেন্টারের মতে বৈদিক ঋষিরা কি তবে সব কিছু বলে যেতে পারেননি? অনেক কিছু এখনও আমাদের জানতে বাকি থেকে গেছে? আচ্ছা, স্যর, পরে এমন হবে না তো, আপনারা এখন আদিত্য যান পাঠিয়ে যা কিছু নতুন খবর জানবেন, ভবিষ্যতে এই দেশেরই অন্য এক প্রজন্ম এসে (আপনারই প্রদর্শিত মার্গ অনুসরণ করে) বলতে থাকবে, এই সবই বেদে পুরাণে ছিল, সেইগুলিই সোমনাথরা টুকে নিয়ে এক কালে নিজেদের অভিযান প্রাপ্ত তথ্য হিসাবে চালিয়েছে আর বাজারে নাম কিনেছে?
☻) এই গভীর আশঙ্কা থেকেই বলছি, স্যর, আপনারা এবারে বা এর পর থেকে যা কিছু জানবেন, সেগুলি আর অনুগ্রহ করে বৈদিক ঋষিদের মতো খোলা অবস্থায় লিখে বা মুখস্থ করেই ফেলে রাখবেন না। প্রেস বিবৃতি দিয়ে এবং/অথবা বিজ্ঞানের জার্নালে পাঠিয়েও নিশ্চিন্তে শান্ত হয়ে বসে থাকবেন না। আমার বিনীত পরামর্শ হল, এই অভিযান থেকে যা কিছু তথ্য সংগ্রহ করবেন, সব কিছু পদ্ম সরকারের থেকে পেটেন্ট নিয়ে ভীষণ পাকা দলিল তৈরি করে রাখবেন। আপনি নিশ্চয়ই (নিজেকে দিয়েই) জানেন, “সবই ব্যাদে আছে” লবি আমাদের দেশে কতটা শক্তিশালী! দিন কাল তো ভালো নয় স্যর।
☻) পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হচ্ছে ১৫,০৯,৪০,০০০ কিলোমিটার। কথায় লিখলে এটা এরকম দাঁড়াবে – পনেরো কোটি নয় লক্ষ চল্লিশ হাজার কিমি। আপনারা যে মহাকাশযান পাঠালেন সে যাবে পনেরো লক্ষ কিমি দূর পর্যন্ত; অর্থাৎ, পৃথিবী থেকে সূর্যের মোট দূরত্বের মাত্র এক শতাংশ। সেখানে থেকেই সে সূর্যকে আবর্তন করে ঘুরবে/শূন্যে ঝুলে থাকবে এবং আপনাদের তথ্য পাঠাতে থাকবে। আপনারা কী করে আশা করছেন, এইটুকু মাত্র দূরত্ব পাড়ি দিয়েই ৯৯ শতাংশ দূর থেকে আপনারা সূর্য সম্পর্কে এমন কিছু নতুন তথ্য জানতে পারবেন, যা এর আগে আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়ন বা অন্য কোনো দেশের স্পেস প্রকল্পের তরফে আদৌ জানা যায়নি? আর তাই যদি হয়, এবারে ৪০০ কোটি টাকা স্রেফ জলে, থুরি, আদিত্যের তেজে ভাসিয়ে দেওয়া হল না? আর, সূর্যের এর চাইতে কাছে যে যাওয়া সম্ভব নয়, সূর্য যে চাঁদের মতো নিরীহ “গ্রহ” নয়, সে যে সদাই “কুপিত” হয়ে থাকে, সে সব আমরা জানি বলেই আরও দূরে কেন যাচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন এখানে তুলছি না। পৃথিবীতে ক্ষুধার সূচকে ১০৭ নম্বর দেশ হিসাবে (এবং আশা করা যায়, এক দেশ এক ভোটের গান সফল হলে এই তালিকায় আমাদের অবস্থান নিশ্চিত ভাবে আরও নিম্নগামী হতে পারবে), এই টাকায় অনেকগুলি তথাকথিত জনমুখী প্রকল্প সফল হতে পারত, যার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার টাকার অভাবের কথা বলে অর্থ বরাদ্দ করতে পারছে না। এই টাকা যদি আপনারা নিজস্ব বাণিজ্যিক উপায়ে রোজগারও করে থাকেন, এটা আপনারা সরকারের হাতে তুলে দিয়ে বলতে পারতেন, “যাও বৎস, কটা ক্ষুধিত মুখে অন্ন তুলে দাও। পুণ্য হবে।”
☻) আপনি পূজাপাঠে বিশ্বাস করেন, চন্দ্র এবং সূর্য – দুই অভিযানের আগেই আপনি দলবল নিয়ে তিরুপতির মন্দিরে গিয়ে বেশ ভক্তি ভরে পুজো দিয়ে এসেছেন। দেশের আদি শাস্ত্রেও আপনার নাকি অগাধ ভক্তি। তা এখন এই যে মহাকাশযান পাঠালেন, এ কি সূর্যকে বৈদিক ঋষিদের কথা মতো “গ্রহ” বলে ধরে নিয়ে রওনা দিল? নাকি পশ্চিমা বিজ্ঞানী দের বয়ান মাফিক তাকে নক্ষত্র বলে মেনে নিল? চাঁদ সম্পর্কেই বা আপনার অফিসের মূল্যায়ন এখন কী? গ্রহ না উপগ্রহ? সেটা কোন সিদ্ধান্ত মতে? নিজেদের মধ্যেও কি আপনারা কখনও অসরকারি ভাবে এরকম আলোচনা করেছেন, যে বেদ পুরাণে জ্যোতিষে চাঁদ বা সূর্য সম্পর্কে যে ধারণা দেওয়া আছে তা ভুল? ক্লদিয়াস তলেমির প্রদত্ত ভ্রান্ত বয়ানের সঙ্গেই যার মিল। পশ্চিমে নিকলাস কোপারনিকাস থেকে যে নতুন আকাশপাঠ শুরু হল, সেই অনুযায়ী তলেমির সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় প্রাচীন জ্যোতিষ শাস্ত্রের সিদ্ধান্তগুলিও ভুল বলেই ধরতে হবে। হ্যাঁ, আমরা জানি, এরকম আলোচনা করা আপনাদের পক্ষে খুব অসুবিধাজনক। আপনি উজ্জয়িনীতে যা কিছু বলে এসেছেন, সেগুলো সব গাল গল্প বলে ফেরত নিতে হবে এবং পাবলিক প্রেসকে জানাতে হবে সে কথা। আপনি যে চেয়ারে বসে আছেন, বলার আগে ভেবে নিলে ভালো হত। বলার পরে বলটা সম্পূর্ণই হাতছাড়া হয়ে গেছে।
☻) উপরের প্রশ্নটা নেহাত ছেলেমানুষি ঠাট্টা তামাসার জন্য করছি না। সূর্যের উদ্দেশে রওনা হওয়া আদিত্য-এল১ নামক মহাকাশযানের যাত্রাপথটি নিয়েও নিশ্চয়ই আপনি ভেবেছেন। আপনি অবশ্যই জানেন, পৃথিবীর চার দিকে সূর্য ভ্রমণশীল হলে এই যাত্রাপথ যেরকম হবে, সূর্যের চারদিকে পৃথিবী আবর্তমান হলে সেটা তার থেকে অন্য রকম হবে। মহাকর্ষ ক্ষেত্রগুলি দুই জায়গায় ভিন্ন রকম হওয়ার জন্যই এই পার্থক্য হতে বাধ্য। আপনাদের প্রদত্ত বিবৃতি ও ছবিটবি দেখে যদ্দুর মনে হচ্ছে, আপনারা বৈদিক ঋষিদের মন্ত্রটন্ত্র অবজ্ঞা করে পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের কথায় বিশ্বাস করেই এই মহাকাশযান উৎক্ষেপন করেছেন। এতে কী সব নিউটন অয়লার লাগ্রাঞ্জ প্রমুখ ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের কথায় নাচানাচি করছেন। মহাশূন্যে এল-১ নামক কোনো এক লাগ্রাঞ্জ বিন্দুই নাকি আপনাদের লক্ষ্য। সেই জন্যই আদিত্যর নামেও এল-১ বসানো হয়েছে বুঝি! এবার কি তাহলে আপনি পাণিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা বলে এসেছিলেন, সেগুলি ফেরত নেবেন? নাকি, ভাষণ দেবার সময় সেই সব গুলতাপ্তিই চালিয়ে যাবেন, আর রকেট নিয়ে কাজ করার সময় পশ্চিমি বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে চলবেন?
☻) আপনাদের মধ্যে যাঁরা বিজ্ঞান এবং গণিত এক আধটু বোঝেন, তাঁদের জন্য জানিয়ে রাখি, শুধু সূর্য আর পৃথিবীকে ধরলে কে কার চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করছে, মহাশূন্যের জ্যামিতি বা পদার্থবিজ্ঞানের দিক থেকে এতে খুব বেশি ইতরবিশেষ হয় না। আপেক্ষিকতার নিয়মে দুই ক্ষেত্রেই মূল ঘটনাবলির ছবি একই রকম থাকে। কিন্তু যেই আপনি একটি তৃতীয় পক্ষকে ঢোকাবেন (এখানে আপনাদের প্রেরিত মহাকাশযান), ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে যাবে। লাগ্রাঞ্জের গোটা কাজটাই তো এই নিয়ে, তাই না! তখন ভূকেন্দ্রিক মডেলে মহাকাশযানের যাত্রাপথ যেমন হতে পারত, সূর্যকেন্দ্রিক মডেলে আর সেরকম হবে না। আবার কোথায় তাকে স্থাপন করবেন, সেই বিন্দুটাও দুই মডেলে দুরকম হয়ে যাবে। সেই জন্যই এই জানতে চাওয়া। আপনারা যদি লাগ্রাঞ্জের বিদ্যাই গ্রহণ করে থাকেন, মনে হচ্ছে সেটাই করেছেন, তার মানে হল, আপনারা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার প্রচারিত ও বহুল বিজ্ঞাপিত তথাকথিত “ভারতীয় জ্ঞানতন্ত্র”-কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছেন। কিন্তু করেছেন যে, তা কি সোচ্চারে স্বীকার করবেন, নাকি, চেপে রেখে বৈদিক প্রচারকাণ্ডই চালিয়ে যাবেন? তাতে প্রচার এবং কাজের মধ্যে দ্বিচারিতা থাকলেও বোধ হয় আপনাদের বৈজ্ঞানিক বিবেকে কোনো খচখচানি হবে না!
☻) এইবার আরও একটা সমস্যার কথা উত্থাপন করছি। সূর্যযান তো অনেকটা সময় নেবে আকাশে পরিভ্রমণ করার কালে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে। সেই সময়ের মধ্যে সূর্যগ্রহণ যদি নাও হয়, একটা না একটা চন্দ্রগ্রহণ তো হবেই। ভারতীয় সনাতন শাস্ত্র মতে (যাকে পদ্ম সরকার বাহাদুর ভারতীয় জ্ঞানতন্ত্র বলে মহিমান্বিত করে চলেছেন) তখন হয় রাহু নয়ত কেতু চাঁদকে খেয়ে ফেলবে। এদিকে আদিত্য এল-১ পৃথিবী থেকে অনেকটা দূরে চলে যাওয়ার দরুন সেই ভোজন কাণ্ড দেখতে বা ছবি তুলতেও পারবে না। আর একটা সূর্যগ্রহণ হয়ে গেলে তো আর কথাই নেই। আপনাদের ইসরো দপ্তর তখন রাহু বা কেতুর ব্যাপারটা কীভাবে সামলাবে? শাস্ত্রের রাহু কেতুর ব্যাপারটা যে পুরোটাই মিথলজির ব্যাপার, বিশ্বের যথার্থ জ্ঞানতন্ত্রের সঙ্গে এর যে কিছু মাত্র সংযোগ নেই, এটা কি আপনারা তখন ঘোষণা করবেন? নাকি, বাণী-দুয়ারে খিল এঁটে বসে থাকবেন? হ্যাঁ, আমরা এটা বুঝি, পদ্ম সরকার যদি তথাকথিত ভারতীয় জ্ঞানতন্ত্রের ফাটা ঢাক পেটাবার আগে আপনাদের সঙ্গে কথা বলে নিত, তাহলে হয়ত ভালো হত। এখন আপনাদের এই বিড়ম্বনায় পড়তে হত না। কিন্তু পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে এবার আপনাদের রাহু ও কেতু সম্পর্কে একটা দৃঢ় অবস্থান নিতেই হবে। এর ফলে সেই দাড়িওয়ালা অলরাউন্ডারের পক্ষে সনাতন শাস্ত্রের ঢাক বাজানোতে কিঞ্চিত রসভঙ্গ হবে ঠিকই।
কিন্তু কী আর করা!
☻) আপনার সংস্থায় এবং আপনার ব্যক্তিগত জীবন চর্যায় যদি এখন বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির চর্চার রেশ দেখতে পেতাম, তাহলে দেশের বর্তমান সঙ্কটজনক মুহূর্তে আপনাদের কাছে আমাদের অনেক কিছু চাইবার, দাবি করবার ছিল। প্রাচীন ভারতের প্রকৃত বিজ্ঞানের বিকাশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরা, এক দীর্ঘকালীন সময়ে – শঙ্করাচার্যের সময়কাল থেকে – ভারতে বিজ্ঞানের চর্চায় অধঃপতনের দুঃখজনক কাহিনি, উনিশ শতকের নবজাগরণের কাল থেকে আবার নতুন করে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের বিকাশের গল্প – আমরা চাইতাম, আপনারা এইগুলি দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। কিন্তু বুঝতে পারছি, আপাতত সে হবার নয়।
☻) ভালো থাকবেন। নিশ্চিন্ত থাকবেন। পদ্মরাজ তাঁর বানিয়া দোস্তদের রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক লুট করা অর্থের বিনিময়ে গণমাধ্যমে আমাদের এই সব বেয়াড়া প্রশ্নের হাত থেকে আপনাকে এবং আপনাদের দপ্তরকে বাঁচানোর জন্য জান লড়িয়ে দেবে। সাংবাদিকদের বলা হবে, তারা যেন প্রয়োজনে কলমি শাকের উপকারিতা কিংবা দাদ হাজা-র গণ সংক্রমণ নিয়ে খবরের কাগজের পাতা অথবা টিভি চ্যানেলের বিতর্ক ভরিয়ে ফেলে। যাতে কেউ রাহু কেতু নিয়ে টুঁ শব্দটিও করতে না পারে। সেই অবকাশে আপনারা বরং ২০২৩-এর ডিসেম্বরের মধ্যে একটা মঙ্গল যাত্রা ঘটানো যায় কিনা ভেবে দেখবেন। সূর্যের তুলনায় মঙ্গলের দূরত্ব বেশ কম। চাঁদের উপর শিবশক্তি মহাকাশ স্টেশনে নেমে দুদিন বিশ্রাম নিয়েও পাঠানো যেতে পারে। এতে এক দেশ এক ইসরো এক ভোট গাওনায় দারুণ সুবিধা হবে! আমরাও আশায় মুখিয়ে থাকব। কালে দিনে, অবসর গ্রহণের পর – বলা তো যায় না – আপনাদের কারও কারও কাঙ্ক্ষিত উচ্চতর ট্যাগ জুটে যেতে পারে। মহামান্য গগৈ মহোদয়ের পদ রেখা ধরেই।
শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা সহ –
নিবেদক ইতি