খালিদা খানুম
বিরাট ষাঁড়া লড়াই প্রতিযোগিতা।
স্থান – তিলাবাইদ মাঠ।
সময় – কালীপূজার আগের দিন দোফরবেলা।
প্রথম পুরস্কার – পনেরো কেজি মিনিকিট চাল বা দুটো দুই কিলো রুইমাছ।
দ্বিতীয় পুরস্কার – দশ কিলো মিনিকিট চাল বা একটি দুই কিলো ওজনের রুই মাছ।
তৃতীয় পুরস্কার – পাঁচ কিলো মিনিকিট চাল বা ২০টা হাঁসের ডিম।
এছাড়াও থাকছে সান্ত্বনা পুরস্কার। সান্ত্বনা পুরস্কার হিসাবে থাকবে দুই কিলো চাল বা একটা পোল্ট্রি মুরগি।
দেরি করবেন না। ষাঁড়া লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করুন।
সাঁতুরি বাসস্ট্যান্ডে মন দিয়ে পোস্টারটা দেখছিল সহদেব টুডু। কালীপূজা আর বেশি দেরি নেই। এবার দু-দুটো মোরগ তৈরি করেছে সে এই ষাঁড়া লড়াইয়ের জন্য। গতবার লাল মোরগটা প্রথমেই চোট খেয়ে হেরে গিয়েছিল। তারপর সারা সিজিনে মোরগটা বসেই ছিল, কোনোভাবেই আর কোনো লড়াইয়ে লড়াতে পারল না। রক্ত খলবল করে উঠত লড়াকু মোরগগুলো দেখে, কিন্তু ঝিম ধরে থাকা মোরগটাকে লড়াইয়ে নামাবে কী করে! মোরগটা যেন নিজেও হারটা মেনে নিতে পারেনি।
-চাকুতে শালারা বিষ মাখাঞ রাখে, ইকবার চোট খ্যাঙয়ে সারা সিজিনে ষাঁড়া শ্যাষ। নীল হয়েঞ, ফুল্যে গেল ছেলো বুক প্যাট। শালা ওই জগা…! উয়ারা উঠতি ছ্যালা। জীব-পেরানের দরদখান বুঝবেক লাই। কেবল টাকার লেশা। এবার দেখাই দিবো কতখান দম। হামি সহদেব টুডু। লুকে বুলে সিম-সহদেব।
সিম মানে সাঁওতালি ভাষায় মুরগি। একপাল মুরগি আছে সহদেবের বাড়িতে। তারমধ্যে রাজা হল লড়াইয়ের মোরগগুলো, সন্তানের মতো আদর যত্ন তাদের। আগের বছরের কথাগুলো মনে মনে আওড়াচ্ছিল সহদেব আর সাইকেলে প্যাডেল করছিল জোর কদমে। ঢেউ খেলানো রাস্তা। নামতে যত সহজ, উঠতে তত কষ্ট। মোড় থেকে দশ কিলোমিটার রাস্তা। সিধা রাস্তা হলে সহদেবের কাছে কিছুই না। কিন্তু চড়াই উতরাই রাস্তাতে সময় লেগে যায়। গুমোট ভাব আছে বলে আরও দম খাচ্ছে।
আকাশের দিকে তাকাই সহদেব। মেঘ জমে আছে মনে হয়।
-বৃষ্টি হবেক লাকি! হে ঠাকুর, বহালের ধান গুলান মাঠে আছে এখুনো, তুমি দেখো।
কুলাই গ্রামে বেশিরভাগ সাঁওতাল জনগোষ্ঠীদের বাস। কুলাই নিচ কুলির শেষ প্রান্তে সহদেব টুডুর ঘর। নিচ কুলির দিকে সাঁওতাল বসতি। কুলাই উপর কুলির দিকে নাপিত পরামানিক আর কয়েক ঘর সাউ। সাউদের আদি বাড়ি বিহার। ভাগ্যান্বেষণ এসে এখানেই থিতু হয়েছে তারা কয়েকপুরুষ ধরে। কুলাই-এর পাশের গ্রাম মাটিদুদরা, সেখানে কিছু ঘর মুসলিমদের বাস। বিহারের মুজফফরপুর তাদের উৎস।
কুলাই গ্রামে শীত পড়ার আগে সময়টুকুতে ব্যস্ততার সীমা নেই। মাঠে উঠেছে সোনার ধান। বছরভর চালের জোগান। এইটুকু চাষবাসের উপর তাদের অন্নের যোগান। রয়েছে কালীপুজো, ছট, বাঁধনা পরব। সাঁওতালি ভাষায় বাঁধনা পরবকে বলা হয় সহরাই। সহরাই অনেক আদিবাসী গ্রামে পৌষ মাসের শেষে হয়। আদিবাসীদের কাছে পরব মানে অনাবিল আনন্দ, তাই হয়তো পরবের জন্য দিনক্ষণ তিথি নক্ষত্রের হিসাব কম। কেবল মনের আনন্দটুকু ভাগ করে নেওয়ার জন্য তারা মেতে ওঠে। কালীপুজোর পর যখন বাংলাদেশের সবাই ভাইফোঁটাতে মেতে উঠে ভাইয়ের মঙ্গল কামনায়, মাটি ফসল হাল বলদ নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষগুলো মেতে উঠবে গাইবলদের মঙ্গলকামনায়। চালের গুঁড়োর আল্পনা আঁকবে গোবরলেপা উঠোনে। গরুবাছুর গোয়াল পুজো হবে। দেওয়াল রং হবে। ‘গরু খুঁটা’ হবে। ‘গরু খুঁটা’ একরকম গরুকে নিয়ে খেলা। পাড়ার মাঠে বা বড়ো কোনও জায়গাতে একটা খুঁটিতে বাঁধা হয় একটা গরুকে। গরুটিকে সাজানো হয় বিভিন্ন রকম রং দিয়ে, শিং-এ দেওয়া হয় তেল। তাকে বস্তা বা কিছু দেখিয়ে উত্তেজিত করা হয়। গোলগোল করে ঘুরতে থাকে খুঁটাকে কেন্দ্র করে। এই নিছক খেলার অংশ থাকে ধামসা মাদল আর গান।
তিলোকা দেওয়ালে রংয়ের প্রলেপ দিচ্ছিল। আলকাতরা দিয়ে গোলা রং। মাটির দিকে দেওয়ালে শাড়ির পাড়ের মতো কালো বর্ডার। শাড়ির জমিনের মতো নক্সা কাটা হবে দেওয়ালে। কতরকম নক্সা, ফুল পাতা, হাঁস ময়ূর, গাছ, বাঘ, বরফি। কেউ কেউ আঁকে নৃত্যরত মেয়ে, মাদল বাজিয়ের ছবি। আপন মনের আনন্দে আঁকা হয় বিভিন্ন ছবি, তাতে নেই কোনও আঁকার ব্যাকরণ, নেই কোনও কৃত্রিমতা, নেই কোনও অঙ্কনের সহজ পাঠ।
সহদেব উঠোনে সাইকেল দাঁড় করাতেই হইচই করে বেরিয়ে এল তুলসি, মানিক, সুবাসী।
– বাবা, কটা মুরগা জিতেছ?
– সর্ সর্ সরে দাঁড়া। অসুস্থ মুরগা কেটে খাবি তুরা? হামি সিম-সহদেব তুদের ল্যাগা যত দরদ, মুরগাদেরও।
– তাই বলে কি উরা পরবের দিনও একটু মাংসেপিঠা খাবেক লায়? কী কী কথা বুলিস তুই! দেওয়ালে রং আঁকতে আঁকতে বলে তিলোকা।
– খাবেক। খাবেক লাই ক্যান। বাঁধনা পরব বুলে কথা। পতেক বার তো করতে পারি লাই। ইবার করছি। বাড়ির মুরগা খাবে। মাংসপিঠা খাবে। হেরে যাওয়া মুরগা লয়।
-তোরে লুকে এমনই এমনই বলে না সিম-সহদেব! মুকেও এত ভালোবাসিস লাই যতটা মুরগাদের বাসিস।
মুখ টিপে হাসে তিলোকা।
– বাবা, কটা মুরগা জিতেছ? জিলিপি আনো লাই?
– মামুকে খবর দিছো। মামু কাল আসবেক?
অনেক প্রশ্ন। প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে দিতে সহদেব ব্যাগ থেকে আহত মুরগিগুলো বের করে। পায়ের, বুকের ক্ষত পরিষ্কার করে ভালো করে। ছুঁচ-সুতো দিয়ে সেলাই করে নিঁখুতভাবে। কাটা জায়গার দুই দিকের চামড়া মিলিয়ে। হলুদ বেঁটে লাগিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর মুরগাগুলো পাখা ঝাপটায়। একমুঠো চাল ছড়িয়ে দেয় সহদেব। খুঁটে খুঁটে খাওয়া শুরু করে।
– আর কুনু সমিস্যা হবেক লায় লাগতাছে। কইরে তুলু কী রাঁধছোস? ভাত বাড়, প্যাটে আগুন জ্বলত্যাছে। টুকুন ত্যাল দে, বাঁধ থ্যাকে একখান ডুব দিয়া আসি।
তিলোকা একটা ফুল আঁকছিল দেওয়ালে। দেওয়ালে আঁকার কাজ বড়ো সময়সাপেক্ষ। সারাদিনে হয়তো একটা দুটো ডিজাইন করা যায়। টবের ওপরে একটা ফুল আর চারটা পাতা। বাকি বরফির নক্সা। সে একা করে এমন নয়, বাড়ির সবাই হাত লাগায়। একটা দেওয়ালে সুন্দর করে ময়ূর এঁকেছে তার বড়ো ছেলে। এইবার রেলে চাকরি পেয়েছে সে। গার্ডম্যানের। তাদের বাড়িতে প্রথম চাকরি। তাই পরবে সবার নেমন্তন্ন। কলকাতার দিদিদেরও নিমন্ত্রণ করেছে এবার, আসবে কিনা কে জানে! তারা কলকাতার মানুষ এখন! সাঁওতালি ভাষাটাও ভালো করে জানে না। বুঝতেই পারে না। কেবল নামের শেষে পদবীটাই শুধু সাঁওতালি।
গ্রামের শেষে জাহির থান। সেখানেই গ্রাম দেবতার পুজো। পুজো হয় বাচ্চা মুরগি বলি দিয়ে। জাহির থানে মহিলাদের যাওয়া মানা। কেবল পুরুষরাই জাহির থানে গিয়ে পুজো করে। গ্রামদেবতার কাছে মিনতি করে গ্রামের ভালোর জন্য। অপশক্তি, দৈত্যদানব, রোগবালা থেকে রক্ষা করার জন্য। জাহির থানে পুজো করেই শুরু হয় পরব। ধামসা মাদল বাজবে, গ্রামের মেয়েরা সব বাড়িতে ঘুরে ঘুরে নাচ করবে।
হেমন্তের বিকেলখানিতে সূর্য একেবারে কৃপণ। আলোটুকু দিতে না দিতেই পাটে বসার তাড়াহুড়ো। উঠোনের খাটিয়াতে বসে গল্প করছে মঙ্গল। মাটিতে একটা বাঁশের ঝুড়িতে কাটা মুরগা। ছাল ছাড়াচ্ছে সহদেব। মঙ্গল তিলোকার ভাই, শালবেড়িয়া বাড়ি, ওদের গ্রামে পৌষের শেষে বাঁধনা বা সহরাই। তাই তারা সবাই এসেছে সহদেবদের বাড়ি পরব মানাতে। পৌষের সহরাই-এ তারা যাবে শালবেড়িয়া।
তিলোকা কাঠের কুচিগুলোতে আগুন ধরায়। মাংস পিঠার জন্য শালপাতাগুলোকে ধুয়ে রেডি করে সহদেব মুরগাটা ছিলে ধুয়ে নিয়ে, মাংসগুলোর ছোটো ছোটো টুকরো করে নিয়েছে। মাংসের টুকরো, মশলা আর চালের গুঁড়ির একসাথে মাখিয়ে শালপাতায় মুড়ে আগুনে দিয়ে দেয়। মাংস পিঠার সুগন্ধ হাওয়ায় হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।
ছোটো একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নতুন কেনা শাড়িটা নিজের গায়ে চাপিয়ে দেখছিল সুবাসী। ঘরের ভেতরে আলো কম। ছোটো জানলা, নিচু দরজা। ভালো করে দেখতে হলে বাইরে আলোতে যেতে হবে। ওরা তাই করে। চুল আঁচড়ে নেয় বাইরে। আয়নার প্রয়োজন তেমন বেশি হয় না। ম্যাচিং কানেরও কিনেছে। হাতে ম্যাচিং চুড়ি।
চুড়িগুলো তার জন্য সুখলাল কিনেছিল গতবারের জয়চণ্ডীর মেলায়। সুখলালের কাঠের ব্যবসা। খাটপালঙ্কের গায়ে ফুল পাতার নকশা করতে পারে। এখন আর কাঠের খাটপালঙ্ক ব্যবহার করে ক’জন! সব রটস্টিল। দোকানে অবসর সময়ে তাই কাঠের ফুলদানি বানায়। ছবি আঁকতে তার খুব ভালো লাগে আর গান গাইতে। এক টুকরো কাগজ পেলেই মনে হয় কী আঁকি, কী আঁকি। সুখলালকে বাতাসীর খুব ভালো লাগে। কেউ হয় না, তবু কেমন যেন আপনজন। রাস্তাঘাটে যাতায়াতের পথে সুখলালের সাথে দেখা হলে মনে হয় দুটো গল্প করি। কিন্তু মুখে বলতে পারে না। মুখে না বলতে পারলেও সুখলাল কেমন করে যেন সব জানতে পারে। সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে আসে, বলে— কুথা যাচ্ছিস বটে? চল্, বাজারপানে আমারো দরকার ছিল।
বাতাসী তাড়াতাড়ি সাইকেলের প্যাডেল করে। সুখলাল বলে— বড়ো তাড়া আছে দ্যাখছি? তা যাছিস কুথায়? কলেজে?
বাতাসী বলে— তুমি দুকান ফাঁকা রাখি দিলে যে। তুমার কাজ নাই!
সুখলাল বলে— কাজের কম বেশি আছে। এখুন আমার বাজার যাওয়াটাই কাজ।
বাতাসী মুখটিপে হাসে। কতদিন দেখেছে কলেজে যাবার বাস এলেই ফেরত চলে যায় সুখলাল। বোঝে, বাজারে যাওয়াটা কেবল বাহানা।
সুখলালের সাথে পথটুকু না এলে বুকের ভেতর কেমন আনচান করে। কী নেই কী নেই ভাব! অথচ সুখলাল থাকলে আকাশমনি গাছের পাতাটাও কী সুন্দর লাগে! কাঞ্চন ফুলের গাছটাতে কাঞ্চন ফুলগুলো যেন নাচতে থাকে। শীতকালে শীত লাগে না, গরমকালে গরম লাগে না। সুখলালের সাথে কত কিছুর স্বপ্ন দেখে সে। সুখলালকে গরম ভাত খাওয়াবে নিজের হাতে রান্না করে। বাঁধনাতে নাচবে। ছাতা পরবের মেলায় যাবে। কিন্তু সে জানে না কীভাবে কী হবে সব কিছু। সে যেমন ভাবে সুখলালও সেই কথা ভাবে। গতবার জয়চণ্ডীর মেলা থেকে চুড়িগুলো কিনে এনে তার দিকে এমন করে এগিয়ে দিচ্ছিল যেন লুকানো জিনিস কিছু। ফিক করে হেসে ফেলে বাতাসী বলেছিল— চুড়ি আনিছ যে! ঘরকে বুল্যাঙ দিবো।
সুখলাল বলেছিল— বুল্যে দে। তুরে ঘর থ্যেকে তাড়াই দিলে হামি লিয়ে চ্যলে আসব।
– ইসব কুথা বুলো না। ডর লাগে। কেহু শুন্যে ফেলবেক।
– ইখানে কারে দেখছিস তুই? হামার তো মুনে বুলে কুলিতে সব লককে ড্যাক্যা ড্যাক্যা বুলি, তুরে হামি ভালোবাসি। বিহা করতে চাই। বাতাসী তু বিহা করবি হামারে।
বাতাসীর বুক আকাশমনি পাতার মতো থরথর করে কাঁপতে থাকে। বলে— আমি কিছু ব্যলতে পারবক লাই। ঘরে যারে বুল্যবে তারে বিহা হবেক।
– তুর সাথেই হামার বিহা হবেক। ব্যান্ডপাটি আনবু। পোগরাম হবেক। গুটা গাঁ ভোজ খাবেক। কথাগুলো শুনে বাতাসীর হৃৎপিণ্ড যেন গলা দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। কেবল বলেছিল— এখুন আর ইসব বুল্যো না। হামার ডর হয়।
চুড়ির কথা বাড়িতে আর বলেনি বাতাসী। বরং একশ মিথ্যা কথা বলেছিল।
পশ্চিমে শুকতারা জ্বলজ্বল করে। নখকুনির মতো চাঁদ ক্ষণিকের অতিথি হয়ে আসে। ধামসা-মাদল নিয়ে পুরুষরা জড়ো হয়।
সেহরাই সেরেঞ্জ-এ সুর ওঠে—
আতু জুড়ি তিলমিন সুনুম
বঞা ডাডি ডাঃ
নওয়া হড়ম নওয়া জিঃয়ী
যতন রূয়োড়া।
(গ্রামে সরিষা তিলের তেল
মাঠ কুয়ো ঠাকুরে জল
এই শরীর, এই জীবন
যত্নে ফিরে আসে।)
গানের তালে নাচছিল তিলোকা, সুবাসী, পুর্ণিমা, লক্ষ্মী, ববিতা, রাবনি, দুলারি। মাদল বাজাচ্ছে সুখলাল, চাঁদ আর অমর। সুখলালের হাত মাদলে আর চোখ খুঁজছে সুবাসীকে। সুবাসীর কথা তার প্রাণে বাজে সারাক্ষণ। সিম-সহদেবকে তার ভয় লাগে খুব। নাপিতের ঘরের মেয়ে বিয়ে করার জন্য নিজের ভাইকে গ্রাম ছাড় করেছিল সে। মধুকুন্ডায় কারখানায় ঠিকা মজুর। দেশগাঁও ছাড়া করেছে তাকে, শুধু নাপিতের মেয়ে বিয়ে করার জন্য। দেশে থাকলে হয়তো জঙ্গলে বেঁধে রেখে আসত। পরদিন পাওয়া যেত লাশ। জঙ্গলে কতকিছুর বাস। ভুত-প্রেত-ডাইন সে সব থেকে গ্রামদেবতা রক্ষা করলেও, হুড়াল থেকে বাঁচাবে কে! কিন্তু তার সাথে তো সমস্যা নাই, তাদের সাথে জাতে মিলে।
মেয়েরা হাতে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দুলে দুলে নাচে। আলাদা করে কাউকে বোঝা যায় না। যেন একটা ঢেউ। তালে তালে দুলতে দুলতে যাচ্ছে।
রহড় ডারি জারেঃ
কুহুলি চেড়ে কুহু কেজ
জুরি তাহেন খান
বাসে রুয়োড় হেঞকঃ
কুহুলি আলুম কুহুয়া,
ডষা আলুম বাড়িঞ
জুরি তাহেন খান
বাসে রুইয়ড়ো হেঞুঃ ।।
(শুকনো গাছের ডগে
কোকিল পাখি ডাকে
সাথি যদি থাকে
যদি ফিরে আবার আসত
কোকিল না ডাকলেও
আশা ভেঙো না
সাথি যদি থাকে
ফিরে আসতো) ।।
সুবাসীও পা মেলায়। পা মেলায় বুড়ি থেকে কচিকাঁচারাও। কে না চাই, সাথী ফিরে আসুক! হারিয়ে যায় সাথী, দূরে গিয়েও হারায়, কখনও পাশে থেকেও হারায়। সাথী ফিরে আসুক। সুখলালের সাথে সুবাসীর চোখের মিলন হয়।
(সহরাই সেরেঞ্জ-এর জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার – লতিকা টুডু)