অনার্য লোকসংস্কৃতি

সরিতা আহমেদ

“অনার্য কৃষ্টি বলয়িত কেন্দ্রীয় আর্যসভ্যতা যে পদে পদে গ্রহণ করেছে চারিপাশের আচার প্রবণতা,জীবন ও বিশ্ববোধ, তাতে তো ভুল নেই।পুরুষতান্ত্রিক আর্য যে সকল দেবতার শক্তিপুঞ্জ সহকারে সৃষ্ট মাতৃদেবীকে আরাধ্যা বলে মেনে নিলেন,সে তো মাতৃতান্ত্রিক প্রান্তিক অনার্যের প্রবল প্রবর্তনায়।“

–দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘অজানা বঙ্গকে জানো’ ।

ছোটবেলা থেকে স্কুলের পাঠ্যবইয়ে আমরা যে আর্য সভ্যতাকে পড়েছি তার যথার্থতা নিয়ে ঐতিহাসিক অথবা গবেষকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে,তবে এদেশের ভূমিপুত্র অনার্যদের আদিম সভ্যতার সাথে এই বহিরাগতদের যে চিরন্তন দ্বন্দ্ব ছিল, আছে ও থাকবে –সেকথা অনস্বীকার্য। যুগ যুগ ধরে অন্তজ্য শ্রেণী বাস করে চলেছে উচ্চবিত্ত সমাজের পাশাপাশি । তবু সামাজিক, রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক এমনকি মানুষ হিসেবেও তাদেরকে অচ্ছুৎ ও উপেক্ষিত করেই রাখা হয়েছে।অথচ ইতিহাস সাক্ষী যে যাদেরকে দলিত বলে একঘরে করে রাখা হয়েছে তারা এই দেশের মানব সভ্যতার এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করছে।

ফোকলোর বা লোকসংস্কৃতি শব্দটির সাথে আদিবাসী সংস্কৃতির পার্থক্য আছে। একে ‘শ্রমজীবি সংস্কৃতি’ বললে সেই পার্থক্য অবশ্য অনেকটাই ঘুচে যায় ।বস্তুত ‘সংস্কৃতি’ শব্দটির আগে ‘কৃষ্টি’ শব্দটিই পণ্ডিতদের মধ্যে অধিক প্রচলিত ছিল ।রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন যে, এই শব্দটি যেন কাঁটার মত বিদ্ধ করে। তিনি সুনীতি চট্টোপাধ্যায় মহাশয়কে একটি প্রতিশব্দ বেছে দিতে বললেন । সুনীতি বাবু তখন ঐতরেয় আরণ্যকে ব্যবহৃত ‘আত্মসংস্কৃত্তিবাব শিলপানি’ থেকে ‘সংস্কৃতি’ শব্দটির কথা রবীন্দ্রনাথকে জানালেন । এই শব্দটি কবিগুরু পছন্দ হয় ও বাংলা সাহিত্যে ‘সংস্কৃতি’ শব্দ গৃহীত হয় । রবীন্দ্রনাথ ‘আত্মসংস্কৃত্তিবাব শিলপানি’ শব্দের ব্যাখ্যা করেন “Arts indeed are the culture of soul” .

তবে এসব শিল্প সাহিত্য নির্ভর ‘কালচার’-এর বাইরে বেরিয়ে যদি নৃতাত্ত্বিক হারকোভিট্‌সের সংজ্ঞা দেখি তবে পাব “ Culture is the man made part of the environment”  যার সাথে মাটির ছোঁয়া জড়িয়ে আছে । শ্রমজীবী অন্তজ্য জনগোষ্ঠীর লোকসংস্কৃতিকে বুঝতে হলে আমাদের ‘কালচার’ শব্দটিকে শিল্পসাহিত্যের সূক্ষ্মজগতের মখমলি গণ্ডী ছাড়িয়ে অনেকটা রুক্ষ জমিতে নেমে আসতে হবে। তাকে সারা গায়ে মাখতে হবে এদেশের ভূমিপুত্রদের ইতিহাস, লোককথা, কিংবদন্তী, লোকাচার, ধর্মবিশ্বাস,আচার আচরণ ও খাদ্যাভ্যাসের কাদামাটি । সামাজিক ভেদাভেদের ঊর্দ্ধে উঠতে হলে আমাদের পড়শি জাতির লোকসংস্কৃতিগুলি জানতে হবে বৈ কি!

বাংলার উপজাতিদের মধ্যে প্রধানত সাঁওতাল, মুন্ডা, বাউল, ভূঁইয়া, শবর, ওঁরাও, কোড়া, ভুটিয়া ,গারো, লহারা,পাহাড়িয়া, ম্রু, মাহালী, লেপচা প্রমুখের সহাবস্থান দীর্ঘদিনের। এঁরা মূলত কৃষিজীবি গোষ্ঠী ।তবে অনেকেই এখন সুত্রধরের কাজ, টেরাকোটা শিল্প সহ বিভিন্ন কুটির শিল্প এবং খনি অঞ্চলের শ্রমিকের পেশা বেছে নিয়েছেন । বেশিরভাগই এখন উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের নিজস্ব ধারায় মূলস্রোতের জনজীবনের সাথে অনেকটাই মিশে গেছেন । তবে পুরুলিয়া বাঁকুড়া বর্ধমানের আদিবাসীরা এখনও নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখতে পেরেছেন ।

আদিবাসীদের লোকসংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে থাকে – লোককথা ,পৌরাণিক কাহিনী, কিংবদন্তী, পশুকাহিনী, পাখি কাহিনী, রূপকথা, ভূতপ্রেত কাহিনী, বীর কাহিনী, উপদেবতার কাহিনী, মিথ ,প্রবচন ,লোকব্রত , লোকসঙ্গীত , লোকনৃত্য, লোকরন্ধন, লোকস্থাপত্য ইত্যাদি অজস্র জীবনধারার শাখাপ্রশাখা ।

রাঢের বাউড়ি গোষ্ঠী – বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, মেদিনীপুর, মানভূম ও সিংভূমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে গঠিত বাংলার ‘রাঢ় দেশ’ বা ‘রাঢ়বঙ্গ’ । রাঢ়ের কেন্দ্রস্থল হল আসানসোল । এখানে রাঢ়ের প্রাচীন জনজাতি ‘বাউড়ি’ সম্প্রদায়ের বসবাস । এই বাউড়ি সম্প্রদায় হল মুণ্ডা গোষ্ঠীর একটা শাখা উপজাতি । বাংলার বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও নৃতত্ত্ববিদগন ডঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য, ডঃ অতুলচন্দ্র সুর, মানিকলাল সিংহ , যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী তাঁদের বহু গবেষণা গ্রন্থে প্রমাণ দিয়েছেন যে ‘বাউড়ি’ সম্প্রদায় আসলে প্রটো-অস্ট্রালয়েড গোষ্ঠীর মানুষ ।যেকোনো জনজাতির উৎপত্তি ঘটে তিনভাবে – ১) বৃত্তিগত, ২) কর্মগত ও ৩) নৃতাত্বিক গোষ্ঠীগত । বাউড়িরা এই শেষোক্ত শ্রেণির । প্রাচীন রাঢ়দেশে বিভিন্ন কৌম বা জনগোষ্ঠী বাস করত যাদের একসাথে বলা হত ‘রাঢ়ী’।

এরমধ্যে বাউড়িদের ‘টোটেম’(গোত্র) ছিল ‘বক’ ।

বক+রাঢ়ী = বগরাঢ়ী>বগঢ়ী>বাড়ঢ়ী>বাগড়ি>বাওড়ি>বাউড়ি ।

এইভাবে বাউড়ি ক্রমে সেই কৌমের পদবীতে পরিনত হয়েছে ।

প্রশ্ন জাগতে পারে টোটেম কী ?

প্রাচীন সমাজের জনগোষ্ঠীর সন্ধান পেতে হলে তাদের টোটেম বা গোত্র সম্বন্ধে জানতে হয় । আনুমানিক প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম মানুষের আবির্ভাব ঘটে ।সেই দ্বিপদী জীব যখন বিবর্তনের পথে হেঁটে তার উন্নত মস্তিষ্কের ব্যবহার করে বৃক্ষবাসী অবস্থা থেকে গৃহবাসী হল , তখন জীবন ধারণের তাগিদেই তারা ছোট ছোট দল বাঁধতে শুরু করল । সমস্যা হল ভাষা । তারা কথা বলতে পারত না, ইশারা ও ছোট কিছু শব্দ দিয়েই ভাবের আদানপ্রদান করত । ওইসময় এক-একটি দলকে আলাদা করে চেনার জন্য একএকটি প্রতীকের ব্যবহার আরম্ভ হয় । এই প্রতীকই হল তাদের গোত্র অথবা টোটেম । তারা গাছ, ফুল, প্রাণী প্রভৃতিকে পরমাত্মা বলে বিশ্বাস করেই তাদের চিহ্ন বা প্রতীক অনুযায়ী দলের বিভাজন করেছিল । হিন্দু সমাজে যেমন ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিবিধ গোত্র আছে, আদিবাসী সমাজে গোষ্ঠীর রক্ষক হিসেবে আছে এইরকম কিছু টোটেম বা প্রতীক ।সেইরকমই বাউড়িদের টোটেম হল ‘বক’ ।

রাঢ়ী জনজাতির প্রকৃতিপুজো, আত্মায় বিশ্বাস, সৃষ্টিশক্তিকে মাতৃজ্ঞানে পুজো, টোটেমের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বৃক্ষ,নদী,গ্রাম,অরণ্য ও মাটির মধ্যে নিহিত শক্তির পুজো নিয়েই একটি অনার্য-ধর্ম গঠিত ছিল । এই পেগান ধর্মচর্চাকেই তন্ত্রধর্ম বলে অনেক গবেষক উল্লেখ করেছেন । মুলত রাঢ়ীদের এই তন্ত্র ধর্মের উপরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অন্যান্য ধর্মগুলো। গুপ্তযুগের পূর্বে রাঢ়দেশে আজীবিক, জৈন ও বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ছিল । পরবর্তীকালে তন্ত্রধর্ম, বৌদ্ধধর্ম , ব্রাহ্মণ্যধর্ম বা আর্যধর্ম সবকিছুই মিলেমিশে যায় রাঢ়ীদের জীবনশৈলীতে । তবে বাউড়ি, বাগদি, হাড়ি,ডোম প্রভৃতি জাতি বৌদ্ধ হয়ে গেলেও তাদের প্রাচীন আদি দেবতাদের পরিহার করে নি । এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে পূজিত দেব দেবীরা হল – মনসা , বাসুলী, চণ্ডী, কালী, গ্রামদেবী বা দেবতা, কুদ্রা, সিনি, বড়াম, ধর্মঠাকুর, মাহাদানা ও বুড়ি ।সাঁওতাল জাতির মারাংবুড়ু ও বাউড়ি জনজাতির বড়পাহাড় এক ও অভিন্ন দেবতা ।বাঁকুড়া জেলার গ্রামদেবী ‘সিনি’ ও পশ্চিম-বর্ধমানের (আসানসোল-রানীগঞ্জের)গ্রামদেবী ‘বুড়ী’ একই দেবতা । এই দেবতার উপাসনাস্থল হিসেবেই বিখ্যাত উপজাতি থানগুলো গড়ে উঠেছে, যাদের ঘিরে চলে নানা পুজো, মেলা ও উৎসব।

যেমন – পানুড়িয়ার ‘বাউড়ি বুড়ি’ , পরিহারপুরের ‘বীনাবুড়ি’, বাঁকশিমুলিয়া বুড়ি, সাঁতাই বুড়ি, কুলতড়ায় বনবুড়ি, শীতলপুরের মঙ্গল বুড়ি, সোদপুরের ‘শ্যামৈলাবুড়ি’, কালিপাহাড়ির ‘ঘাঘরবুড়ি’ । এখন যদিও এইসব ধর্মস্থানে ব্রাহ্মণদের পুজোর চল আছে, তবে এগুলি সবই বাউড়ি জনজাতির দেবতা । ঘাঘর বুড়ির মেলা এখানকার বিখ্যাত লোকসংস্কৃতির উদাহরণ ।

বাউড়িদের মধ্যে বিবাহপ্রথাটি বাল্য বিবাহ সমর্থন করে । ‘সাঙ্গা’ নামের দ্বিতীয় বিবাহ প্রথার প্রচলন রয়েছে বহু প্রাচীন কাল থেকেই। পূর্বের বিবাহ-বিচ্ছেদ হলে প্রাক্তন স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এই সাঙ্গা নামের দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারে।

কালীপুজার দিন নতুন ‘হাঁড়িকাড়া’ বা ‘ভাতবাড়া’ প্রথা আছে বাউড়িদের । ওইদিন পুরনো মাটির হাঁড়ি ফেলে নতুন হাঁড়িতে রান্না করে সাতটি বা নয়টি শালুক পাতায় সাজিয়ে পিতৃ পুরুষের আত্মার উদ্দেশ্যে নিবেদনের পরে নিজেরা খায়।একইরকম ভাবে চৈত্র মাসের ‘ছাতুবাড়া’ প্রথায় নদী বা পুকুরে স্নানের পরে শুদ্ধবস্ত্রে পলাশ পাতায় ছোলা,যব বা গমের ছাতু বেঁধে পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তিকামনায় নিবেদন করে।

আজকের ফ্যাশানেবল ট্যাটু নয়, বাউড়িদের মধ্যে শরীরে ‘উলখী’ নেওয়ার রীতি আছে, পালাপার্বনে আছে ‘কাঠিনৃত্য’ অনুষ্ঠান ও নাচগানের রীতি। ভাদুপুজোর সৃষ্টিকর্তা এই বাউড়ি গোষ্ঠীর মানুষেরাই । পৌষ সংক্রান্তিতে আছে ‘শিকারযাত্রা’। ওইদিন চালের গুঁড়ি দিয়ে পিঠে তৈরি করে গুড় ও তিল দিয়ে খেয়ে যাত্রায় বের হয়।

ঝাঁপান উৎসব -অধ্যাপক আশুতোষ ভট্টাচার্য বলেছেন, “ঝাঁপান আসলে কোন অঞ্চলের সাপুড়ে ও ওঝাদের বাৎসরিক কর্মী সম্মেলন।” সংস্কৃত ‘যাপ্যযান’ থেকে এই ঝাঁপান শব্দটি এসেছে। এর অর্থ ‘নরবাহিত যান’। পূর্বে নরবাহিত যানে গুণীণ বসে থাকতেন সাপের খেলা দেখানোর জন্য। তার কাছে থাকতো প্রায় সব ধরণের বিষাক্ত সাপ। ঝাঁপানের এই আদি রুপের পরিবর্তন ঘটেছে প্রায় সর্বত্রই। বর্তমানে এই যানের ব্যবহার কোথাও দেখা যায় না। পরিবর্তে একটি উঁচু জায়গায় অবস্থান করে গুণীণ। কোন কোন জায়গায় গরুর গাড়িতে চড়ে ,বাঁশের তৈরী শক্ত মাচায় চড়ে, চৌদলে চড়ে বা শিষ্যদের কাঁধে চড়ে গুণীণ বা সাপের ওঝা সর্প পরিবৃত হয়ে বসে থাকেন।

ঝাঁপান রাঢ় বঙ্গের বহু প্রাচীন পরব।শ্রাবণ সংক্রান্তি বা নাগ পঞ্চমীর দিন এই উৎসব হয় । আগেরকার দিনে বিষ্ণুপুর রাজদরবারে সংগঠিত ঝাঁপান কে বলা হতো ‘বাঘ ঝাঁপান’।

এর কারণ এক্ষেত্রে গুণীণ যে মাচায় বসে খেলা দেখাতো সেখানে থাকতো মাটির তৈরী বাঘ।গুরুকে কাঁধে নিয়ে শিষ্যরা গাইতে থাকে-“হাটে গুরু বন্দি,বাটে গুরু বন্দি/আর বন্দি হাটন হাটি/শিক্ষা গুরু বন্দি, দীক্ষা গুরু বন্দি/আর বন্দি কাঁউরা কামাটি।” এই উৎসব যে বেশ জনপ্রিয় ছিল তার প্রমাণ রয়েছে সলভিনস নামে এক ফরাসী চিত্রকরের ১৮০৮ সালে  আঁকা ঝাঁপানের একটি চিত্র থেকে।

বর্তমান দিনেও রাঢ়বঙ্গে ঝাঁপান বেশ জনপ্রিয়। ঝাঁপানে সাপের খেলা দেখতে বেশ ভিড় হয়। ভিড়ের মাঝে থেকে থেকে শিষ্যরা গেয়ে ওঠে, “উপরে যায় খড়কুটা তলে যায় রাণ/বাজুক বিষম ঢাক চলুক ঝাঁপান” ।ঝাঁপানে মনসার গান গাওয়ার রীতি রয়েছে। তবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী যে কোন ধরনের বন্যপ্রাণী নিয়ে খেলা দেখানো নিষিদ্ধ। তাই বর্তমানে সর্পক্রীড়া প্রদর্শন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।এই কারণে প্রায় সব জায়গাতেই ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যপূর্ণ এই ঝাঁপান পরব।

                     মানভূমি সংস্কৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলা, বিহার এমন কি উড়িষ্যাতেও । পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, আসানসোল, সাঁওতাল পরগনা, ধানবাদ, সিংভূম, রাঁচি, গুমলা, হাজারীবাগ ও ময়ূরভঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মাহাতো, কুড়মি, সাঁওতাল, রাজোয়ার, ঘাসি, হো, মাহালি,বীরহড়, বীরনিয়া, খেরওয়ার, হো, খেড়িয়া, শবর, কোড়া, লোহার, সিংসরদার, সিংমুড়া, পাহাড়িয়া, বাউড়ি, হাড়ি, বাগদি, বেদে, সরাক সহ বৃহৎ জনগোষ্ঠী সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি সম্প্রদায়ের আরণ্যক ও কৃষিভিত্তিক নানা লোকউৎসব পালিত হয়।

তারমধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হল-

করম অথবা জাউয়া পরব – দক্ষিণবঙ্গের গ্রামেগঞ্জে অম্বুবাচী তিথি শেষ হলেই জোরকদমে চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয়। শ্রাবণ মাসের শেষ থেকে ভাদ্র মাসের শুরুতেই বীজতলা তৈরি এবং ধান রোপন শেষ। পরবর্তী সময়ে কাজ শুধু চারা গাছের পরিচর্যা। এই কৃষি পরিচর্যার একটি সামাজিক অঙ্গ হচ্ছে ঈঁদ ডালি, ছাতা ডালি, করম ডালি ইত্যাদি ।

করম পুজো প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী বা পার্শ্ব একাদশীর দিন পালিত হয়, যখন মাঠে ঘাটে কচি ধানের চারা বড় হতে থাকে। মুখ্যত করম পুজো কুমারী মেয়েদের ব্রত পুজো। নারীকে সন্মান করতেই এই পূজা, কারণ আজকের কুমারী মেয়েরা একদিন পৃথিবীর মতনই উর্বর হয়ে, প্রজনশীল হয়ে মাতৃমূর্তি ধারণ করবে। তাই এই পুজোর মাধ্যমে মাতৃরূপেন কিশোরী মেয়েদের ভবিষ্যতে সুখীসমাজ গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনের বার্তাও দেওয়া হয়। এটি মূলত প্রজনন ভিত্তিক উৎসব ।

জাউয়া নাচ –

করম পূজার ৫/৭ দিন আগে থেকে কুমারী মেয়েরা এবং কোথাও কোথাও সধবা নারীরাও ব্রত রাখতে শুরু করেন। এরই অনুষঙ্গে ছোট ছোট বাঁশের ডালা বা টুপাতে নদীর বালি রেখে তার মধ্যে বিভিন্ন রকমের দানা শস্যের যথা মুগ, মুসুর, ছোলা, কুলথি কলাই, জুনার ইত্যাদির বীজ বপন করা হয়। একে বলে ‘ডালার জাওয়া’। প্রতিদিন সকালে জাওয়াতে হলুদ গোলা জল দেওয়া হয়। আর এই মানতের জাওয়া ঘিরে প্রতি সন্ধ্যায়, মানতকারীরা হাত ধরাধরি করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে হাত ধরা ধরি করে, কোমর ও শরীরের ভঙ্গিমাতে ভাদ্র মাসের বৃষ্টি ও হাওয়ায় কচি ধানগাছের দোল খাওয়ার লীলায়িত ছন্দে গান ও নাচ করে। এই নাচকে বলে ‘জাওয়া নাচ’।

এরপর চলে সঁজত, উপাস, পাননা

ইঁদ পুজো

করম  পরবের আরেকটি অনুঠান আজকের দিনেও পুরুলিয়ার কোথাও কোথাও পালিত হয়, যেমন বরাবাজারে, এটি হচ্ছে ইঁদ বা বৃক্ষ পুজো। একে ‘ইন্দ্রধ্বজোৎসব’ অথবা ‘ছাতা পরব’ও বলা হয়। জনৈক নিরামিষাশী আদিবাসী ব্যক্তি হন রাজা। দুটি দু’সাইজের বাঁশ কেটে নতুন কাপড় জড়িয়ে, পুজো এবং হোম যজ্ঞ করে চাষের জমিতে বৃষ্টি ও অধিক ফসল কামনা করে পোঁতা হয়। খুঁটি দুটির মাথায় দুটি নতুন ছাতা বেঁধে দেওয়া হয়। বড় বাঁশটি ইন্দ্রদেব বা জল এবং ছোট বাঁশটি মাসির প্রতীক। ইঁদ পরব ফুটে ওঠে আঞ্চলিক গানে-

“বরা বাজারের ইঁদ, চাকলাতোড়ের ছাতা রে।

কাশীপুরের দুগ্গা পূজা, নাই হল দেখা হে।”

বাঁধনা ও সরাই বা সহরাই উৎসব – কালীপুজোর পরে নতুন ধান উঠলে বাঁধনা-সরাই উৎসব হয় পুরুলিয়া সহ আদিবাসী অধ্যুসিত অঞ্চলে। কার্তিক মাসের পূর্ণিমা থেকেও অনেকে উৎসব পালন করেন । আসলে গোটা অগ্রহায়ণ আস জুড়েই প্রথা মেনে বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামে বিভিন্ন দিনে এই উৎসব পালিত হয় । সেই নির্দিষ্ট দিন ঠিক করতে প্রতিটা গ্রামে আয়োজিত হয় ‘কুলি’ অর্থাৎ গ্রামের প্রধান মাতব্বরদের বৈঠক। ভিন গাঁয়ের আত্মীয়রা এই পরবে নিমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত থাকেন। সবাই যাতে সবার গাঁয়ে উৎসবে অংশ নিতে পারেন, সেইজন্যই ‘কুলি’তে গ্রামভেদে ভিন্ন ভিন্ন দিন স্থির করা হয় । সপ্তাহভর চলা এই পরবে আদিবাসী সংস্কৃতির চর্চা হয় । মেটে ঘরের দেওয়াল সুন্দর করে নিকিয়ে তাতে রঙিন ছবি আঁকা হয়। এই আঁকায় কোনো রাসায়নিক রং না , ব্যবহৃত হয় পলিমাটি, খড়ের ছাই, খাদানের রঙবেরঙ কাঁচা সিরামিক, পাতা-ফলের নির্যাস ইত্যাদি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক রং। প্রায় দশ দিন ধরে চলে গোটা গ্রামের রঙ করার কাজ ।কোনো কোনো জায়গায় এটি প্রধানত গো-পুজো হিসেবেও উদযাপিত হয়।বলদ ও গরুর গায়ে রঙের ছাপ দিয়ে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।একে  তখন ‘গো-বাঁধনা’ বা ‘খুঁটা বাঁধনা’ পরবও বলে, যা আসলে কৃষি ও প্রজননভিত্তিক উৎসব। কার্তিক থেকে জৈষ্ঠ অবধি যে ‘শুখা সময়’ সেটিই সাজানোর জন্য আদর্শ ।পুরুলিয়ার আদিবাসী গ্রামগুলি এই সময় পটে আঁকা রঙিন ছবি হয়ে ওঠে । পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গ্রামগুলিতে এই সময় কোনো সাপখোপ , মশা মাছির উপদ্রবও থাকে না। শীতের আগেই ধামসা মাদলে অকাল বসন্ত নামে ‘বাঁধনা-সরাইয়ে’ ।

বাহা চান্দু পরব – একটি বসন্তকালের প্রকৃতি পুজো। গ্রীষ্মকালে যাকে সাঁওতালরা ‘ঝেটবঙ্গা’  বলে, যখন শাল মহুয়া মঞ্জুরিত হয়,বসন্তের আগমনে যখন শাখায় শাখায় ফুল-পাতা-মুকুল পল্লবিত হয় তখন এই ‘বাহা চান্দু’ উৎসব পালন হয়। ছোটনাগপুর অঞ্চলের আদিবাসীদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের উত্সব ‘সারহুল’ বা ‘বাহা’ উত্সব। বসন্তকালে ফাল্গুনী পূর্ণিমায় এই উত্সব পালিত হয়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনে শালগাছ বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ।

কথিত আছে, অত্যাচারী মাধো সিংহের হাতে নির্যাতিত হয়ে সাঁওতালরা পাহাড়ে জঙ্গলে অসহায় ভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন তাদের এক প্রধান ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিন আকাশের দিকে একটি তীর ছোড়েন। তীরটি পড়ে এক শালগাছের নীচে।জনমত নিয়ে সেখানটাই গড়ে ওঠে তাদের স্থায়ী বাসস্থান। তখন থেকেই তাদের ধর্ম ‘সারনা ধরম’। শালগাছ তাদের আশ্রয় দিয়েছিল বলে শালগাছকে বলা হয় ‘সারি সারজম’ ।ফাল্গুনী পূর্ণিমার ওই চাঁদের নাম হয় ‘বাহাচাঁদ’। সাধারণ বাহা উত্সব তিন দিন ধরে চলে।প্রকৃতি পুজোর এই পরবে লায়া (পুরহিত)পা ধুইয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।প্রথম দিনকে বলা হয় ‘উম’, দ্বিতীয় দিনকে বলা হয় ‘সার্দি’ আর তৃতীয় দিনকে বলা হয় ‘সেঁন্দরা’।আদিবাসীদের এই বিশেষ বসন্ত উৎসবে শাল-মহুয়া-পলাশের বনে নারী পুরুষের নৃত্য গীতে মুখরিত হয় প্রকৃতি।

হুদুর দুর্গা অথবা দাশাই পরব – সাঁওতাল, মুণ্ডা, কোল, অসুর, কুড়মি, মাহালী, কোড়াদের নিয়ে খেরোয়াল জাতি । এদের মধ্যে ‘অসুর’ জাতির শাখা মুলত তিনটি – বীরঅসুর, বীরজিয়া আর আগারিয়া।

বিহারে রয়েছে বিরজীয়া গোষ্ঠী, আগারিয়া গোষ্ঠী আছে মধ্যপ্রদেশে, এবং বীরঅসুর গোষ্ঠী আছে রাঁচী ও পালামৌ জুড়ে (প্রায় ১০,৭১২ জন)।

বাঙালি উচ্চবর্ণীয় নাগরিক সমাজ যখন দুর্গাপূজায় মেতে থাকে, অসুরদের বিনাশ চায়, আলিপুরদুয়ারে অসুর প্রজাতির লোকেরা নিজেদের কুঠুরিতে আবদ্ধ রাখে পূজার চারদিন ।এই শোকপালনের চারদিন তাদের আরাধ্য থাকেন ‘হুদুর দুর্গা’ । 

‘হুদুড়’ কথার অর্থ ‘বজ্রের মতো তেজ বা শক্তি যার।’

আর দুর্গার অর্থ- ‘দুর্গ রক্ষা করেন যিনি’। এই দেশের ভূমিপূত্রদের কাছে হুদুড় দুর্গা আর কেউ নন— তিনি আমাদের পরিচিত মহিষাসুর।

লোককথা অনুসারে, এই অসুর জাতি তাদের মহান রাজা ‘মহিষাসুর’ বা ‘ঘোরাসুর’-এর‍ অন্যায় নিধন মেনে নিতে পারেনি। নিরীহ আদিম অধিবাসীদের উপর বহিরাগত আর্যদের আক্রমণ নেমে আসে। খেরোয়ালদের মুখে মুখে প্রচলিত গানে গানে বার বার ফিরে আসে আদিবাসীদের পুরনো বাসস্থান চ্যাঁইচম্পার কথা । সেই বসবাস করার জায়গা ও চাষের জমি দখল করতে এলে আর্য ও অনার্য  যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। বহিরাগত আর্যশক্তি দৈহিক দিক থেকে বলীয়ান না হলেও বুদ্ধির দিক থেকে ছিল অনেক বেশি উন্নত। তাই বার বার যুদ্ধ করেও যখন তারা আদিম অধিবাসীদের বিরুদ্ধে এঁটে উঠতে পারল না, তখন কূটকৌশল প্রয়োগ করে তারা জয়লাভ করে। বীরের যুদ্ধ থেকে সরে এসে তারা যখন দেখে যে, আদিম জাতির সমাজে মহিলাদের স্থান অনেক উপরে,তখন তারা মহান বীর মহিষাসুর বা ঘোরাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য এক নারীকে প্রেরণ করে। তারা ভাল ভাবেই জানত, আদিম জনজাতিদের প্রথা অনুযায়ী মহিষাসুর কখনওই নারী বা শিশুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না। সুযোগ বুঝে তাই সেই নারীকে কান্ডারি করে অনার্যদের মহান নেতা মহিষাসুর এবং এখানকার ভূমিপূত্রদের বিরুদ্ধে জয় লাভ করে তারা। এই রকম অন্যায় যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এক দিন ভূমিপুত্র আদিবাসী খেড়ওয়ালরা তাদের ক্ষমতা হারায়।

বাঙালির শারদ উৎসবের আশ্বিন মাসকে ‘দাশাই মাস’ও বলে। ‘দাশাই’ অর্থ ‘অসহায়’। এই শোকপালনের সময় ‘দাশাই নাচে’র সাথে যে গান হয় তার অর্থ – ‘দুর্গা অন্যায় সমরে মহিষাসুরকে বধ করেছে । হে বীর, তোমার পরিণামে আমরা দুঃখিত।হে আমাদের পূর্বপুরুষ প্রনাম নাও।’

নবমীর দিন হুদুরদুর্গার স্মৃতিতর্পণের পর মহিষাসুরের উদ্দেশ্যে ছাতা উত্তোলন করে ‘ছাতা ধরা’ উৎসব পালন করে অসুর জাতি ।

            ভারতবর্ষে প্রধানত ১৩টি মুন্ডা গোষ্ঠীর উল্লেখ।এটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় উপজাতিভারতের ঝাড়খণ্ড, ছত্রিশগড় , মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে এঁদের বাস।

মুন্ডারা সাধারণত বন-জঙ্গল ও মাটি কাটার সঙ্গে আদিকাল থেকেই সম্পৃক্ত।

অনেক নৃতাত্ত্বিকগণ মনে করেন মুন্ডারাই কোল নামেও পরিচিত ও এরা সাঁওতালদেরই একটা প্রশাখা।মুন্ডা শব্দের অর্থ সম্মানী ও সম্পদশালী মানুষ।

মুন্ডা জনগোষ্ঠী যে ভাষায় কথা বলে, তার নাম মুন্ডারি। এটি অস্ট্রো- এশিয়াটিক ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত।

সিরুয়া বিসুয়া

পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানকে মুন্ডারা বলে সিরুয়া বিসুয়া। মুন্ডারা সুর্য দেবতার পূজায় অভ্যস্ত। তাই সকালে স্নান করে এসে বোঙ্গা বা সূর্যের পূজা দিয়ে এরা সবাই মিলে পানতা ভাত খায়।

বৈশাখের মতো চৈত্রের শেষদিন বা সাকরাইনের দিনও মুন্ডা সম্প্রদায় শুদ্ধি অভিযান চালায় ।বুঙ্গা দেবতার নামে এরা কাদা মাটি ধুয়ে নতুন জীবনের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়।এটা তাদের পূর্বপুরুষদের রীতিও। চৈত্রের শেষদিন এবং বৈশাখের প্রথম দিনের চান্দ্র মাসকে মাথায় রেখে সিরুয়া বিসুয়া উদযাপিত হয়। মানতের হাস, পাঠাঁ বলির মাংস, খিচুড়ি রান্না, নাচগান সবই চলতে থাকে।

মুণ্ডাদের বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘সারহুল’– চৈত্র মাসের বসন্ত উৎসব ;

কাডলেটা বা বাতাউলি’ আষাঢ়ের শুরুতে বর্ষার উৎসব,

জমনানা আশ্বিন মাসের নতুন ধানের উৎসব;

খাড়িয়া পূজা বা মাঘ পরব শীতে ধান কাটার উৎসব।

মুন্ডার সাধারণত ‘ঈশান পূজা’, ‘ঝান্ডাপূজা’, ‘গরাইয়া পূজা’, ‘শারল পূজা’, ‘করম পূজা’ করে থাকে এবং তাদের প্রধান প্রধান দেবদেবীর নাম হলো গরাইয়া, বনপতি, সূর্যাহী, বামসিং প্রভৃতি। মুন্ডাদের মধ্যে খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী থাকলেও অধিকাংশই হিন্দু ধর্মের দেবদেবীর উপসনা করে থাকে।

সাঁওতাল,মুণ্ডা সহ অন্যান্য আদিবাসীদের মধ্যে একসময় ব্যাপক প্রচলন ছিল লেটো গানমনসামঙ্গল জয় গানের ।এখন তা অনেকটাই অস্তমিত। তবে ঝুমুর, ছাদপেটার গান, জঙাল গান, ভাদু গান, টুসু গান, বিয়ের গান, পীরের গান ,বাউল গান ইত্যাদির এখনো বেশ প্রচলন আছে । বর্ধমানের জনগোষ্ঠীতে বাইরে থেকে আসা পাঞ্জাবি,ওড়িয়া,মারাঠি ও মধ্যপ্রদেশের শ্রমিকদের বিরহা, চৈতি, শৌহর ও বিয়ের গান আমাদের শ্রমজীবী সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে ।

লোকনাট্যের মধ্যে কেবল কিছু যাত্রা ও পালাগান এখনো টিকে আছে আসানসোলের উপজাতি অধ্যুসিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

পুরুলিয়ার মাহাতো ও সাঁওতালদের মধ্যে বিখ্যাত ও প্রচলিত পরবগুলির পাশাপাশি পাতা পরব ও আহীরা উৎসবে প্রধানত চার ধরণের নাচ দেখা যায়- অবিবাহিতা মেয়েদের নাচ, বিবাহিতা মেয়েদের নাচ, নারী-পুরুষের মিলিত নাচ (বাহা, পাতা,লাঁগড়ে,দং, গুলাউড়ি, রিঞা) এবং কেবলমাত্র পুরুষদের নাচ (নাটুয়া,ঘুং,দুঙ্গের,লয়া) ।

কেবলমাত্র মেয়েদের নাচ হল- ডাহা, ডম,পাক,ঝিকা, হুমটি,ভিনসার, বিবজা সারাই ইত্যাদি ।

                           শ্রমজীবী সংস্কৃতি তথা আদিবাসী সংস্কৃতি একটি সমৃদ্ধশালী ও প্রাচীন সংস্কৃতি । বর্তমান পরিবর্তনশীল জগতে আমাদের খেয়াল রাখা উচিৎ যাতে এঁরা মূলস্রোতের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে নিজেদের ঐতিহ্যকে হারিয়ে না ফেলে । এই প্রান্তজনের কৃষ্টি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে সবশ্রেণির শুভ বুদ্ধির মানুষকে। এঁদের প্রতিটি লোকাচারের উৎসের সন্ধানে যেতে হবে নৃতাত্বিক, সমাজতাত্বিক ও গবেষকদের ।মূলস্রোতে ওঁদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমান জীবনধারার সাথে কীভাবে এগুলির মেলবন্ধন ঘটানো যায় তা নিয়েও চিন্তা ভাবনা, পরীক্ষা নিরীক্ষারও দরকার আছে বৈ কি !

************** ******************************তথ্য ঋণআসানসোলের গ্রামদেবতা(নন্দদুলাল আচার্য), রাঢ়ের বাউরি জনগোষ্ঠী (সুনীলকুমার দাস), আসানসোলের লোকসংস্কৃতি (রামশঙ্কর চৌধুরী)। এছাড়া আন্তর্জাল ও পত্রপত্রিকার বিভিন্ন কলাম

+ posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *