বঙ্গীয় জনজীবনে বিপন্ন ভাষা : প্রভাব ও প্রতিযোগিতা

দেবদীপ ধীবর

ভূমিকা :

বহুল সংখ্যক বিপন্ন ভাষাভাষী গোষ্ঠীর সঙ্গে বাঙালিদের ভাষা সাংস্কৃতিক বিনিময় স্বল্প পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয়। এর প্রেক্ষাপট এবং বিস্তৃতি দুটিই বৃহৎ। আমরা বৃহত্তর বঙ্গের উপযুক্ত সমীক্ষা করতে পারিনি। এরকম অবস্থায় সাংস্কৃতিক বিনিময়ের স্তর নির্মাণ ছাড়া বিশেষ কিছু করা এই মুহূর্তে সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। প্রাচীন, মধ্য এবং আধুনিক এই তিন যুগের সমন্বয়ে বাংলার বা বঙ্গভূমির যে ছবি বা মানচিত্র আমরা পেলাম তাতে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন জাতি দ্বারা বাংলা তথা বাঙালির গঠন প্রক্রিয়ার রূপ এই সময়েও ফুটে ওঠে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বঙ্গীয় উপাদান যে সমস্ত আর্য, শূদ্র, নিম্নবর্গ বা আদিবাসীদের পরিচয় পাই তাদের অনেকেই আধুনিক যুগে যেমন খুঁজে পাই না। তেমনি আবার অনেক নতুন গোষ্ঠীর সন্ধানও পায়। কখনো কখনো মনে হয় বঙ্গে আদিবাসী বলে কিছু ছিল না। ছিল প্রায় বাংলা বাঙালির সমগোত্রীয় জাতি। একথা বলছি তার কারণ বাংলা ভাষা সংস্কৃতির আদিবাসীদের নানাবিধ উপাদানের প্রভাব লক্ষ্য করতে পারি। ইংরেজ আগমন পরবর্তীতে আলাদা করে আদিবাসী সত্তার নির্মাণ বাঙালির পরিধিকে সংকুচিত করেছে বলেই মনে হয়। আর এই সংকোচনের ফলেই ভাষা বিপন্নতা ক্রমাগত দীর্ঘতর হয়েছে বা হচ্ছে। বর্তমানে যাদের আমরা বিপন্নভাষী বলে চিনি তাদের ভাষা-সংস্কৃতিগত হীনমন্যতাবোধ মূল আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। অর্থাৎ হীনমন্যতাবোধই যেন আদিবাসীদের বাঙালি হতে বারবার বাধ্য করেছে। আজ ভাষা সংস্কৃতির নানা পরিমণ্ডলে এই প্রক্রিয়া বারংবার দেখা যায়। বাংলার প্রাচীন স্থান-নাম, দেব-দেবী, লোকসংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান যে-কোন বিষয়ে উৎসমূল নির্ধারণ করতে গেলে আদিবাসী তথা বিপন্নভাষীদের প্রভাব পরিলক্ষিত হবে।

বঙ্গীয় জনজীবনে বিপন্ন ভাষা :

বঙ্গভূমিতে বসবাসরত বিপন্ন ভাষীদের ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বাঙালির ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ তথা ঐতিহ্যমণ্ডিত করেছে। নিবিড়ভাবে অনুধাবন করলে বাঙালির উদ্ভব ও বিকাশে এই বিপন্ন ভাষী গোষ্ঠীগুলোর উপাদান যথেষ্ট। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে অনার্য উপাদান প্রতি পদক্ষেপে পরিলক্ষিত হয়। এই বিপন্ন ভাষাগোষ্ঠীর উপাদানগুলো অস্বীকার বা অবহেলা করলে বাঙালির কাঠামোগত সত্তা বিলীন হয়ে যায়। মূল উৎসই হারিয়ে যায়। বাঙালি জনতত্ত্বের ধারায় অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, ভোটবর্মী জাতিগোষ্ঠীর রক্ত এখনো সচল রয়েছে। এ বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম্ম’ বইতে লিখেছিলেন— “এদেশে যাহারা বাস করিত তাহারা অন্য জাতির সহিত মিশ্রিত হইয়া আধুনিক বাঙালী হইয়াছে।” অন্যদিকে নীহাররঞ্জন রায়ের বক্তব্য এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য নরতত্ত্বের দিক থেকে উত্তর ভারতের বর্ণ-ব্রাহ্মণদের চাইতে ব্রাত্য নমঃশূদ্র তথা চণ্ডালদের সঙ্গেই বাঙালি ব্রাহ্মণ-বৈদ্যকায়স্থদের আবয়িক আত্মীয়তা বেশি। হিন্দু ধর্মের আওতায় এসে বর্ণ ও জাতি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন হলেও তপশীলভুক্ত পোদ, বাউরী, বাগদী, ডোম প্রভৃতি জাতি যে সাঁওতাল, ভূমিজ, গোণ্ড, মাহালি প্রভৃতি উপজাতিদের থেকে সৃষ্ট—এ বিষয়ে নৃতাত্ত্বিক ইঙ্গিত সুপষ্ট। সংখ্যাধিক বাঙালি মুসলমান যেহেতু এদেশের জনগোষ্ঠীরই ধর্মান্তরিত একটা অংশ, তাই তারাও উল্লিখিত বৈশিষ্টের বাইরে তো ননই বরং নমঃশূদ্রাদি তপশীলভুক্ত মানুষের সঙ্গে তাদের এথনিক মিল বেশি।সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সুকুমার সেন প্রমূখ ভাষাবিজ্ঞানীরা বাংলা ভাষার উৎসে অনার্য ভাষার ছাপ লক্ষ্য করেছেন। এছাড়া রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, অতুল সুর, নীহাররঞ্জন রায় প্রমুখ ঐতিহাসিক প্রাচীন বাংলার যে স্থান নাম আবিষ্কার করেছেন, তাতে বাঙালি ও অনার্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রমাণ আরো দৃঢ় হয়ে ওঠে। জর্জ গ্রিয়ারসন থেকে শুরু করে বিশ শতকের বিভিন্ন ভাষা গবেষকগণ বাংলা ও বাঙালি বিষয়ে যে গবেষণা করেছেন তাতে মনে হয়, আজকের বাঙালি বিপন্ন ভাষাগুলির পূর্বতন প্রতিনিধি। এ বিষয়ে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন “বাঙ্গালার সংস্কৃতি মুখ্যতঃ গ্রাম্য জীবনকেই অবলম্বন করিয়া পুষ্টি-লাভ করিয়াছিল। এদিকে বাঙ্গালা-দেশ বোধ হয় আদিম অস্ট্রিক জাতি হইতে প্রাপ্ত রিকথকেই রক্ষা করিয়া আসিয়াছিল।” এরপর বাঙালি ও বঙ্গভূমিতে বসবাসকারী বিপন্ন বা আদিবাসী গোষ্ঠীর ভাষা-সাংস্কৃতিক বিনিময় বিষয়ে আলোচনা করব।

বঙ্গে বিপন্ন ভাষীদের ভাষা-সাংস্কৃতিক বিনিময় :

বাঙালি ও বিপন্নভাষীদের সাংস্কৃতিক বিনিময়কে পাঁচটি মাত্রার মধ্যে সংঘটিত হতে দেখি। (ছকটি দেখুন।) আমরা বঙ্গীয় সংস্কৃতির সংঘটন থেকে এই আদিবাসীদের পৃথক বলে মনে করতে পারি না। কিন্তু আমাদের অস্তিত্বে মজ্জায় এই সমস্ত আদিবাসীদের সংস্কৃতিকে পৃথক সংস্কৃতি বলে ভাবতেই অভ্যস্ত। তবুও বঙ্গের তপশিলি জাতিভুক্ত অনেক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক সাম্যতা প্রভূত পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। আজ আমরা যখন বাঙালি সংস্কৃতির মূলস্রোত খুঁজতে যাই তখন আদিবাসী সংস্কৃতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বহু বৈচিত্র্যের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে ধরা দেয়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘আর্য অনার্য’ প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, বাঙলার অনার্যকে ভাষায় সভ্যতায় আর্যীকরণের প্রক্রিয়া এখনও চলছে। পশ্চিম বাঙলার চুয়াড়, সাঁওতাল, ভূমিজ, ভোট, বোড়ো নানা জাতি আজ বাংলাভাষী হিন্দু হয়ে গেছে। তিনি নৃতত্ত্বের পরীক্ষানিরীক্ষা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বেদ-ব্রাহ্মণ-সূত্র-পুরাণ-পিটক-তন্ত্র’ ইত্যাদির সঙ্গে, সাঁওতাল, ধাঙড়, গাড়ো ইত্যাদি অনার্যের ধর্ম আলোচনা করা দরকার। তাঁর ভাষায়- ‘ভারত খালি আর্য্যের নয়; আর্য্যের দত্ত ভাষার গৌরবে পারিপার্শ্বিকের জ্ঞান হারালে, কি ভাষাতত্ত্ব, কি ইতিহাস, সমস্তরই আলোচনা অসম্পূর্ণ হবে — সত্য নির্ধারণের প্রধান এক পথ রুদ্ধ হ’য়ে যাবে।” বঙ্গীয় সংস্কৃতি নানা সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। বঙ্গভূমির বিভিন্ন প্রান্তের বহু বিপন্ন গোষ্ঠী বিশেষ করে যারা নানাভাবে নানা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সান্নিধ্যে এসেছে তারা ধীরে ধীরে সেই গোষ্ঠীর ভাবধারা গ্রহণ করে নিজেদের জীবনচর্যায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিয়েছে। বঙ্গীয় বিপন্নভাষীদের সংস্কৃতি ব্যাপক ভাবে অনুসন্ধান করলে দেখব বাঙালি সংস্কৃতির জ্ঞান, আচার-আচরণ, বিশ্বাস, রীতিনীতি ইত্যাদির প্রভাব বর্তমান। অন্যদিকে বাঙালি সংস্কৃতির জ্ঞান, আচার-আচরণ, বিশ্বাস, রীতিনীতি ইত্যাদির মধ্যেও বিপন্ন ভাষীদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

অধিকাংশ বিপন্ন ভাষা গোষ্ঠীর মানুষজন বিভিন্ন সময়ে বঙ্গে এসেছে এবং এখানেরই প্রকৃতি-পরিবেশে, এখানেরই আবহাওয়া পরিমণ্ডলে এবং অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতিতে নিজেদের অভিযোজিত করেছে। স্থানীয় অঞ্চলের নানাবিধ পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজনের ফলে এই সকল বিপন্ন ভাষী গোষ্ঠী নিজেদের জীবনধারাকে রূপায়িত করেছে। অনেক সময় নানা ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তাদের জীবনচর্যাকে বিঘ্নিত করেছে। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি ও অস্বাভাবিকতার সঙ্গে অভিযোজনের মাধ্যমে এরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখলেও মূল জীবনচর্যা এবং মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটেছে। অরণ্যচারী থেকে নাগরিক জীবনে আদিবাসীদের অবস্থান আজ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। যে অরণ্যে তারা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ সেই অরণ্য হারিয়ে গিয়ে কংক্রিটের অরণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। ভারতবর্ষ তথা বঙ্গদেশের আদিবাসীদের সাধারণ জীবন চালনা করার জন্য তাঁদের সংস্কৃতির পাশাপাশি অপর সংস্কৃতি তথা ভাষাকে গ্রহণ করতেই হয়। আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতি খাদ্য পানীয় যা যা বাজারজাত তা গ্রহণের মানেই উক্ত সংস্কৃতিকে গ্রহণ করা। ধরা যাক পুরুলিয়ার কোনো এক আদিবাসী গোষ্ঠী যাঁরা বাঁশের ঝুড়ি বোনে সেগুলো বিক্রি করতে হলে সেই অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমে বিক্রি করতে হয়, এবং সেই টাকা দিয়ে আঞ্চলিক ভাষা মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে হয়। তাহলে সর্বোপরি আমরা বুঝতে পারছি এই প্রয়োজনীয়তার মাত্রা যত বাড়বে সাংস্কৃতিক আশ্রয় তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। ফলত যে সাংস্কৃতিক চক্র পরিলক্ষিত হয় তা ভাবনার জগতে নবতম সংযোজন—

অরণ্যচারী জীবন

জীবনধারণের উপাদান অরণ্য থেকে সংগৃহীত

আদিবাসী সংস্কৃতি নগরায়ন

জৈবিক দ্রব্যের পরিবর্তে রাসায়নিক ব্যবহার

নাগরিক সংস্কৃতিতে আদিবাসী দ্রব্য পন্যায়ণ

রাসায়নিক দ্রব্য বর্জন জৈব দ্রব্য গ্রহণ

অরণ্যের সন্ধান

এতে এটুকু বুঝতে অসুবিধে হয় না আদিবাসী সংস্কৃতি বিশ্ববাজারে অত্যাধুনিক সংস্করণ। যেমন— চাকরির ক্ষেত্রে, ব্যবসার ক্ষেত্রে, পরিষেবার ক্ষেত্রে ইত্যাদি। আজ আমরা যে-কোনো শপিংমলে বাজার করতে গেলে জৈব বা অর্গানিক পণ্যের সঙ্গে পরিচয় হতে বাধ্য। এবং আশ্চর্যের কথা এই জৈবজাত দ্রব্যগুলির প্যাকেটে আদিবাসী মার্কা বা ছাপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। তা সে ব্রাউন রাইস, অর্গানিক টি, অর্গানিক সল্ট, এমনকি জৈব জুতো, জামা কাপড় সবকিছু আদিবাসী নামক ব্যানারের আড়ালে বিক্রি হচ্ছে। আদিবাসী সমাজের আত্মিক চাহিদা না জেনে বিশ্ব আঙ্গিকে সাংস্কৃতিক মিশ্রণ একটি ভুল ধারণা।

বিপন্ন ভাষী আদিবাসীদের কাব্য, সাহিত্য, চিত্রকলা, সঙ্গীত থেকে শুরু করে পোশাক-পরিচ্ছদ, দেহসজ্জা, গৃহসজ্জা, উৎসব সব কিছুতেই নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে কিছু পরিমাণে সার্থকতা অর্জন করেছে, অথচ তাঁদের সাংস্কৃতিক-জীবনে আধুনিক বঙ্গীয় প্রভাব ছাড়াও হিন্দি, নেপালি, ওড়িয়া, বিহারী প্রভৃতি সংস্কৃতির প্রভাবও কম নেই। এর মূল কারণ বিপন্ন ভাষীরা এই সব ভিন্নমুখী সংস্কৃতির সমন্বয় সাধনে সমর্থ হয়েছে। অতএব বঙ্গসংস্কৃতি ও বিপন্ন ভাষা-ভাষীদের সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে আমাদের আদিবাসী জীবনেও এই সঙ্কট বা সংঘাত সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এজন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন তাদেরকে জানা। অর্থাৎ তারা কারা? কোথা থেকে তারা এল? তাদের ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত ও চিত্রকলার প্রকৃতি কীরূপ? তাদের উৎসব-অনুষ্ঠান, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য বা তার গ্রহণরীতি ইত্যাদি। এই আত্মপরিচয় জানবার পরই আমরা স্থির করতে পারব কতখানি সংরক্ষণ তাদের প্রয়োজন বা তারা কতখানি প্রগতিশীল? জাতীয় জীবনে তাদেরকে না জানলে তাদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর নয়। যে-সব ভিন্ন জাতি বঙ্গভূমিতে এসেছে তারা কিছু না কিছু সাংস্কৃতিক ছাপ রেখে গেছে বা নিয়ে গেছে। সুতরাং আজ বিপন্ন ভাষীর পরিচয় জানতে গেলে সাংস্কৃতিক ভারসাম্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলার জীবনে যে-সব আদিবাসী সংস্কৃতির ছাপ পড়েছে তাকে দূরে সরিয়ে না দিয়ে একটি সমন্বয় সাধন করে বঙ্গীয় স্বরূপকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বাঙালি ও বাংলার আদিবাসীদের সংস্কৃতি বলতে তাঁদের সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, ভোজনরীতি, পোশাক, উৎসব, অনুষ্ঠান ইত্যাদিকে বোঝানো হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই এই সংস্কৃতি বঙ্গীয় সংস্কৃতির একটি ধারা। তবুও আদিবাসীদের স্বকীয় কিছু বৈশিষ্ট্য বঙ্গীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতিকেও আলাদা করে। তাই নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ছাপ বা চিহ্ন এর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। যেমন— সাঁওতাল, মুণ্ডা, ওঁরাও, কোড়া, ভূমিজ গোষ্ঠীর আদিবাসীদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সামাজিক রীতিনীতি তথা নানান লোকসংস্কৃতির সঙ্গে বঙ্গীয় অনেক পরম্পরার মিল লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু নিবিড় ভাবে দেখলে বাঙালি সংস্কৃতি তথা প্রত্যেক আদিবাসী গোষ্ঠীর সংস্কৃতিতে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।

বাঙালির ভাষা সংস্কৃতিতে বিপন্ন ভাষীদের প্রভাব :

বহু বৈচিত্র্যময় ও নানা মাত্রা যুক্ত বাঙালির জাতি জীবিকা, বাংলা ভাষা, বাঙালির খাদ্য, বাঙালির পোশাক পরিচ্ছদ, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি, বাঙালির খেলাধুলা, পদবী, বার-ব্রত কথা, বিবাহ, দেবদেবী, শাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি অতীত দেখলেই সুস্পষ্টরূপে ধরা পড়ে। আর্যপূর্ব বঙ্গভূমিতে যাদের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি ছিল তারা অস্ট্রিক গোষ্ঠীর। এদের পাশাপাশি অবস্থান করত দ্রাবিড়। মঙ্গোলীয় মানুষদের উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে আধিক্য ছিল। সেন আমল পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত ছিল। এই গোষ্ঠীগুলির অবদানে বঙ্গ সুসজ্জিত হয়েছে। এই সাজগোজ ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ভৌগলিক মানচিত্র ইত্যাদি নির্মাণ ও বিকাশে সাহায্য করেছে। অস্ট্রিক ভাষার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে বঙ্গের মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলি, ২৪ পরগনা, বীরভূম, মালদহ ইত্যাদি অঞ্চলে। অন্যদিকে দ্রাবিড় ভাষার প্রভাব বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যায় রাঢ়ভূমি, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে। ভোটধর্মী ভাষার প্রভাব উত্তরবঙ্গ, বাংলাদেশ, আসাম, ত্রিপুরার বাঙালিদের মধ্যে গভীরতর। এমনকি বাঙালির জীবনে নাচের পরিবেশ আদিবাসী তথা বিপন্ন ভাষী লোকনৃত্যের প্রভাবজাত।১০

আজকের বাঙালি জাতি পূর্বতন জীবিকাগুলি বর্তমান আদিবাসী জীবিকার একটা স্বরূপ। যেমন— কামার, ডোম, পাটিকর, লোহার, জেলে, চন্ডাল ইত্যাদি। বাঙালির মাছ-ভাত সপ্ত ব্যঞ্জন ইত্যাদিতে বহু আদিবাসী গোষ্ঠীর রান্নাঘর ঢুকে পড়েছে। বাঙালির শাড়ি, ধুতি, কৌপিন ইত্যাদি বস্ত্র আদিবাসীদেরই আবিষ্কার। বাঙালির নিজস্ব কৃষিজ দ্রব্য ধান, কলা, বেগুন, লাউ, লেবু, পান, সুপারি, হলুদ, ডুমুর, কামরাঙ্গা, নারিকেল ইত্যাদি অস্ট্রিকদের থেকে প্রাপ্ত। অস্ট্রিক ভাষা কর্পাস (থেকে কার্পাস), মেরা (থেকে ভেড়া), কপট (থেকে পট্টবস্ত্র) আজ বাঙালির দ্রব্য হিসেবে পরিগণিত। প্রকৃতি পূজাও অস্ট্রিকদের থেকে বাঙালি লাভ করেছে।১১ একই রকম ভাবে দ্রাবিড় সংস্কৃতির প্রভাব বাংলার তাম্র-প্রস্তর যুগের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। পূজা, পুষ্প, কলা, ব্রীহি ইত্যাদি শব্দ দ্রাবিড় ভাষা থেকে উদ্ভূত। বিলাসপ্রিয় বাঙালির শিল্পকলা বা নগরায়ন পরোক্ষভাবে বাঙালির জীবনে দ্রাবিড়রাই নিয়ে এসেছিল।১২ ভোটবর্মী ভাষার প্রভাব কোচ, হাজং, মেচ, চাকমা, গারো, বোড়ো, ত্রিপুরী, রাজবংশী ইত্যাদি ভাষার মধ্য দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছে।১৩ বাংলার বঙ্গালী, ঝাড়খন্ডী, কামরূপী, বরেন্দ্রী প্রভৃতি উপভাষাগুলিতে স্থানীয় বিপন্ন ভাষার ধ্বনিগত, রূপগত, শব্দভান্ডারগত, রীতিগত সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। কেবল ভাষা বা স্থান নাম নয়। বাঙালির আচার অনুষ্ঠানে বিপন্ন ভাষীর প্রতিফলন লক্ষ্য করতে পারি। এ বিষয়ে সুধীর কুমার করণ বলেছেন— পশ্চিমবাংলার সর্বত্র না হলেও কয়েকটি জেলাতে সাঁওতাল ভূমিজ-মুণ্ডা-ওরাওঁ-লেপচা-ভুটিয়াদের সংখ্যা অনেক। এদের সকলেরই নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি বর্তমান। পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক বৃত্তে এদের সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো সর্বত্র ছড়ানো; যদিও কোনও কোনও অঞ্চলে বিশেষ বিশেষ উপজাতির সংখ্যাধিক্য আছে। এদের বর্জন করে পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক লোকসংস্কৃতি সম্মানিত হতে পারে না। বরং একথা দৃঢ়ভাবেই বলা যায় যে লোকসংস্কৃতির যথার্থ স্বরূপটি এইসব উপজাতির মধ্যেই বিস্তৃত।১৪

জন্ম-মৃত্যু, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদির ধর্মীয় সংস্কৃতির অনার্য উত্তরাধিকার বাঙালিকে বাঙালি হতে সাহায্য করেছে। দ্রাবিড় প্রভাব বিষয়ে অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ বলেছেন— “কোন কোন ধর্ম-ব্যাপারে বাঙালী দ্রবিড় প্রভাব এড়াইতে পারে নাই। ইহাদের কতকগুলি পূজাপদ্ধতি, রীতিনীতি নিম্নস্তরের ভিতর দিয়া বাংলার নানা স্থানে বিশুদ্ধাকারে পরিণত হইয়াছিল। দ্রবিড়দিগের উপদেবতা প্রভৃতি বাঙালীদিগের মধ্যে দেবতায় পরিণত হইয়াছে। শীতলা, কালভৈরব প্রভৃতি তাহার দৃষ্টান্ত স্থল। বাসুদেব ও যুগলমূর্তির পূজা বাংলা দ্রবিড়দের নিকট হইতে গ্রহণ করিয়াছে। শক্তি পূজার বীজ দক্ষিণ ভারতেই প্রথম উপ্ত হয়। বাঙালীর পূজায় বলি দ্রবিড়েরই অনুকৃতি। শিবপূজা, কালীপূজা ও হোলিকোৎসব দ্রবিড় হইতেই বাংলা গ্রহণ করিয়াছে।”১৫ শক্তি পূজা, প্রকৃতি পূজা ইত্যাদির অনুসঙ্গগুলো এখনো বিপন্ন ভাষীদের পূজনীয় বিষয়। এ বিষয়ে অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ বলেছেন— “পঞ্চম শতকের পূর্বে শক্তি পূজা বঙ্গদেশে ছিল না। দ্রবিড় সম্পর্কেই বাংলায় এই উপাসনার বিস্তৃতি হইয়াছিল। দ্রবিড় দেশে পৃথ্বী-পূজা হইতেই শক্তি পূজার প্রথম উদ্ভব হয়। সেখানে গ্রাম দেবতা পৃথ্বী, ভূদেবী বা ভূমিদেবীরূপে পূজিত হইতে হইতে ক্রমশ শক্তি রূপে পরিণত হইয়াছেন।”১৬ অতএব আমাদের ধর্ম সংস্কার ও সংস্কৃতিতে বিপন্ন ভাষীদের ছাপ মুছে ফেলা সহজ নয়।

ছড়া, ধাঁধাঁ, লোকসংগীত, লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির পরতে পরতে আদিবাসীদের চিহ্ন খুঁজে পায়। বাংলা ছন্দ বিশেষ সুহৃদকুমার ভৌমিক বলেছেন— বাঙলা ছন্দের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠেছে সাঁওতাল মুণ্ডাদের syllabic metre বা দলবৃত্তরীতির উপর, যা কীনা বাঙলার মাটির ছন্দ বা ছড়ার ছন্দ। আবার বাঙলা গদ্যের বাক্যবিন্যাস। কখনওই সংস্কৃত, এমনকী প্রাকৃতকে অনুসরণ করতে পারেনি।১৭ বাংলা শব্দভাণ্ডারে বিপন্ন ভাষাভাষী প্রভাব বাংলা অভিধানের কুড়ি শতাংশের বেশি। এ বিষয়ে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘আর্য অনার্য’ প্রবন্ধে বলেছেন, “বাঙালি জাতি হচ্ছে মূলত মিশ্র অনার্য জাতি, আর্য্য ভাষা আর আর্য্য সভ্যতা নিয়েছে মাত্র, তাও খুব প্রাচীন কালে নয়। বাংলাভাষার রীতিনীতি হচ্ছে আর্য্যেতর উপাদান, অর্থাৎ ধাতু শব্দ প্রভৃতি আর্য্যভাষার, কাঠামো বা রূপ হচ্ছে অনার্য্য। বাঙলা ভাষার ঠিক ইতিহাসটি বার হলে যে জাতের মধ্যে এ ভাষার উদ্ভব; সেই বাঙালী জাতের সম্বন্ধে অনেক গুপ্ত রহস্য প্রকাশিত হবে। বাঙলার অনার্য্যভাষীর মুখে মাগধী অপভ্রংশ বদলে বাঙলা ভাষায় পরিবর্তিত হয়েছে। বাঙলা ভাষার চর্চায় প্রাকৃত সংস্কৃত পড়া দরকার, কিন্তু কোল-দ্রাবিড়-বোড়োর চর্চাও বাঙালীর ভাষার আর জাতীয় উৎপত্তির আলোচনার পক্ষে খুব বিশেষভাবে উপযোগী’।”১৮

বঙ্গভূমিতে বসবাসরত বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকের নিজস্ব ধরনের জীবনধারা, সংস্কৃতি ও ভাষা প্রচলিত রয়েছে। বলতে গেলে এই আদিবাসী সংস্কৃতি হল বঙ্গভূমির চিরায়ত লোকসংস্কৃতির পশ্চাৎভূমি। এদের অনেক লোকাচার, দৃষ্টিভঙ্গিজাত কল্পনা বাংলার লোকায়ত সমাজের সঙ্গে একাকার হয়ে জড়িয়ে আছে। আদিবাসীরা বাংলার লোকায়ত সমাজধারার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর পারস্পরিক প্রভাব পড়েছে বাংলা সাহিত্য ও শিল্পেও। বিপন্ন ভাষীদের জীবনধারাকে অবলম্বন করে রচিত হয়েছে গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, চলচ্চিত্র, লোকসাহিত্য, প্রবন্ধ, চারুশিল্প ইত্যাদি। এছাড়া নতুন প্রজন্মের তরুণদের হাতে আদিবাসী জীবননধারাকে উপজীব্য করে রচিত হচ্ছে কবিতা, নাটক, চলচিত্র, উপন্যাস, চিত্রকর্ম, লোকগাথা গল্প, প্রবন্ধ, চারুশিল্প, প্রামাণ্যচিত্র। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে আদিবাসী সাহিত্যিক কবি-শিল্পীদের হাতেও বাংলাভাষায় রচিত অসংখ্য লেখালেখির খবর পাওয়া যায়। বিভিন্ন আদিবাসী লেখকের গদ্য, কবিতা ও সমাজ পরিবেশ বিষয়ে আদিবাসী চিন্তাধারার সঙ্গে যেমন আমাদের পরিচয় ঘটছে, বাংলাভাষা ও সাহিত্যও এদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সৌকর্যময় হয়ে উঠছে। অনুবাদও কম হয়নি তা বর্তমান গবেষণাপত্র দেখলেই বোঝা যাবে।

বিপন্ন ভাষাগুলি দীর্ঘকাল আদিবাসী ভাষা হিসেবে বঙ্গভূমিতে প্রচলিত। বিপন্নভাষী-রা দীর্ঘকাল ধরে অন্য আরেকটি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বসবাস করে চলেছে। ফলে এই দুটি বিশিষ্ট এবং বিপরীতধর্মী জনগোষ্ঠীর অতি-নিকট সহযোগ পারস্পরিক রীতিপদ্ধতির আদান প্রদান ঘটিয়েছে। বঙ্গের বেশিরভাগ মানুষ হিন্দু ও ইসলাম ধর্মে অনুসারী। এছাড়া বঙ্গে বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ বসবাস করে। বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী (বিপন্ন ভাষী সহ) এখানে বসবাস করে এবং তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বঙ্গের মানুষের সংস্কৃতির যে বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান তা এই সংস্কৃতিকে অন্য সংস্কৃতি থেকে আলাদা স্বকীয়তা দান করেছে। জৈন-বৌদ্ধ-হিন্দু প্রভৃতি বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, শ্রাদ্ধ-সম্পর্কিত বিশ্বাস ও সংস্কার, আরাধ্য দেবদেবীর মূর্তি কল্পনা; জন্মান্তরবাদ, পরলোক, প্রেতলোক, পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ ও পিণ্ডদান, নান্দীমুখ, আভ্যুদায়িক—বাঙালির ধর্মীয় ও সামাজিক আচারে এ সমতের অনুসরণ আদি-অস্ট্রিকদের অনুকরণেই।১৯ অস্ট্রো-এশীয় গোষ্ঠীর কোল, মুণ্ডা, সাঁওতাল, বুননা, শবর, খাসিয়া, রাজবংশী প্রভৃতি আদিবাসীজনদের মতই বিশেষ বিশেষ গাছ, পাথর, পাহাড়, ফুলফল, পশুপক্ষী ইত্যাদিতে ঐশীসত্তা আরোপ করে পূজা বাঙালি লোকসংস্কৃতিতে আর্য-পূর্ব সভ্যতার প্রভাবেরই পরিণতি। বট, অশ্বখ, সেজিমনসা বা সেজু প্রভৃতি গাছের উদ্দেশ্যে পূজা নিবেদন, সিঁদূর লেপন, সধবা বন্ধ্যানারিদের সন্তান কামনায় ও অন্যান্য বাসনা চরিতার্থের জন্য গাছের ডালে ঢিল বা ভারা বাঁধা আজও বাঙালি সমাজে প্রচলিত; তুলসী গাছের প্রতি বাঙালি নারীর ভক্তি-শ্রদ্ধার ব্যাপারতো সর্বজন বিদিত। নানা ব্ৰতানুষ্ঠানে প্রতীক হিসাবে গাছের ডালের ব্যবহার, মঙ্গলানুষ্ঠানে ঘটে আম্রপল্লবের, বাড়ির বাইরে দরজার দুদিকে এবং অন্য ক্ষেত্রে কলাগাছের ব্যবহার, কলাবৌয়ের পূজা, ধান ও ধানের ছড়ার ব্যবহার; নানা উপলক্ষে অনুষ্ঠান স্থানে ও গৃহে শিল্পশ্রীমণ্ডিত আল্পনা দেওয়া এ সবই কেবল বাঙালি লোকসংস্কৃতিতে আর্যপুর্ব ঐতিহ্যের ধারাই নয়, এর মধ্য দিয়ে আর্যপূর্ব বাঙালিজনের কৃষি ও প্রজনন শক্তি সম্পর্কে গভীর সংস্কারই ব্যক্ত হয়ে আসছে।২০ অন্যদিকে ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে বঙ্গসংস্কৃতিতে প্রাক্‌-বৈদিক প্রভাব প্রসঙ্গে লিখেছেন- সংস্কৃতির সূতিকাগার হল আদিবাসী সংস্কৃতি এবং যুগ যুগ ধরে এই আদিবাসী সংস্কৃতি বাংলার সমাজজীবনকে প্রভাবিত করেছে। ফলে, বাংলার সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে। আদিবাসী সংস্কৃতির মধ্যে অষ্ট্রিকভাষী জনগোষ্ঠীর প্রভাবই সর্বাধিক বাংলার পূজা-পার্বণ, উৎসব-অনুষ্ঠান গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এই আদিম সংস্কৃতির ধারাটিকে চিনে নিতে কষ্ট হয় না।২১ বাঙালির লোকসংস্কৃতির তার ধর্মকর্মের মূল নিহিত আছে প্রাচীন বাংলার সংখ্যাতীত কৌমের আদিবাসীদেরই ধর্মকর্ম, নানা সংস্কার ও বিশ্বাস, পূজা ও বিভিন্ন লোকাচারিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মধ্যে। বিভিন্ন সময়ে আগন্তুক বিবিধ নরগোষ্ঠী ও তাদের সভ্যতা-কৃষ্টির সংস্পর্শে এসে ক্রমাগতই বাঙালি জাতি তার সমাজ ও সংস্কৃতিকে নানাভাবে পরিপুষ্ট করেছে, কিন্তু অস্ট্রিক-সমাজ-কেন্দ্রিক বাঙালি সভ্যতার যে মৌল ভিত্তি, আপ্সীয় সংমিশ্রণে যা আরো দৃঢ় ও ঋদ্ধ হয়ে ওঠে প্ৰাগাৰ্যকাল থেকেই, তার জের বাঙালি জনসমাজের নানা স্তরে, বিচিত্র আচার-অনুষ্ঠানে আজও চলে আসছে—আর্য বা পরবর্তী সময়ের অন্য কোন সভ্যতার প্রভাব সেখানে তেমন গভীরভাবে কার্যকরী হয়নি।২২ বাংলার প্রাচীন শাসন ব্যবস্থার আদি রূপ বিপন্নভাষীদের শাসন পদ্ধতির অন্যতম অংশ। পঞ্চায়েত, সালিশি, সভা ইত্যাদি আদিবাসী সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী। আর্যপূর্ব বাঙালি সভ্যতার দুটি স্তর; প্রথম স্তরের সভ্যতা গ্রামকেন্দ্রিক, কৃষিনির্ভর এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক আচরণের ক্ষেত্রে অনেক বেশী আদিমতাগন্ধী। এই স্তরের সভ্যতা প্রধানত অস্ট্রিকভাষী জনসাধারণের সভ্যতা। দ্বিতীয় স্তরের সভ্যতা তুলনামূলকভাবে অর্বাচীন, গ্রামকেন্দ্রিক হলেও নগরসভ্যতা অনুপস্থিত নয়; বৈষয়িক ক্ষেত্রে চাষবাস প্রধান হলেও কিছু কিছু গ্রামীণ কুটীরশিল্প এবং অন্তর্দেশীয় ও বহির্বাণিজ্য প্রচলিত ছিল; সামাজিক-সাংস্কৃতিক আচরণ অনেক বেশী উন্নত।২৩

বিপন্ন ভাষীদের ভাষা-সংস্কৃতিতে বাঙালির প্রভাব :

বঙ্গীয় পরিমণ্ডলে অবস্থিত বিপন্নভাষীদের জীবন ও সংস্কৃতিতে বাঙালির প্রভাব প্রায় হাজার বছরের ইতিহাস। ঐতিহাসিক তথ্য অনুমানে কখনো কখনো বাঙালি এবং বিপন্নভাষীরা একই গোষ্ঠী জাত বলে মনে হয়। বিভিন্ন সময়ের ভাষার সমাজতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বঙ্গের আদিবাসী ভাষাগুলির বহু কথক নিজস্ব মাতৃভাষার ত্যাগ করে অন্য ভাষা গ্রহণ করেছে। বঙ্গভূমিতে বসবাসরত বিভিন্ন বিপন্ন ভাষাভাষী মানুষের জীবনে বাঙালি প্রভাব চৈতন্য পরবর্তী সময় থেকে লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান শতকে এই প্রভাব বিষয়ে বিভিন্ন বিপন্ন ভাষা গবেষক, সংস্থা তথা সরকার যথেষ্ট পরিমাণে আগ্রহী। কিন্তু ইংরেজ আগমনের শুরু থেকে বিপন্ন ভাষার পূর্বতন প্রতিনিধিরা এই প্রভাব বিষয়ে সচেতন ছিলেন। বিভিন্ন আদিবাসী বিদ্রোহগুলি এর সাক্ষ্য বহন করে। বাঙ্গালীদের চারিপাশে বসবাসরত এই বিপন্নভাষীদের জীবনে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির প্রয়োজন মেটাতে বাঙালিরা চাপিয়ে দেন অন্‌আদিবাসীদের জীবন পদ্ধতি। হোটেল, চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁ, ভিডিও পার্লার, খনিজ ও বনজ সম্পদ কেনার জন্য বিভিন্ন মানুষের আনাগোনা। যেমন— ট্রাক ডাইভার, ব্যাপারীদের যাতায়াত তাদের জীবনে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

ধনতান্ত্রিক জীবনযাত্রার চাবিকাঠি যাদের হাতে থাকে তাদেরকে গ্রহণ করেই সমাজ এগিয়ে চলে। বিপন্নভাষীরা এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম নয়। পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতিনীতি, খাদ্যদ্রব্য, চালচলন সবক্ষেত্রে রূপান্তর ঘটেছে। বাঙালির জামা কাপড় শাড়ি-ব্লাউজ আদিবাসীদের আজ প্রধান পোশাক-পরিচ্ছদ। জলপাইগুড়ি জেলার চা বাগানে, পুরুলিয়া জেলার খনিজ অঞ্চলগুলিতে, বাঁকুড়া মেদিনীপুরের বনাঞ্চলগুলিতে, বর্ধমানের কলকারখানায় এছাড়া বঙ্গের কৃষিজমিতে কাজের সন্ধানে আসা বিপন্ন মানুষগুলোর ভাষা সংস্কৃতি পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে। তা না পাল্টালে কাজই পাবে না। সে ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক। বিবাহজাত প্রভাব বিপন্নভাষীদের পরিবারগুলিতেও লক্ষ্য করা যায়। অন্য ভাষা সংস্কৃতির মানুষকে বিবাহের বন্ধনে বাঁধতে গেলে সেটিরও কিছু গ্রহণ করতে হয়। এই গ্রহণ প্রতিগ্রহণে উভয় ভাষাতেই পরিবর্তন আসে। কিন্তু ক্ষমতাশালী ও বিপন্ন ভাষার সংমিশ্রণে ক্ষমতাশালী ভাষা প্রাধান্য পায়। এবং বিপন্ন ভাষা আরও বিপন্ন হয়ে যায়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার বাঙালি ও আদিবাসী মানুষদের সংমিশ্রণ দেখলে বিপন্ন ভাষী জনজীবনে বাঙালি প্রভাবের ভয়াবহতা বুঝতে পারব২৪

জনগণনা সাল১৮৭২১৯০১১৯৫১১৯৮১১৯৯১২০১১
আদিবাসী৬১,৯৫৭১১৬,০০০২৬১,৫৩৮৪৪১,৭৭৬৫০১,১৪৪প্রায় ৯ লক্ষ
শতাংশ৯৮%৯৩%৯১%৫৯%৫১%৪৭%
বাঙালি১০৯৭৮৭৬২২৬১৫০৩০৪৮৭৩৪৭৩৩০১প্রায় ১০ লক্ষ
শতাংশ২%৭%৯%৪১%৪৯%৫৩%
মোট৬৩০৪৫১২৪৭৬২২৮৭৬৮৮৭৪৬৬৪৯৯৭৪৪৪৫প্রায় ১৯ লক্ষ

উপরের ছক থেকে পার্বত্য আদিবাসী এলাকায় বাঙালি জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং তাদের সংখ্যা লঘু হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা উপলদ্ধি করা যায়। বঙ্গভূমিতে শিক্ষার বিস্তারে বিপন্ন ভাষাগুলির অবস্থানও সংকীর্ণ। কর্মক্ষেত্রে এই সংকীর্ণতা আরো বেশি। অতএব কোনো বিপন্নভাষী অভিভাবক নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের কল্পনায় বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি ভাষায় পঠন-পাঠনে বেশি আগ্রহী।

আদিবাসীদের অনেক উৎসব বর্তমান আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ বলে গণ্য হয়। যেমন— শিকার উৎসব। এজন্য এখন আর বিপন্ন ভাষীর অনেক গোষ্ঠী শিকারে যায় না। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যাধুনিক যুগে যত বাড়তে থাকবে বিপন্নভাষীদের নিজস্ব ভাবনা চিন্তা ততই বিলুপ্ত হতে থাকবে। আগে বিভিন্ন বিপন্ন ভাষাগোষ্ঠীর বিবাহ রীতিতে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। অনেক গোষ্ঠীদের সাতদিন পর্যন্ত বিবাহ অনুষ্ঠান হত। বর্তমান কর্মসংস্থান, কর্মক্ষেত্র ও কর্মের সময় ইত্যাদি কারণে একরাতেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বিয়ের নীতি-নিয়মে কাটছাঁট করা হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে কাটছাঁট করা হয়েছে। এছাড়া পণপ্রথা, নগদ মূল্যের লেনদেন ইত্যাদিও বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীর আধুনিক প্রযুক্তি, যেমন— ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম আদিবাসী জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করছে। এছাড়া ইন্টারনেট, মোবাইল, টিভি ইত্যাদির কারণে বিপন্ন ভাষাভাষীরা তাদের চিরাচরিত নাচ গানের ছন্দ পাল্টেছে, ভঙ্গি পাল্টেছে। এর পূর্বে স্বাধীন ভারতের আদিবাসী উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যবস্থাপনা আদিবাসীদের তথা বিপন্ন ভাষীদের জীবনে (ভাষা-সংস্কৃতিতে) আমূল পরিবর্তন এনেছে। অতএব বিপন্ন ভাষাগুলির ভাষা-সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রগুলি হল— শিক্ষায় ভাষার অধিকার কমিয়ে আনা, চাকুরি তথা জীবিকার জন্য স্থানীয় ভাষা গ্রহণ, দোকান হোটেল ইত্যাদি সাধারণ স্থানগুলিতে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার, পরিবহন বা যাতায়াতে বহু ভাষার প্রভাব, সরকার পরিচালিত প্রকল্পগুলিতে ক্ষমতাশালী ভাষার ব্যবহার, এছাড়া ধর্মীয় প্রভাব, পোষাক পরিচ্ছদের প্রভাব, গণমাধ্যম (রেডিও-টেলিভিশন, সিনেমা, টেলিফোন) ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব। সাহিত্য-সংস্কৃতি, সঙ্গীত, লোককাহিনি, বিজ্ঞাপন ইত্যাদিতে প্রভাব। ধর্মীয় প্রভাব বিষয়ে এ কে শেরাম লিখেছেন— “গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রচার ও প্রসারে মনিপুরী জনগণের সাহিত্য সংস্কৃতি তথা ধর্মবিশ্বাসে ঐক্যের ফলে বাঙালি ও মণিপুরীদের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।”২৫ বঙ্গের অনেক বিপন্ন ভাষাভাষী সুদূর অতীতে তাদের মাতৃভাষা ত্যাগ করে বাঙালি হয়ে উঠেছেন। অথবা কেউ কেউ মিশ্র অবস্থানে রয়েছে। মুন্ডা, ওরাও, শবর, লোধাদের বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই নিজস্ব মাতৃভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত নয়। অতএব আমরা দেখলাম বিপন্ন ভাষাভাষী গোষ্ঠীর মানুষদের জীবনে অর্থাৎ ভাষা, সামাজিক গঠন ও পরিবার, খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাড়িঘর, ধর্ম, পূজা-পার্বণ, উৎসব-অনুষ্ঠান, আচার-বিচার, বিনোদন, শিক্ষা, জীবিকা, রাজনীতি, প্রশাসনিক কাজকর্ম, প্রযুক্তি, পরিষেবা ইত্যাদি বাঙালি প্রভাব পড়েছে।

উপসংহার :

দীর্ঘকাল ধরে নানা ধরনের নিপীড়ন, অত্যাচার এবং শোষণের শিকার এই বিপন্ন ভাষা সম্প্রদায় বহুক্ষেত্রে ভাষা চর্চার নিম্নে স্থান পেয়েছে। এদের সযত্নে এড়িয়ে যাওয়ার দীর্ঘকালের মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে এদের সামগ্রিক উন্নয়নে বর্তমান প্রশাসন, সংস্থা, তথা ব্যক্তি বিশেষে দায়বদ্ধতা স্বীকার করেছে। বিপন্ন ভাষা একটি বিশ্বজনীন বিষয়। এরা মূলত আঞ্চলিক ভাষা গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত। কোনো এক বিপন্নভাষা গোষ্ঠীর প্রথাসিদ্ধ আইন, সামাজিক মূল্যবোধ, নিয়মাচার এবং ঐতিহ্যাবলী ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক সীমানার মধ্যে বসবাসকারী ঐ একই ধরনের বিপন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অপরিবর্তিত থাকবে। কাজেই সামাজিক বিভাজনগুলির সঙ্গে বিপন্ন ভাষীদের বিভাজন করলে তার আলোচনা ও প্রস্তাবনা কোনোদিনই ফলপ্রসূ হবে না। তবে একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, কোনো এক বিশেষ সামাজিক সীমানার মধ্যে দীর্ঘকাল বসবাস করলে কোনো বৃহৎ বিপন্ন গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্ট শাখাটি ঐ অংশের ভাবধারা এবং পারিপার্শ্বিকতায় প্রভাবিত হবেই। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের আদিবাসী নেতা প্রমোদ মানকিন যথার্থ বলেছেন— “ভূমি সমস্যা, নিপিড়ন, অবহেলা সবকিছুর পরও আদিবাসী মানুষের মুখে হাসি মুছে যায় না। আদিবাসীরা আনন্দে থাকতে ভালবাসে। তাদের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য সংখ্যগরিষ্ঠ মানুষকেই উদ্যোগী হতে হবে।”২৬

তথ্যসূত্র :

১. বিশ্বাস, অশোক। বাংলা ভাষায় ভোটবর্মী ভাষার প্রভাব। ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ২০০৮। পৃ. ১

২. বাগচী, যতীন। জাতি-ধর্ম ও সমাজ বিবর্তন। কলকাতা: সঞ্জীব প্রকাশন, ১৯৯০। পৃ. ২৮

৩. মুখোপাধ্যায়, সুভাষ। বাঙালির ইতিহাস। কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। ১৯৯৭: পৃ. ১২

৪. চট্টোপাধ্যায়, সুনীতিকুমার। বাঙ্গালীর সংস্কৃতি। কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ২০০৫। পৃ. ১২

৫. চট্টোপাধ্যায় : ১৪১৭ ব : ২২৫

৬. ইব্রাহিম : ১৯৯০ : পৃ. ২

৭. সুর, অতুল। বাঙলা ও বাঙালীর বিবর্তন। কলকাতা: সাহিত্যলোক। Pdf। পৃ. ৪০

৮. বিশ্বাস, অশোক। বাংলা ভাষায় ভোটবর্মী ভাষার প্রভাব। ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ২০০৮। পৃ. ৪

৯. ঐ পৃ. ৬-৭

১০. করণ, সুধীর কুমার। লোকায়তিক। বর্ধমান : বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০৪। পৃ. ৬১

১১. চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর। গৌড়-বঙ্গের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (প্রথম ভাগ)। কলকাতা, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, ২০০৩। পৃ. ৩৬

১২. ঐ পৃ. ৩৬-৩৭

১৩. বিশ্বাস, অশোক। বাংলা ভাষায় ভোটবর্মী ভাষার প্রভাব। ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ২০০৮। পৃ. ৫

১৪. করণ, সুধীর কুমার। লোকায়তিক। বর্ধমান : বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০৪। পৃ. ৫৮-৫৯।

১৫. বিদ্যাভূষণ, অমূল্যচরণ। অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ রচনাবলী (তৃতীয় খন্ড), কলকাতা : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, ১৯৯০। পৃ. ২৫১-২৫২।

১৬. ঐ পৃ. ২৫৭।

১৭. ভৌমিক, সুহৃদকুমার। বাঙলা ভাষার গঠন। কলকাতা : মনফকিরা, ২০১৩। পৃ. ৩৩।

১৮. চট্টোপাধ্যায়, সুনীতিকুমার। আর্য অনার্য : ১৪১৭ ব: : ২১৭ পৃ.

১৯. মুখোপাধ্যায়, সুভাষ। বাঙালির ইতিহাস। কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। ১৯৯৭: পৃ. ২৬-২৭।

২০. ঐ পৃ. ২৭।

২১. বাস্কে, ধীরেন্দ্রনাথ। বঙ্গসংস্কৃতিতে প্রাক্-বৈদিক প্রভাব। ভট্টাচার্য্য, মিহির। ‘লোকশ্রুতি প্রবন্ধ সংকলন’। কলকাতা : লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র, ১৯৯৯। পৃ. ৩৪৪

২২. মুখোপাধ্যায়, সুভাষ। বাঙালির ইতিহাস। কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। ১৯৯৭: পৃ. ১২।

২৩. ঐ পৃ. ১৩।

২৪. সিকদার, সৌরভ। বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষা-সংস্কৃতি ও অধিকার। ঢাকা : মাওলা ব্রাদার্স, ২০১৪। পৃ. ৬৬।

২৫. শেরাম, এ কে। বাংলাদেশের মণিপুরী,  পৃষ্ঠা ১০৬।

২৬. সাহা, পার্থ শঙ্কর । “মিলন ও সহযোগিতার অঙ্গীকারে আদিবাসী সাংস্কৃতিক উৎসব ২০০৭।” সম্পাদক ফিলিপ গাইন, ও পার্থ শঙ্কর সাহা। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংস্কৃতি, ৩৩-৪০। ঢাকা : সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, ২০০৭। পৃ. ১২৮।

* সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, দুর্গাপুর উইমেনস কলেজ, দুর্গাপুর।

+ posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *