হোমিসাইড

সায়নী সিংহ রায়

সারাদিন ল্যাপটপে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে আদিত্য। লকডাউনের সময় কাজের চাপও বেশি। কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট, মার্কেট রিসার্চ, নতুন রিক্রুটমেন্ট, প্রোডাক্ট লঞ্চিং এর মত যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব তার ঘাড়ে। এত বড় সেলস কোম্পানির উঁচু পোস্টটা যখন তাকে দেওয়া হয়েছিল, ভীষণ গর্ববোধ করেছিল নিজের উপর। বহুদিনের “মেহনত” ফল প্রদান করেছিল। অবশ্য হবে না-ই বা কেন? কোম্পানীতে তার চেয়ে বেশি শিক্ষিত লোক গোটা রিজিয়নে কয়েকজন আছেন হাতে গুনে।

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে অনেকগুলো অ্যাকাউণ্ট খুলে রেখেছে ও। সাথে কিছু চ্যাটিং অ্যাপে অজস্র দল, যাকে গ্রুপ বলে। ও গ্র্যাজুয়েট, নিজে মোটামুটি বানান করে বাংলা, ইংরাজি লিখতে পারে। তার উপর ক্লাস নাইনে ইতিহাসে ছাপ্পান্ন পেয়েছিল। এসব ভাবলেই গর্বে বুক ফুলে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি হয়ে যায়।

আজ কাজের চাপটা অন্যদিনের চেয়েও বেশি। কোম্পানির উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা তাকে প্রজেক্ট দিয়েছে নতুন। কোম্পানিকে রক্ষার গুরুদায়িত্ব পড়েছে আপনার উপর। একটি মেয়ের ছবি চ্যাটিং অ্যাপে পেয়েছে গতকাল রাত ১১ টায়। সে অন্য কোম্পানির একটি ছেলেকে ভালবাসে। ওর কোম্পানির কোনো লিখিত চুক্তিপত্র নেই, কবে যেন কে বলে দিয়েছিল  অন্য কোম্পানির কারোকে ভালবাসা অপরাধ। বা হয়ত বলেইনি। মাথায় বসে থাকা লোকজন ঠিক করে নিয়েছে এসব অপরাধ।

কোম্পানির অনেকে তো আবার নিম্নপদস্থ আর উচ্চপদস্থদের মধ্যেও দূরত্ব রাখায় বিশ্বাসী। 

যাক গে! মাথা থেকে ভাবনাচিন্তা গুলো ছুঁড়ে ফেলে দ্যায় আদিত্য। ওর কোম্পানিতে যুক্তি দিয়ে ভাবা বারণ। এসব ভাবছে কেউ টের পেলে –

অনেক ভেবে একটা প্রোফাইল থেকে মেয়েটার ছবি শেয়ার করে লিখল “এই খানকীটা অমুক কোম্পানির ছেলেটার কাছে শরীর বেচে টাকা নিয়েছে।” অন্য দুটো প্রোফাইল থেকে রাগ আর দুঃখ ইমোজি। সাথে “মা চুদে দেব” মন্তব্য।

ব্যস। হুড়মুড়িয়ে শেয়ার। সাথে অশ্লীল মিম, কমেন্ট এর বন্যা। প্রায় হাজার খানেক শেয়ার চার ঘণ্টায়। “মাদারচোদ” “বহেনচোদ” “বেটিচোদ” এখনকার ফ্যাশন। “রেন্ডি” পুরনো হয়ে গিয়েছে অনেকদিন হল।

রাতে খাবার অর্ডার বাতিল করেছে দুবার। খাবার দিতে আসা ছেলেটি অন্য কোম্পানির। জল বিস্কুট খেয়ে কাজে বসে পড়ে আবার। কোম্পানির মধ্যেই অজস্র বিরুদ্ধমত আছে। তাদের খুঁজে খুঁজে চিহ্নিত করে অন্যদের জানাতে জানাতে রাত গড়িয়ে গিয়েছে।

রাত ২টো বেজে ৫০। সন্ধে থেকে ঝড়বৃষ্টি হয়ে লোডশেডিং। ল্যাপটপে চার্জ শেষ। ফোনটা পাশে রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল ও। পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ করেছে, ফ্যান থেকে ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে চোখ খুলে তাকিয়ে আঁতকে উঠল আদিত্য।

ফ্যান থেকে নীলচে কুর্তি পরা একটা মেয়ের দেহ ঝুলছে। চমকে খাট থেকে নেমে দাঁড়াতেই মেয়েটা চোখ খুলল। কী বীভৎস! চোখগুলো ঠেলে বেরিয়ে আসছে, জিভটা ঝুলে পড়েছে।

টিং করে একটা মেসেজ ঢুকল চ্যাটে। ফোনের আলোয় চোখ গেল– “দাদা, সকালে যে মেয়েটার ছবি পঠিয়েছিলাম, একটু আগে নিজের বাড়িতে স্যুইসাইড করেছে”

আদিত্য জানে। মেয়েটির দেহটা এখনো ওর ঘরের ফ্যান থেকে ঝুলছে!

Website | + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *