সেইসব দিন ও কোয়ারেন্টিন

মাধুরী সেনগুপ্ত

এই অতিমারী শুরুর আগের গল্প এটা। তখনও বাসে, ট্রেনে তুমুল ভিড় করে লোকজন, কেউ ভিড়কে অভিসম্পাত দিতে দিতে অফিস যায়, কেউ বাড়ি ফেরে, কেউ জানেই না কোথায় যাচ্ছে, কেউ আবার ভিড়ে মিশে যাওয়ার অছিলায়  খুঁজে নেয় প্রিয় মুখ। সেই সময়ের কথা এটা। অন্য দিনের থেকে একটু তাড়াতাড়িই বেরিয়েছিলাম আমার ব্রাঞ্চ থেকে, ফেরার পথে অন্য একটি ব্রাঞ্চে কিছু কাজ ছিল। উদ্দেশ্য ছিল কাজ মিটিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ফেরার বাস ধরব। কপাল ভালই ছিল সেদিন, সেই ব্রাঞ্চে পৌঁছানোর পর বেশ ঝটপট কাজ মিটে গেছিল। নিজের ব্রাঞ্চে সে খবর দিয়ে  নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি যাব। সময়টা শীতের শেষ, বেশ তাড়াতাড়ি সন্ধে হয়, কিন্তু সেদিন আকাশটা অদ্ভুত হয়েছিল, একটা আলগা মেঘের ওপারে যেন কুপির আলো হয়ে পাটে যাচ্ছিলেন সূয্যিমামা। হাতে ব্যাঙ্কের কনফিডেনসিয়াল কাগজ নিয়ে আকাশ দেখা মানায় না, তাদের ব্যাগবন্দি করে ভাবলাম আগের মোড়েই বাসে উঠে পড়ি।  কিন্তু ওই, কী এক কারণে নাকি বাস বন্ধ সাময়িক, অগত্যা হাঁটা ছাড়া উপায় নেই।

শীতের সন্ধে ঝুপ করে নামে, কিন্তু অফিস ফেরতা পা বড় আস্তে চলে। টুকটাক অটো চলছিল কিছু, কিন্তু তারা আগেই রিজার্ভ। নিশ্চিন্ত হয়ে ভাবলাম, এই বাজারের ভেতর দিয়ে শহরের মূল বাসস্ট্যান্ডেই চলে যাই। বাস, অটো কিছু নিশ্চয় পেয়ে যাব। যেমন ভাবা তেমন কাজ, হাঁটা শুরু করলাম। ফুটপাথে দোকানে হঠাৎ চোখ পড়ল কিছু রোদচশমার দোকানে। কী অনায়াস আয়াসে পথচলতি মানুষ একটুকরো নিজেকে খুঁজে নিচ্ছেন সে আয়নায়। আসলে আমরা সবাই খুঁজি, সুযোগ পেলেই মিলিয়ে নিতে চাই কিছু নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণা।

আমাদের মফস্বলী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দাঁড়িয়ে আছি শুনলাম, বাস আসবে, একটু পর। অগত্যা অটোর গচ্ছা বাঁচানোর আশায় দাঁড়িয়ে রইলাম। এখানে বলে রাখা ভাল, এই শহরে শেয়ার অটো প্রায় চলেই না, নেহাত বাস স্ট্রাইক ইত্যাদি না থাকলে সে সুবিধা বিরল। তো যাই হোক, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই একটা চেনা গলা পেলাম। গলাটা যেদিক থেকে আসছিল, জায়গাটা ততোদিনে বেশ চোখ সইয়ে গেছে। জায়গা ঠিক নয়, চারমাথার মোড়ের একটা কোণ, গত বেশ কয়েকদিনের যাওয়া আসার পথে দেখা হয়ে গেছে, এন পি এ,  এন আর সি বিরোধী মঞ্চ। ফেরার সময় দু একদিন যখন বাস থেকে নামতাম, দেখতাম বিকেলে নানান বক্তা বক্তব্য রাখছেন। যেহেতু শহরের মেইন বাস টার্মিনাল,  চারপাশের বাস ঢোকে বেরোয়, সেই জায়গায় মঞ্চ, তাই প্রায়ই দেখতাম ওঁরা অফিস টাইমের ভিড়ে ট্রাফিক পুলিশের সাথে হাত মিলিয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছেন। ব্যাস এ’টুকুই। আমি এক বাস থেকে নেমে অন্য বাস ধরতাম বাড়ি ফেরার। বিভিন্ন চেনা লাইন, ভেসে আসত মাইক বেয়ে.. দেখতাম ভিটেয় দাঁড়িয়ে ভিটে আঁকড়ানোর লড়াই। চতুর্থ প্রজন্মের উদ্বাস্তুর কাছে ভিটে হারানোর হাহুতাশ নেই, স্রেফ কিছু গল্প রয়ে গেছে। আরও একবার এতগুলো বছর পেরিয়ে এসে সেই পুরোনো চিত্রনাট্য দেখতে দেখতে মনে হত, মানুষ আসলে নিজেরাই নিজেদের উদ্বাস্তু বানিয়ে রেখেছে, ভিটের সীমানা এঁকে নেই। এই যে অনন্ত আকাশ আর সুদীর্ঘ চরাচর প্রকৃতি তো দিয়েইছিল আস্ত দুনিয়া, দেশের গন্ডি কাটতে কাটতে কাঁটাতারে ঘিরতে ঘিরতে কবে যে আমরা নিজেদের পৌঁছে ফেল্লাম ব্যক্তিগত নো ম্যানস ল্যান্ডে, নিজেরাও টের পেলাম না।

সে যাই হোক, আমিই তো ব্যাঙ্কে নিয়মিত পরিচয় প্রমাণ পত্রের সাথে বাসস্থানের প্রমাণপত্র মিলিয়ে নেই হিসাব করে আমার কি আর বেহিসাবি হওয়া সাজে?!

কিন্তু সে’দিন মাইক্রোফোন উথলে যখন বরুণ গ্রোভারের ভীষণ জনপ্রিয় লাইনক’টা কানে ভেসে এল, তাতেই চোখটা পড়ল। মেয়েটি আমার পরিচিত। ওর দিদি আমার সই ছিল, এখন সে মেয়ে অন্য শহরে থাকে। কিন্তু এখন আগুনে গলায় যে মেয়েটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে লাইন আওরাচ্ছে, তাকে আমি একদম ছোট্ট থেকে চিনি। অতএব পায়ে পায়ে সেখানে পৌঁছানো গেল। মঞ্চটুকু ছাড়া বাকি সব্বাই খোলা আকাশের নীচে তখন, মেয়ে বলেই যাচ্ছে। শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, একটা শশ্মানে দাঁড়িয়ে আছি। যেখানে জ্বলে যাচ্ছে আমাদের ব্যক্তিগত ঈশ্বরবিলাস। যে শহরে আমার ছোট্ট বোনটাকে দাখিল করতে হচ্ছে প্রমাণপত্র,  সে শহর আমার নয়, সেই দেশ আমার নয়। মনে হচ্ছিল ওর শব্দগুলো বদলে বদলে যাচ্ছে,

দাউদাউ জ্বলছে ভারতআত্মা..

তাতে পাটকাঠির আগুন দিচ্ছি আমরা,

“মধুবাতা ঋতায়তে, মধুক্ষিরন্তি সিন্ধবঃ।”

হুঁশটা ফিরল, তুমুল মেঘের শব্দে। সমস্তটা উথাল-পাতাল করছিল। হাওয়ার লাক্সারি শহুরে জীবনে খুব কমই জোটে, সেদিন যেন হাওয়াগুলোর সাথে ঝড়ের কিছু বিশেষ চুক্তি হয়েছিল। হাওয়ারাও ওভারটাইম করছিল। বেমালুম ভুলে যাওয়া, ব্যাগে রাখা কাগজগুলোর কথা মনে পড়ল হুট করেই। মনে হল আর দেরী করা ঠিক না, সঙ্গে ছাতাও নেই। ভিজলে মুশকিল। অগত্যা রাস্তা পেরিয়ে বাসস্টপের দিকে হাঁটা লাগানো গেল। খুব স্বাভাবিকভাবেই অসম্ভব ভিড়, একে অফিসটাইম, তায় এতক্ষণ বাস ছিল না। প্রথম বাসটায় জাস্ট ওঠা গেল না। দ্বিতীয় বাস কখন আসবে ঠিক নেই, কিন্তু তিনি এসে গেলেন। চারপাশের পক্ষীরাজ ধুলোকে হার মানিয়ে বৃষ্টি এলেন।

মুশকিল হল ‘এমনও দিনে তারে বলা ‘ গেলেও ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে পরদিন কোনমতেই বলা যাবে না, আমি মেঘ বৃষ্টি দেখতে গিয়ে কাগজপত্র সামলাতে পারিনি৷ মাথা বাঁচিয়ে কোনমতে পাশের একটা দোকানে খানিকক্ষণ দাঁড়ানোর পরেই, একটা বাসের আলো দেখা গেল। ততক্ষণে, ভরসন্ধে। আমি জানি আমাকে এই বাসটা ধরতেই হবে। কাগজপত্রকে বাঁচানো গেলেও, সোয়েটার, আমি, স্টোল সবাইমিলে বেশ কাকভেজা হয়ে উঠে পড়া গেল বাসে৷ ভাগ্যক্রমে একটা সিটও মিলে গেল কেবিনে। তখন থোড়াই জানি সেটা অন্য কারণে।

বসার মিনিট খানেক পর দেখি, ওপর দিয়ে হুড়মুড়িয়ে জল ঢুকছে, এবার বাসে উঠে এ’ভাবে ভিজলে আর কী করা যাবে, যতটা সম্ভব সরে বসা গেল। অন্যদিকে তাকিয়ে যা ভিড় দেখলাম আর সাহস হল না ও মুখো হতে।

আমাদের আইকার্ড পরতে হত না, মানুষ মানুষের পাশে বেশ নিশ্চিন্তেই বসে থাকত। সামজিক দূরত্বের সরকারি পরোয়ানা জারি হয়নি তখনও। হঠাৎ দেখলাম একটা হাত পিঠ বেয়ে কাঁধে উঠে আসছে। আঁতকে উঠে সরে যাওয়ার আগেই পরম মমতায় সেই হাতের মালকিন বলে উঠলেন, “একদম ভিজে যাচ্ছ তো, আমার দিকে সরে এসে বসো।” তাকিয়ে দেখি ইস্তিরি পাট শাড়ি, আলতো জড়ানো শাল, কপালের টিপটা অল্প ঘেঁটে গেছে, এক হাসিমুখ আমায় নিজের দিকে টেনে নিচ্ছেন। যদিও সেদিকে বৃষ্টির ছাঁট নেহাত কম নয়, তবু আমার দিকের চেয়ে কম। আমার পেছনের জানলাটাও ভাঙা ছিল খুব সম্ভবত।

এ পর্যন্ত খুব স্বাভাবিক, একটা ঘটনা, যা গল্প হলেও পারত। কিম্বা কিছুই হত না৷ কিন্তু বেবাক অবাক হয়ে আমি দেখলাম ভদ্রমহিলা পরম মমতায় আরেক হাতে আগলে রেখেছেন একটা শিমূলতুলোর মতো নরম ভেজা ভেজা পাপড়িকে। চুপচুপে ভেজা হিজাব সরিয়ে সে মেয়ে মুখ তুলতেই দেখি, একটু আগে দেখা বন্ধুনীর সহোদরা। সে মেয়ে আমায় চিনতে পারেনি। নিজের খেয়ালে আছে, আর পাশে বসা কাকিমার সাথে গল্প জুড়েছে। সে মেয়ে আমার মতো নয়, আমার বরাবর সময় লাগে কথা বলতে কিম্বা চুপ করে যেতে। কিন্তু একটু আগে মঞ্চে দেখা মেয়েটির সাথে, এই মেয়ের মিল নেই। পুরোই বকবকম। আর পাশের মাতৃস্বরূপা দু’হাতে আগলে রেখেছেন আমাদের, ঠিক যেন ওর দুই আত্মজাকে আগলাচ্ছেন মায়ের মমতায়। ওঁর পেছনের জানলার কাচটাও ভাঙা। মাঝরাস্তায় যখন সম্পূর্ণ অজানা অচেনা কেউ, এ’ভাবে আগলে নেন, চরম নিরাসক্তিতেও কিছু মুহূর্ত জন্মে যায়। 

কিছু কিছু মুহূর্ত আসে, যখন নিয়মিত মাথা দিয়ে শাসন করতে হয় চোখকে। বারবার শোনাতে হয় আদেশনামা,

“চোখ সংযত হও, অর্নথক ভিজে ওঠা তোমায় সাজে না।”

কিন্তু সেদিনের তুমুল বৃষ্টিভেজাটা বাঁচিয়ে দিয়েছিল আমায়, চোখের ধেবড়ে যাওয়া কাজল হোক কিম্বা একটু আগের শ্মশানস্মৃতি সবটুকু উপেক্ষা করে শুনছিলাম ওঁদের কথোপকথন। কিছু প্রশ্ন আমার দিকেও উড়ে এল, কোথায় যাচ্ছি, কী করি.. কিন্তু সে মেয়ে বড় অদ্ভুত। কোন হতাশাই নেই। শুধু দু’চোখ জোড়া স্বপ্ন আছে। চিৎকার আছে। পাশে বসে বসে শুনছিলাম আর ভাবছিলাম, খুব ছোট তো নয় এ মেয়ে, ছড়া থেকে খসে যাওয়া ধানের মতো স্বপ্নগুলো আঁকড়ে থাকতে ইচ্ছা করে আরও একবার একে দেখলে।

ওঁকে দেখতে দেখতে আর শুনতে শুনতেই শুনলাম, সেই মাতৃস্বরূপা বলছেন, মিঠে হিন্দিতে, “কুছ নেহি হোগা, দেখ লেনা। মকান হো ইয়া মুলক, যো তুমহারা হে, তুমহারা হি রহেগা।” বাংলার প্রায় প্রান্তসীমার মফস্বল, কলকাতার বন্ধুরা প্রায় প্রবাসী বাঙালী ভাবেন আমায়, আর এই শহরে বসে এক বঙ্গজননীর মুখে যেন ভেসে উঠল ভারতআত্মা।

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, এই সহজ সত্যিটা আজকাল উচ্চারণ করে বলে দিতে হচ্ছে বারবার। সত্যিই তো, তবে কেন নেহাত সান্ত্বনা মনে হচ্ছে?! একটু আগের শ্মশানদৃশ্যটা বারবার ভেসে উঠছিল, ফিরে আসছিল বহু বছর আগের একটা ভোর। বেনারসের ঘাট, ভোর ফোটেনি তখনও, বাবা আর আমি বসে আছি, একটু দূরের ঘাটে অবিরাম চিতা জ্বলছে। আলো ফুটছে আস্তে আস্তে। হঠাৎ ঘুম ভাঙা শহর আমীর খাঁর ঢিমে ঝুমরার মতো লয়ে নেমে যাচ্ছে গঙ্গায়, বাবার চোখ সেদিকে নেই, নতুন সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছেন,

“ওঁ জবা কুসুম শঙ্কাশং..

সাক্ষাৎ মৃত্যুর পাশে নতুনের উদযাপন ওই বেনারসের ঘাটে দেখেছিলাম, আর এতবছর পর দেখলাম সে’দিন বাসে। নিজের অজান্তেই কখন যেন আরও একটু ঘেঁষে গেছিলাম ওঁদের দিকে। হুঁশ ফিরল, ভদ্রমহিলার ব্যাগের মধ্যে বেজে ওঠা মুঠোফোনের শব্দে। অফিসফেরত স্বামী অপেক্ষা করছেন ডাক্তারখানায়, তুমুল মায়াবী গলায় স্বামীকে বলা হয়ে গেল তিনি যেন কোনভাবেই না ভেজেন। অথচ এতক্ষণে আমরা জেনে গেছি, স্বামী নন, তিনিই অসুস্থ। তখনও আমরা জ্বরকে ভয় পেতে শিখিনি। অতিমারীর আগের সেই সময়টায় ওঁকে দেখে মনে হচ্ছিল, এই তো আমার দেশ, যে আগলে রেখেছে তাঁর সন্তানকে, স্বামীকে সবটুকু দিয়ে।

ফিকে হয়ে যাচ্ছিল, সবটুকু। শুধু দুটো লাইন ভাসছিল কানে,

” ঘোরতিমির ঘন নিবিড় নিশিথে পীড়িত মূর্চ্ছিত দেশে/

জাগ্রত ছিল তব অবিচল মঙ্গল নত নয়নে অনিমেষে।”

পরের স্টপেজে মেয়েটি নেমে যায়, তার দুটো পরের স্টপেই সেই মাতৃস্বরূপা। আমি তার পরের স্টপে। বৃষ্টিটা সেদিন আরও অনেকক্ষণ চলেছিল। সবটাই ভুলে গেছিলাম, ভুলে যাওয়ার সহজাত অজুহাতে।

আসলে আমরা ভাল লাগার প্রায় কোন মুহূর্তকে লালন করিনা। হেলায় ছিন্ন করি সব পলাশমুহূর্ত। সম্পর্ক হোক কিম্বা জীবনে।

আবার সেদিন অফিস যাওয়ার পথে সেই বাসস্টপ দেখে হঠাৎ করেই এই পুরো অধ্যায়টা মনে পড়ল৷ লকডাউনের জীবন এখন, নানা জায়গা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আসার পর, বসিয়ে রাখা হয়েছে। সকাল সাড়ে ন’টাতেই মুখ চোখ জ্বলে যাচ্ছে। ওঁরা বসে আছেন। দূরে দূরে, একে অপরের থেকে।  খুব সম্ভবত মেডিক্যাল চেকাপ হয়ে গেছে বা হবে। তারপর আবার বাস আসবে ওঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে। বেশ খানিকটা দূরত্বে রয়েছেন পুলিশকর্মীরাও। সব আছে, সবাই আছেন তবে সবটাই সেই দূরে দূরে। ফাঁকা বাসস্টপে বসে থাকা মানুষগুলোকে দেখতে দেখতে মাত্র মাস চার পাঁচেক আগের সেই তুমুল বৃষ্টির ভিড় বাসস্টপকে মনে পড়ে যাচ্ছিল। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত সত্যিই আক্রান্ত, না হলেও রোদে জলে এমনিই অসুস্থ হয়ে যাবেন।

 ধকল যদি সরিয়েও রাখি।

বাসস্টপের পরেই ফুলের বাজার, প্রায় সবই সাদাফুল। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল এই অনিকেত অসুখের প্রহরে আজকাল কেউ কাউকে ভালবাসেন না? নইলে ফুল এত প্রস্তুত কেন? শোকের উপস্থাপনায় তাকে যেতেই হবে?

আজকাল সবসময় চিন্তা করতে হয় এক্সপোজারের, নিজের চেয়েও বেশী প্রিয়জনদের জন্য। অফিস ফিরতি পথে কারও সাথে দেখা হয়ে গেলেও, দূরে দূরে সরিয়ে রাখি, ভয় হয় আমার থেকে আরেকজনের যেন কিছু না হয়। এই আতঙ্কচিন্তার শুদ্ধিকরণ সম্ভব?

সেই স্পর্শ, ওম, মমত্ব মুচকি হাসি সবকিছুকে আজকাল চড়ুই পাখির মতো মনে হয়, যে এই কিছুদিন আগে অব্দিও আমাদের আশেপাশেই ছিল, কিন্তু আমরা নিজেদের ব্যস্ততার অজুহাতে খেয়ালই করিনি, চিনে নিতে।

 আর কিছুদিন পর সবকিছুই স্বাভাবিক হবে হয়ত, আবার পথে নামবে মানুষ। নানা সরকারি এবং ডাক্তারি নির্দেশিকা পেরিয়ে গিয়েও আরও অনেক কিছুই থাকবে না আমাদের নিত্য যাতায়াতে।

থাকবে না, অচেনা অজানা দুই সন্তানসমাকে আগলে নেওয়া, থাকবে না এই স্পর্শগুলো। ভালবাসার, মমত্বের।

“স্পর্শ যে আসলে বিদায়ভনিতা মাত্র”, সেটা জেনেই এবার থেকে পথে বেরোনো ভাল।

ভয় আর আতঙ্কের পাশে এবারের মতো ভালবাসা বেঁচে যাবে কিনা, সে উত্তর জানা নেই..

শুধু এত কিছুর পরেও চড়ুই পাখিটা আসে মাঝে, যা

ভয় আর ভালবাসার কাটা ছকে এক্কাদোক্কা খেলে যায়।

দেখা যাক, আগামী জিতে নিতে পারে কাকে?!

Website | + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *