রেজমান খানের গুচ্ছ কবিতা

জনতা ও একটি প্রাচীন প্রথা

এ এক আদিম নেশা, আমোদের সার্কাসে

জনতা আবেগে দু’টো খুন করে বসে।

নিছকই খেলার ঘোরে, ঘিরে ধরে জেরা

পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ায় চিরঘাতকেরা।

এ প্রথা প্রাচীন, সেই কবে থেকে আজও-

চিরকাল তুমি শুধু অপরাধী সাজো।

অভ্যেসে ঘটে যাওয়া লঘু জনরোষে

সব খুন লেখা থাকে মৃতদের দোষে।

তদন্ত পাল্টে যায়, কে যে আততায়ী?

প্রতি দেহ মৃত পিছু আমরাই দায়ী।

অন্য কোনও শিরোনামে কালও এইভাবে

জনতা ইচ্ছেমতো খুন করে যাবে।

হ্যাঁ এ ইচ্ছেই তো, স্রেফ সন্দেহবশে জনতা আবেগে কিছু খুন করে বসে।

আপৎকালীন সময়ের লেখা

আমায় তুমি হাঁটতে নিও, মিছিল

এই তো সময়, আজ না হলে কবে?

মুঠোয় মুঠোয় জাগতে থাকা নিশি

অদম্যতার অশান্ত বিপ্লবে।

এই তো আমার শ্রেষ্ঠতম সময়

এক স্লোগানে জোরালো হোক আওয়াজ,

মুখ বুজে চুপ অন্তত আর নয়

বিরুদ্ধতায় পাল্টে দেব হাওয়া।

আর না হলে কীসের আমি মানুষ?

হাওয়ার কথা আজ না হলে কবে?

কঠিন জানি অবস্থা সামলানো

তবুও শাসক, দাঁড়াবো বিপ্লবে।

এখন আমায় জাগিয়ে রেখো লেখা

এই তো সময়, আজ না হলে কবে?

অসময়, তোমাকে

পাঁচিলের গায়ে রেঙে ওঠে প্রিয় দেশ।

তুমি বলবে না কোনও কথা কিচ্ছুটি,

বোবা সুতো ঠোঁট স্রেফ দেখে যাবে শেষ

নেতা বুঝে নেবে ভোট, বিধি বিচ্যুতি।

নাম জানে, তুমি নাগরিক নাকি আশ্রয়?

মুঠো জানে শত নথিহীন ভুখাপেট,

আদেশের অপঘাতে সাময়িক এ জয়

বেয়নেট ঢেকে ক্ষত কতদূর লুকাবে?

‘যতদূর দু’চোখ যায়…’ প্ররোচিত প্রবাদ

বিশ্বাসে না মিললেই লাঠি, গুলি, ঘৃণা।

মোমবাতি হেঁটে যাওয়া শত শোকসভা,

ফলকে কবরে বাঁচে পরিচয়হীনা।

তুমি ঠিক বেঁচে থেকো নিথরে নীরবে,

ঠোঁটে সুতো না থাকলে বেঁধে নিও নিজে।

নতুবা হিংসা পথ, যোগ দিয়ে মবে

অপলক চোখ রেখো পদবীতে, ফ্রিজে।

যে সব ফ্রীজের নাম কিছুই মানি না,

যে সব পদবী থেকে উঠে আসে মুঠো-

পোশাকি শীলনে দেখো, দেশপ্রেমী কিনা?

লেঠেলে লেঠেলে এঁকো নিদারুণ ক্ষত।

পাঁচিলে পাঁচিলে তবু রেঙে ওঠা দেশ

ওপারে হেঁটে গেছে চিরবিরোধিতা।

আমি একা খুঁজে ফিরি ধ্বংসাবশেষ

মৃতদেহ বয়ে ফেরে কবর আর চিতা।

উৎসর্গ

(আন্দোলন করতে গিয়ে যারা প্রাণ হারাল, তাদের প্রত্যেককে)

এই একটা লেখা তোমাকে উৎসর্গ করবো বলে, সময়ের পর সময় বসে আছি সাদা পাতার সামনে।

ততক্ষণে তোমাকে খবরে দেখিয়ে দিয়েছে সাঁইত্রিশ বার।

তোমার ছবি শেয়ার হয়েছে সাড়ে সতেরো হাজার।

আহা উহু করে মুখ শিটকোচ্ছে কেউ।

কেউ কেউ পাল্টা মারবে বলে ফুঁসে উঠছে রাগে।

চারটে মিছিল বেরিয়ে গেছে এরই মধ্যে।

সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় পাতায় উপচে উঠছে ক্ষোভ।

আমি এসে বসেছি, কাগজের সামনে।

সাদা পাতায় ভেসে ভেসে আসছে তোমার মায়ের মুখ।

বাবার ভেঙে পড়া।

তোমার নিথর দেহ।

তোমাকে উৎসর্গ করে কিছু একটা লিখবো আজ।

যতদিন না সবাই মানুষ হয়ে উঠছি, তোমাকে উৎসর্গ করে কিছু একটা লিখতেই থাকবো রোজ।

Website | + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *