প্রত্যাবর্তন

সাফিন আলী

এই মাঝরাতে মুম্বাই এয়ারপোর্টে যেন সার্কাস চলছে। কানেক্টিং ফ্লাইট দেরি আছে। অপেক্ষমান যাত্রীদের ভেতর তাই অস্বস্তি কেমন গুমোট ও ঘোলাটে। কর্তৃপক্ষের কোনো হেলদোল নেই। আমারও নেই। আরাম করে পা ছড়িয়ে বসলাম।

বছর কুড়ির ছোকরা। বুক পকেটে ফ্লাইটের টিকিট উঁকি মারছে। সাদার উপর লাল জামা পরা সুন্দরী  মেয়ের ছবি।  ছোকরা আলাপী। জমিয়ে বসলো আমার পাশে। গল্পের গন্ধ পেয়েছে।

এই পাড়ার সবার পুরুষ্ট বুক শুধুমাত্র শুকিয়ে বুকের পাঁজরে জড়িয়ে যাওয়া স্তন ছিল ঐ বুড়ির। তবু আমাকে শুনতে হতো সে নাকি আমায় দুধ খাইয়েছে ছোটবেলায়। কীভাবে সম্ভব তাই বুঝে উঠতে পারতাম না। তখন আমার বয়স তিন কী চার হবে। বুড়ি আসতো আমাদের পাড়ায় দুধ বিক্রি করতে। ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটতো। বয়সের ভারে কোমর বেঁকে গেছে। একটা কালো সাদা ডোরাকাটা শাড়ি পরে আসতো। প্রতিদিন একই। আমায় দেখতে পেলেই ডাকতো– ‘এই কচি। এই বাবা। আয় এদিকে।’ আমি ছুট লাগাতাম উল্টোপানে। আমার নামটাও নাকি বুড়ির দেওয়া। বড় হয়ে বুঝেছিলাম।

একদিন হঠাৎ দুপুরের পর আকাশ কালো করে কালবৈশাখী নামলে। সেকি জোরে জোরে বাতাস! টিনের চাল উড়ে যাওয়ার জোগাড়। রাস্তায় ধুলো উড়ে অন্ধকার। আমরা জানলার শিক আঁকড়ে রাস্তার দিকে চেয়ে। রাস্তায় ঝড় বাঁচিয়ে সবাই ছুটছে। বড়রাও ভয় পায়! ওদের সন্ত্রস্ত পায়ে ছুটে যাওয়া দেখে মজা হচ্ছে। হঠাৎ জটলায় গোল উঠলো। ‘খড়খড়ি বুড়ি। খড়খড়ি বুড়ি।’ ধুলোর ঝাপ্টা সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে হাড়সর্বস্ব বাঁকানো বুড়ি। খড়খড়ি বুড়ি নামেই চিনতো সবাই তাকে। মা আমার কান মুলে চুপ করিয়ে দেয় সবাইকে। রাস্তা থেকে বুড়িকে ডেকে ঘরে এনে আমাকে ধমক দেয়। বলে, ‘দুধ মা। সালাম কর।’

এটুকু বলে আমি থামলাম। যাত্রীদের ভেতর হুড়োহুড়ি পড়ে আবার থেমে গেল। স্পাইসজেটের কেউ এসে একবার মুখ দেখিয়ে আবার চলে গেল। বোর্ডিং গেটের দিকে যে হুড়োহুড়ি এগিয়ে যাচ্ছিল, তা ছিন্ন ছিন্ন হয়ে গোল পাকিয়ে অনেকগুলো জটলা পাকিয়ে ফেললো। অসহিষ্ণু আলোচনা হচ্ছে সেখানে।

-আপনার মা নেই বললেন যে!

আমি আবার গল্পে ফিরলাম। হ্যাঁ। আমার মা নেই। বড় বদনসীব নিয়ে জন্মেছিলাম। আমি হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার পর বুড়ি খুব কেঁদেছে। আমার তখন কাঁচা বয়স। সবার উপরে রাগ ছিল। অন্যের উপর হয়তো রাগ করে মাকে শাস্তি দিয়ে ফেলেছি জানেন। কাঁচা বয়সে মায়ের জন্য মন খারাপ করতো না। ভাবতাম সবাই দায়ী। সবাই ষড়যন্ত্র করে আমায় হোটেলে কাজ করতে পাঠালে। প্রথমে চেন্নাই। সেখানে হোটেলে বাসন ধুতাম। সারাদিন বাসন ধুয়ে ধুয়ে হাতে হাজা পড়ে যায়। ভালো লাগলো না আর। পালিয়ে এলাম বোম্বাই। মুরগীর দোকানে কাজ নিলাম। ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান। একটা ত্রিপল খাটিয়ে দোকান দেওয়া। পুলিশের তাড়া খাওয়ার ভয় থাকলেও কাজ করতে ভালো লাগতো। স্বাধীনতা ছিল। বাকিটা মালিক সামলাতো।

এখানেই একদিন এক গাঁওওয়ালির সাথে দেখা। সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে গিয়ে। আমার টাকা বাড়ি পাঠানোর দায় ছিল না। আমি পাঠাতাম না। আমার বাড়ির কথা, গ্রামের কথা মনে পড়তো না তা নয়। পড়তো। তবে খুব কম। আমি তাদের সবাইকে শাস্তি দিতে চাইতাম। ভুল করেছি সেখানেই। আমার জন্যে কেঁদে কেঁদে বুড়ির চোখের জল শুকিয়ে গেছিলো। কাঠ কাঠ কাঁদতো। যখন আর কান্না পায় না। কান্না বুকে জমে পাথর হয়ে উঠেছে, তখন এক বর্ষার রাতে আমার বাপ হারিয়ে গেল দামোদরের বুকে। বুড়ির কান্না শেষ হয়ে গেছিলো। কাঁদতে পারলো না আর। পাগল হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে নদীর চর ধরে হাঁটতো। গাঁওয়ালি এসব খবর দিয়েছিল। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটোগুলোর কথা তখন আর আমার মনে নেই।

গাঁওয়ালি ভাই জোর করলে আমার সাথে আসবার। আমি মানা করলাম। কিন্তু এড়াতে পারলাম না। আমি যা ইনকাম করতাম তা দিয়ে আরাম আয়েশ করে উড়িয়ে দিতাম। এক মুরগিওয়ালার ঘর দেখে সে ভিরমি খেয়েছিল। আমি থাকতাম এই মুম্বাইয়ের এক অভিজাত এলাকায়। চকচকে ফ্ল্যাটে। বাকিদের মতো খুপরিতে নয়। আমার টিভি ছিল। পা মিলিয়ে বসার সোফা ছিল। আমি ঘুমোতাম গদি আঁটা খাটে। সারাদিন মুরগি ঘেঁটে এসে হাত ধুতাম শাওয়ারের জলে। সুগন্ধী সাবান মেখে স্নান করতাম। গাঁওয়ালি ভাবলে, আমি জিনের কলসী পেয়েছি। নইলে এতো টাকা আসে কোথা থেকে?

তারপর থেকে গাঁওয়ালি প্রায় আসতো আমার ঘরে। বুঝতে পারতাম ওর ধান্দা। ভালো লাগতো না। একদিন হঠাৎ সোফা, টিভি সব কমদামে বিক্রি করে উধাও হয়ে গেলাম। বোম্বে পড়ে থাকলো পেছনে। কেউ জানলো না আমি গেলাম কোথায়।

ছেলেটা তন্ময় হয়ে যেন রূপকথার গল্প শুনছে। আমি থেমে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিবুক থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে বসে বললে, তারপর?

আমি ভ্রু কুঁচকিয়ে জিগ্যেস করলাম, ‘আপনি কী সাংবাদিক?’

ছেলেটা চমকে উঠে জোরের সাথে বললে, ‘না’।

-তাহলে কী লেখক? আমার এই গল্প লিখতে পারেন। আমার আপত্তি নাই।

সে হাসলে। বললে, না। আমি কলেজে পড়ি। ইঞ্জিনিয়ারিং। বাড়ি ফিরছি। অনেকদিন পর। মন খারাপ করছিল। আপনার গল্প শুনে আরো বেশি মন খারাপ করছে।

আমি বোকার মতো হাসতে লাগলাম। এ হাসির এখন দরকার নেই। অবান্তর। তবু হাসতে লাগলাম। সে একটু থেমে আবার বললে, জানেন আপনার গল্প আমার ‘নোনাজল’ এর কথা মনে করিয়ে দিলো। একটা গল্প।

আমি উত্তর দিলাম, জানি। সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা। সে স্কুলের বইয়ের পাতা আমি আজও স্বপ্নে পড়ি। আমি সমীরুদ্দি হতে চাইনে। তাইতো সব টাকা উড়িয়ে দিই।

এখন ছেলেটা বোকার মতো আমার মুখ চেয়ে আছে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না বোধহয়। মুরগিওয়ালার মুখে সৈয়দ মুজতবা আলী মেলানো যায় না। সত্যি মেলানো যায় না। জীবনের অনেক হিসেব বেহিসেবী হয়ে যায়। মেলে না। মেলানোর চেষ্টা বৃথা।

(২)                           

আমাদের উল্টোদিকের চেয়ারে এসে এক মোটাসোটা ভদ্রলোক বসলেন। অত বড় কোমর ঐ চেয়ারে সাঁটে না। তবু জোর করে গুঁজে দিলেন। আমি ছেলেটার মুখের দিকে চেয়ে জিগ্যেস করি, এই লোকটাকে চেনো?

– না।

– লোকটা ডাক্তার। দেখো, নিজের কিন্তু রুগীর চেহারা।

ছেলেটা আবার তাজ্জব বনে গেল। ‘আপনি কিন্তু বেশ ভালো কথা বলেন। আপনি চেনেন?’

– ‘না। আমিও চিনি না। জানলাম। চোখ, কান জানালো।’ আমি এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে বলি, ইনি একা নন। সঙ্গে আরো জনাতিনেক ডাক্তার আছেন। সবাই বাংলাদেশের। এখানে কনফারেন্সে এসেছেন। মোটা ডাক্তারবাবু টের পেয়েছেন কিনা কী জানি। বারকয়েক তাকালেন আমাদের দিকে। তারপর ঘাড় এলিয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করলেন। যে শরীর বড়ই কাহিল।

ছোকরার বিস্ময় বাড়ছে। বললে, আপনি এতো কিছু জানলেন কী করে!

বললাম, ‘আমি দ্রষ্টা।’ বলে নিজেই হেসে ফেললাম। আরে বাবা, সিকিউরিটি চেক ইনের সময় এনারা আমার পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি কোমর থেকে বেল্ট খুলছি দেখে ওদের দলে গোল উঠলো। একজন আরেকজনকে রসিয়ে জিগায়, ‘ও সাজাদভাই, প্যান্ট খোলাও লাগবে নাকি?’

আমি সিলেটি, ঢাকাই, চাটগাঁইয়া আলাদা করতে পারি না। তবে এটুকু বুঝেছি, এরা বাংলাদেশি। মুখ ফিরিয়ে দেখি এক বেঁটেখাটো লোক। মাথার মধ্যিখানে একটাও চুল নেই। চকচকে টাক। একটা ডোরাকাটা জামা পরা। মজার লোক। বাকি সবাই উনার কথায় হাসছে। সবাই কোমর থেকে বেল্ট, পা থেকে চামড়ার জুতো খুলে রাখছেন ট্রেতে। মিলের মধ্যে একটাই সবার কাঁধের ব্যাগ একই ওষুধ কোম্পানির। সন্দেহ হয়েছিল তখনই।

উনাদের ভেতর একজন বেশ ঢ্যাঙা। কিন্তু রোগাসোগা। ঐ দেখো। ঐদিকে বসে আছেন। তিনি আবার বেল্ট খুলে ঢলঢলে প্যান্ট ছেড়ে দেখছেন খসলে পড়ে যাচ্ছে না তো! শেষঅব্দি রিস্ক নেননি। একহাতে প্যান্ট চেপে দাঁড়িয়ে পড়েন লাইনে। তখন পেছন থেকে এই মোটা ভদ্রলোকই বললেন, ‘ভাইয়া, জাঙ্গিয়ার বুকপকেট নাইতো? থাকলে প্যান্ট খুইল্লা ওটাও চেক হইবো।’

মানুষগুলো কী মজার তাই না! সেমিনারে এসে বেড়ানোও হয়ে গেল একপ্রস্থ। ফুরফুরে মেজাজে কয়েকজন বাড়ির ছোটোদের জন্য খেলনাপাতিও কিনেছেন।

বোর্ডিংয়ের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে হাঁটতে লেগেছে ঘড়ির কাঁটা। তবু ফ্লাইটের দেখা নেই। এনাউন্স হলো এখনো পনেরো কুড়ি মিনিট দেরি হবে। তার জন্য তাঁরা দুঃখিত। কিন্তু জনগণ দুঃখের ভার নিতে মোটেও রাজি নয়। ফ্লাইটের যাত্রীরা মার্জিত ও ভদ্র হয় বলে সাধারণের ধারণা। কিন্তু মাঝরাতের অযথা এই বিলম্বে তারা বনগাঁ লোকালের যাত্রীদের মতো ঠেলাঠেলি ও চেল্লমেল্লি শুরু করলো। রাতে মুটে-মালিক, বড়লোক-ছোটোলোক সবার মাথা খারাপ হয়ে যায়। সবাই এক। সাম্যবাদের পতাকা বয়ে সবার ঘুম পায়।

ছোকরা এয়ারপোর্টের এতো কিছু ঘটনা থেকে নিজেকে সরিয়ে তখনো আমাকে নিয়ে পড়ে। ‘আপনি উধাও হয়ে কোথায় গেলেন? গ্রামে? মায়ের কাছে?’

– না।

– তাহলে! উধাও হলেন কেন?

– এমনি। উধাও হতে ভালো লাগে। তুমি প্রেম করো?

আচমকা এমন প্রশ্নে ছোকরা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো। ধরা পড়েছে।

– উধাও হয়ে দেখো। প্রেম বাড়বে। বিরহে ভালোবাসা ঘন হয়।

এই যে আমি উধাও হয়ে যাই বারবার। দেশবিদেশে ঘাঁটি গাড়ি। এতে কী বুড়ি আমার পেছন ছাড়ে? ছাড়ে না। টের পাই। ছায়ার মতো লেপ্টে থাকে।

– বোঝেন কী করে?

– বললাম না, আমি দ্রষ্টা। কথা শুনে ছোকরা নিজেও এবারে হাসতে লাগে।

আমার তো দুই মা। জন্মদাত্রী মা আর দুধ মা। অভাবে আমার মা খেতে পেতো না ঠিক করে। বুকে দুধ হবে কোথ থেকে? শুকনো বোঁটা আমার মুখে ঘষতো। ওতে কী আর আমার পেট ভরে? ভরে না। মা গিয়ে পড়লো খড়খড়ি বুড়ির পায়ে। দুধ কেনার ক্ষমতা নেই। দয়া ভিক্ষা করলে। বুড়ির নিজের নাতি হয়েছে কয়েকদিন আগে। বৌমার বুকভরা দুধ। বাচ্চাটা পুরো খেতে পারে না। বুড়ি ভাবলে আমাকে নিয়ে গিয়ে খাওয়াবে। না। ভয় পায় বুড়ি। পাড়ার লোক যদি কিছু বলে। মোল্লার বাচ্চা হিঁদুর বুকের দুধ খেয়ে বড় হবে! কেমন একটা।

বুড়ি করলে কী; বৌমার দুধ কৌটো করে আনতো প্রতিদিন। দুধের কেটলিগুলোর সাথে কৌটো বেমানান নয়। আমি তাই খেয়ে বড় হতে লাগলাম। আমার নাড়ির যোগ তৈরি হলো বোধহয় এমনি করে।

দুজন এয়ার হোস্টেস আর তার দুই ছোকরা সঙ্গী এসে লাইন করতে বলছে ইংরেজিতে। একটু পরেই বোর্ডিং শুরু হবে। ‘প্লিজ মেক এ সিঙ্গেল কিউ। প্লিজ মেক পেসেন্স।’

আমি ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। তখনো ছেলেটা সিটে বসে। ‘আপনি তাহলে এখন আসছেন কোথা থেকে?’

– ইস্তাম্বুল নাম শুনেছ নিশ্চয়। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মেলা। সেখানে থাকি। শহরের মাঝে ইয়েনিকাপি মেট্রোস্টেশনের কাছেই। ছোকরার মনে হয় ইস্তাম্বুল নিয়ে আবেগ আছে। তন্ময় হয়ে শুনছে। এগিয়ে যাওয়া লাইনে মন নেই। প্রাচ্যের কঙ্কালের উপর পাশ্চাত্যের বোরখা পরা ইস্তাম্বুলে নেশা আছে। অটোমান সাম্রাজ্য। বয়ে যাওয়া ইতিহাস। ইস্তাম্বুল।

স্টেশন থেকে বেরিয়ে ডানদিকে কিছুটা হাঁটলেই যে প্লাস্টিকের বালতি ইত্যাদির প্রথম দোকান দেখবে, সেখানেই আমি কাজ করি। টাকা ইনকাম করি আর দুহাতে ওড়াই। বিয়ে থা করে থিতু হওয়ার প্রয়োজন কোনোদিন পড়েনি। মনে পড়ে না ঘরের কথা, গ্রামের কথা, মায়ের কথা। পাখিদের আপন কে? শুধু ওড়া আর ওড়া।

আমার দোকানের উল্টোদিকে খোঁড়াখুঁড়ি চলছিল বেশকদিন ধরে। নতুন ঘর উঠবে। সেদিন যন্ত্রের মাথায় যেন কিছু একটা ঠেকলো। প্রাচীন কিছু। এই শহর খুঁড়লেই কিছু না কিছু মেলে। সেই প্রাচীনকাল থেকে সভ্যতার কবরের উপর নতুন সভ্যতা গড়ে উঠেছে ইস্তাম্বুলে। স্তরে স্তরে সাজানো ইতিহাসের সময়কাল।

একটা কাঠের কফিন। প্রত্নতত্ববিদরা বললে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন কাঠের কফিন। কফিনের পাশে একটা কোদাল, একটা নৌকোর বৈঠা রাখা। আমার গ্রামের বাড়ির মতো মাটির দেওয়াল দেওয়া ঘর। তার মধ্যে কাঠের কফিন। উপরে নীচে কাঠের তক্তা। তার মাঝে কুঁকড়ে শুয়ে এক বুড়ি। হাজার হাজার বছর ধরে।

মায়েরা বুড়ি হয়। এই কী সেই বুড়ি! শুয়ে আছে আমার দোকানের উল্টোদিকে। আমি উধাও হতে পারিনি তার চোখ থেকে।

মায়ের চোখের জল যাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারেনি, তাকে এই কবরে শোয়া বুড়ি টলিয়ে দিলো। কী অদ্ভুত তাই না!

অদ্ভুত মানুষ। অদ্ভুত জীবন।।

Website | + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *