চাল ও কাফন

শুভায়ুর রহমান

শাড়ির শেষাংশ দিয়ে চোখের কোণ মুছে পিঁড়ির বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসল জামেলা বিবি। ছোট্ট বাচ্চাটা পাশেই খাতা কলম নিয়ে হিজিবিজি কাটছে। মন নেই লেখাপড়ায়। একবার মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে, একবার খাতা কলম নিয়ে আনমনে কিছু একটা আঁকছে। প্যাঁকপ্যাঁক করতে করতে বাড়ির সামনের পুকুর থেকে উঠে এসে খাবার খুঁজছে একটি হাঁস। উঠোনে একটি সজনে গাছে দড়ি দিয়ে বাঁধা কালো ছাগলের মুখে একটা দুটো করে ঘাস এগিয়ে দিচ্ছে মণিরুল।

চেঁচিয়ে উঠলো জামেলা, “পড়াশুনা নেই, কিচু নেই। বাপের মতো কেরলে রাজমিস্ত্রীর কাজই আচে ভাগ্যি। কতবার বলচি, আসমা বুনদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়ি আই তো।”

বিরক্তির সুরে, মণি উত্তর দিলো, “যাচি বলচি তো, কতবার বলচি যাচি৷”

আর রাগ সইতে পারলো না জামেলা। ছুটে এসে মণির গালে দুই চড় বসিয়ে দিল। কাঁদতে শুরু করলো মণি। চড় মারার পরই জামেলার বুক তোলপাড় করে উঠলো–কোনদিন ছেলের গায়ে হাত তোলেনি সে। এদিকে রাগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো মণি।

রাস্তার উত্তর দিকে নয়ানজুলি। তারপরই বাঁশ বাগান। বাঁশ বাগানের পর মাঠ। রাস্তা ধরে পশ্চিমে কিছুদূরেই তাজমুর সেখের মুদির দোকান। এই দোকানের পরই শেষ হচ্ছে গ্রামের রাস্তা। শহরে যাওয়ার পাকা রাস্তা। রাস্তার ওপারেই আসমাদের বাড়ি। হাঁক পাড়ছে হকার, “কলা নেবেন কলা…, পাকা কলা নেবেন…!”

দুজন দরদাম করছে। দাঁড়িয়ে গেল মণি। এক যুবক কলা বিক্রেতাকে দাম জিজ্ঞাসা করলেন, “ক টাকা ডজন?”

পঁচিশ টাকা।

কুড়ি টাকা হবে?

দু’টাকা কম দিয়েন, নিয়ে যান। বলেন কলা বিক্রেতা। 

মণির মুখটা কালো হয়ে গেল। সাদা জামার বুক পকেটে হাত ঢুকিয়ে পকেটটাকে উলটিয়ে বিরক্ত হয়ে রাস্তা পেরিয়ে গেটে টোকা দিতে থাকলো। মস্ত বড় তিনতলা বাড়ি। লাল রঙ করা। বাড়ির দু’তলায় পাকা রাস্তার দিকে বড় বারান্দা, চারা গাছের টব থরে থরে সাজানো। ঝাঁ চকচকে বাড়িটির মালিক কিয়ামত সেখ। গ্রামের মেম্বার। দুই ছেলে সরকারি চাকরি করেন। একজন কলকাতা, আরেকজন লন্ডনে। এই কিয়ামত সেখের স্ত্রীর নামই আসমা।

বাড়ির ভিতর থেকে জোরে কন্ঠস্বর শোনা গেল, “কে? কে ধাক্কা দিচ্ছো? গেট ভেঙে যাবে যে!”

দাঁড়াও আসছি।

গেট খুলেই বকা দিল আসমা, “এই ছোঁড়া তুই! কলিং বেল টিপতে পারছিস না?”

-আমি তো টিপতে জানি না।

মুখটা বেঁকিয়ে বললো– উহুঁ জানি না! আদিখ্যেতা দেখে বাঁচা যায় না।

গেটে ধাক্কা দেওয়ায় যেন বড় অপরাধ করে ফেলেছে। নিজেকে অপরাধী মনে করে নীচের দিকে তাকালো মণি।

আচ্ছা, কি হয়েছে বল?

মুখ নীচু করেই বিড়বিড় করার মতো আস্তে আস্তে বলল, “দিদিভাই, মা বললো আমাদের ডিম দেওয়া পাতি হাঁসটা বিক্রি করবে। তরকারি, তেল কিনার পয়সা নাই। তাই মা বললো হাঁসটা কিনবি কি না।”

কেন রে! তোর মা তো সেদিন দিল না। বললো ডিম পাড়া হাঁস বিক্রি করবে না। আজ নেবো কেন?

দিদিভাই আজ নাও। আমাদের কিচু পয়সা নেই। আব্বু কেরল থেকে ফিরতি পারিনি। করোনার  জন্য আটকে আচে বলচে। আব্বার সঙ্গে তিনদিন কুনো যোগাযোগ নাই!

এই, দাঁড়া দাঁড়া রেশনের চাল পাচ্ছিস না? যাসনে রেশনে? সরকার তো চাল দিচ্ছে।

দিদিভাই চাল আর আটার প্যাকেট পেয়িচি। দু’কেজি চাল বিক্রি করে আলু আর তেল কিনিচি পরশু। মা বললো বিক্রির মতো আর চাল নাই।

হাঁস নেবো না, আমার ছেলে কলকাতা থেকে আসার কথা ছিল। গাড়ি ঘোড়া বন্ধ হওয়ার জন্য আসতে পারেনি।

কথা শুনে মণি পিছন ফিরে চলে যাবে, অমনি আসমা বলল, “শোন, দশ কেজি আতব চাল আছে। কলঘর থেকে ভেঙে আটা করে এনে দে, পাঁচ টাকা দবো।”

থমকে দাঁড়াল মণি। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে আসমার দিকে চেয়ে, মণি বললো, “আচ্ছা দাও ভেঙে এনে দিচ্চি।”

দশ মিনিট এক ঘন্টা দুপুর হয়ে গেল। জোহরের আজান শোনা গেল মসজিদে। করগেটের চালা লাগানো আর পাট কাঠির বেড়ার পাশেই বাঁশ দিয়ে নামানো একটা চালা। এক দিকে খেজুর তাল পাতা দিয়ে ঘেরা। আর বাকি দু’দিকে খোলা হেঁসেল। বছর চারেকের মেয়ে কুলসুমকে কোলে নিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছে জামেলা। ভাতের ফ্যান গেলে চুলোয় চড়িয়েছে নটে আর কচু শাক। পাশে আধ ভাঙা ইঁটের উপরে রাখা কম দামের ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা ধরতেই ওপার থেকে ভেসে এলো কালুর কন্ঠস্বর, “কি গো, কেমন আচো তোমরা? মণি কুলসুম কেমন আচে?”

স্বামীর কথাগুলো শোনার পর আর ধৈর্য ধরতে পারলো না। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো জামেলা।

কাঁদতে কাঁদতেই বললো, “আজ ক’দিন হলো ফোন করোনি। যোগাযোগ নেই৷ ঘরে কিচ্ছু নেই। নরেন কাকার সঙ্গে দুশো টাকা ধার নিয়ি চালালাম এক সপ্তাহ। সরকার তো লকডাউন ঘোষণা করেছে।”

বউ, কাঁদছো কেন? আল্লাহকে ডাকো সব ঠিক হয়ি যাবে। আমরাও এখানে একটা বিল্ডিংয়ে আচি৷  ফুনে পয়সা শেষ হয়ি গিয়েচে। তাই ফুন করা হয়নি। আসমত ভাইয়ের ফোন চেয়ে কতা বলচি।

আল্লাহ,জানে কবে ঠিক হবে৷ হ্যাঁ গো, ওদিকে খুব মানুষ মরচি? আর মুকে মাস্ক দিবা ঠিক মতো। বাইরে বের হবা না যেনো।

নাহ্ বউ, ঠিক আচে এদিকে। চিন্তা করবা না। মালিকের সঙ্গে টাকা পাইনি। তাই টাকা পাঠাইতি পারিনি। ধার ধুর করি চালাও। মণি যেন পড়াশুনাটা করে। ওদের জন্যিই এত দূরে পড়ে আচি। আর চুলবুল কেমন আচে? ঘাস আনচে ওর জন্য মণি?

হ্যাঁ গো মণি চুলবুলকে সকালে চরাইতে যায় মাঠে। আর ঘাস পাতাও আনে। কুলসুমের সঙ্গে কতা বলবা? একটু বলো।

মা, কেমন আচো?

আব্বু কবে বাড়ি আসচো আব্বু।

আসবু মা সামনেই আসবু।

ঠিক আচে৷ ভালো থাকবা। বলে ফোনটা কেটে দেয় কালু।

আস্তে আস্তে বাড়ি ঢুকলো মণি। পিছন থেকে ডাক পাড়লো।

মা, ও মা। হাঁস কিনবে না বলেচে।

হাঁস না হয় কিনবি না। তুই এতক্ষণ কি করছিলি! কুতায় ছিলি!

তেলের শিশিটা দাও। তেল আনবো।

পয়সা কুতায়! অনেক ধার হয়ি গেচে। আর ধার দেবে না।

আমার কাচে আচে পাঁচ টাকা।

কুতায় পেলি তুই! কুতাই পেলি!

চুলোর পাড় থেকে উঠে এসে জামিলা খপ করে মণির হাত ধরে বলে, “দেকি, তোর হাত দেকি। কুতাই পেলি বল৷ চুরি করিসনি তো তুই? বল?”

রাগে ক্ষোভে ঘৃণায় মায়ের হাত ছাড়িয়ে পাঁচটাকার কয়েনটা বাড়ির সামনের পুকুরে এক টান দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দৌড়ে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে মণি চৌকিতে শুয়ে পড়লো।

ঘরের ভিতর পিছন পিছন ছুটে গেল মা জামেলা। ঘরের ভিতর মা যেতেই মণি কাঁদতে লাগলো, “মা, আমি কি করবো মা? আমার আর ভালো লাগছে না৷ খুব খিদে পেয়েছে। খুব খিদে পেয়েছে। আসমা দিদির চাল কলে ভেঙে পাঁচ টাকাটা পেয়েচি। আমার কিচু কিনে খেতি মুন চাইছিল। কিন্তু পারিনি। আব্বু বলেচিল এবার ঈদে আমার আর বুনের জন্য নতুন জামাকাপড় আনবে। বাস, ট্রেন চলচে না। কিভাবে আসবে? আসমা দিদিভাইয়ের অনেক বড় বাড়ি। আমাদের ভাঙা বাড়ি কেন?”

এতটুকু বাচ্চার প্রশ্নের উত্তর মায়ের কাছে নেই। তাই সে শুধু একটাই উত্তর দিল, “আল্লাহ আমাদের গরীব বানিয়েছে তাই।” ঘর থেকে বেরিয়ে এলো জামেলা।

বিকাল হয়েছে। মণি ও কুলসুমকে নিয়ে জামেলা পাড়ার নরেন রায়ের বাড়ি গেল। পাড়ার মধ্যে নরেন রায় ও বীরেন রায় দুই ভাই সম্ভ্রান্ত গৃহস্থ। যদিও আগের মতো অবস্থা আর নেই। আগে গোলা ভর্তি ধান, মাছ ভর্তি পুকুর, আম জাম কাঁঠাল গাছের বাগান সব ছিল। বাড়ির মালিক ধীরেন রায়ের মৃত্যুর পর অবস্থার অবনতি হয়। তবে এখন খুব ভালো না হলেও বেশ স্বচ্ছল ভাবে চলে যায়৷ এদের বাড়িতেই প্রথম টিভি রেডিও আসে পাড়ার মধ্যে।  গ্রামটি খুব বড় নয়। তাই অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যেও সম্পর্ক ভালো।

নরেন রায় বললেন, “বউমা কেরলের খবর ভালো। খুব খারাপ নেই। তুমি দেখো টিভি। আমি চালিয়ে দিচ্ছি।”

নরেনের বউ অনিমা রায়ও বসতে বলে ঘরে গেল। সান বাঁধানো রোয়াকে বসলো জামেলা। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে অনিমা বলল, “এই নে জামিলা। এক প্যাকেট মুড়ি। ছেলে মেয়েকে দিস।  আর এই পঞ্চাশ টাকাটা নে।” টাকাটা কুলসুম ধরলো।

নরেন রোয়াকের সিঁড়িতে বসে বলল, “বউমা। কাল সরকারি লোক আসবে ও পাড়ায়। কাল চাল ডাল আলু দেবে নাকি শুনছি। ছেলেকে পাঠিও। আমারও থাকার কথা রয়েছে।”

কাকা, যা চাল আচে, এখন দিন পাঁচেক চলবে। বাড়িতে একটা টাকা নেই যে কিছু তরকারি বা কিচু কিনবো৷

নরেন বললো, “আচ্চা, তুমি এখন যাও আমি কথা বলবো।” নরেনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে জামিলা।

পরের দিন পিচগলা পাকা রাস্তার ধারেই ফাঁকা মাঠে মঞ্চ হয়েছে। সারি সারি চেয়ার পাতা মঞ্চে। খাঁ খাঁ রোদে প্রৌঢ, বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের ভিড়। সবার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ৷ রাস্তার এপাশে দূরে দাঁড়িয়ে জামিলা ও মণি। মণির চোখ ঠিকরে পড়ছে মঞ্চের দিকে। একে একে সবার নাম ডাকছে। চাল আলু মাস্ক ডাল দিচ্ছে, সবাই বলাবলি করছে। মণির প্রথম দিকে আনন্দ হলেও আনন্দ ম্লান হয়ে যেতে থাকে।

তবে… তবে কি আমাদের নাম নেই? মণি মাকে বলে।

জামিলা মণিকে বলে– চল বাবা, বাড়ি চল। বাড়ির দিকে যাবে এমন সময় মাইকে ঘোষণা হয়–কালু সেখ…কালু সেখের পরিবারের যদি কেউ থাকেন?

মঞ্চেই বসেছিল নরেন রায়। তিনি বলেন–হ্যাঁ, হ্যাঁ আসার কথা তো জামিলার।

মঞ্চের দিকে কিছুটা এগিয়ে যেতেই থমকে দাঁড়ায় জামিলা। স্থির দাঁড়িয়ে যায়৷ মুখে শাড়ির ঘোমটা নামিয়ে দেয়। জামিলার বুক ছ্যাঁত করে ওঠে। পাঁজরটা মোচড় দেয়। নরেন বাবু মঞ্চ থেকে বলেন–এসো মা এসো।

জামিলা, মণিকে মঞ্চে গিয়ে প্যাকেটটা আনতে বলে। ঘোমটা নামানোর আগেই সরকারি আধিকারিক জামিলাকে দেখে নেয়। তার মধ্যেও চোরাস্রোত বয়ে যায়। মণি মঞ্চ থেকে প্যাকেটটা নিয়ে এসে মায়ের সঙ্গে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়।

জামিলার মনে পড়ে সেদিনের কথা। স্কুল জীবনের সুখের সে দিন। এখন আসরাফ বড় অফিসার হয়েছে। গরীব মেয়ে হওয়ায় আসরাফের বাবা বিয়ে দিতে রাজী হয়নি জামেলার সঙ্গে। আর আসরাফও জামেলাকে বিয়ে করার সাহস দেখায়নি। উচ্চ মাধ্যমিকের পর জামেলার পড়াশোনাও এগোয়নি। আজ মনটা বড়ই বিষণ্ণ হয়ে উঠেছে জামেলার। সারা রাত ঘুমোতে পারল না সে। বড়ই অস্থির লাগছে। ফজরের আজান হল। টিউবয়েলের ধারে ওজুর পানি নিতে যাওয়ার সময় হঠাৎ পায়ে কিছুতে কামড়ে দিল তার। চেঁচিয়ে উঠলো জামেলা। পা যেন ভারী হয়ে আসছে। তাড়াতাড়ি পাশের বাড়ির সামসুল ভাইকে ডাক দিল সে। ছুটে এলো সামসুল, তার বউ নার্গিস, ছেলে নুরুল। জামিলা জানালো তাকে কিসে কামড় দিয়েছে।

নুরুল দ্রুত তার বাড়ি থেকে বাইকটা বের করলো৷ ততক্ষণে ঘাড় ভেঙে পড়ছে জামেলার। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। বাড়ির আশে পাশের আরও অনেক মানুষ ছুটে এলো। হাঁউমাঁউ করে জেগে উঠলো কুলসুম ও মণিরুল। জামেলার মুখ দিয়ে গাঁজলা বেরোতে বেরোতে উঠোনেই সংজ্ঞাহীন হয়ে গেল। গ্রামের কোয়াক ডাক্তার এসে জানিয়ে দিল, বিষধর সাপের কামড়ে মারা গেছে জামেলা। কুলসুম ও মণি মায়ের বুকের উপরে পড়ে আর্তনাদ করতে থাকলো। ‘আব্বু নেই। কি হবে আমাদের। কে দেখবে আমাদের। মা কথা বলো। মা.. আমি সিক্সে ওঠার পর বলেছিলে সামনের বছর সাইকেল কিনে দেবে? কুলসুমের মাথাটা বুকে টেনে নিয়ে মণি কাঁদতে কাঁদতে বললো আমার বুনুর আর আমার জন্য তুমি এত কষ্ট করতে মা। ও যেন দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পড়েছে৷ “মা…কথা বলো মা…।” কুলসুম, মণির কান্নায় পাড়াসুদ্ধ লোক কাঁদছে। নিস্তব্ধ মেরে গেছে আকাশ বাতাস। ফর্সা হয়ে সকাল হয়ে গেল৷ কেরলে ফোন গেল স্বামী কালু সেখের কাছে। কিন্তু লকডাউনে আসা হবে না তার। কালু ফোনের ওপারে কান্নায় ভেঙে পড়লো। ঘর থেকে একটা দা বের করে, ঘরের চালা থেকে নামানো  পিঁড়িতে পোঁতা বাঁশের খুঁটি কাঁদতে কাঁদতেই কোপাতে লাগলো মণি। অনেকেই আটকাতে গেলো তাকে। কেন সে খুঁটি কাটছে বুঝতে পারলো না কেউ। খুঁটির মাঝ বরাবর কাটা শেষ হতেই অনেক দশ, পাঁচ, দু’টাকার কয়েন ছড়িয়ে পড়লো। এত কষ্টের পরও  জামেলা ওই টাকা বের করেনি। টিফিনের পয়সা গুছিয়ে সাইকেল কেনার কথা ছিল মণির। মণি একটা একটা করে কয়েন জমিয়ে রাখতো খুঁটির ভিতর। খুঁটির গায়ে কিছুটা ছিদ্র করেই ব্যাঙ্ক ভাঁড় বানিয়ে ছিল মণি। সকলেই তখন তাজ্জব বনে গেছে। একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। সব পয়সা কুড়িয়ে সামসুলের হাতে তুলে দিয়ে, মণি কাঁদতে কাঁদতে বললো, “কাকা, এই পয়সা নাও। আমার জমানো পয়সা দিয়ে মায়ের জন্য কাফন কিনে আনবা!”

Website | + posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *